জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
সকাল সাড়ে ৬টা থেকে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা পার হয়ে গিয়েছে। এখনও প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী এবং তাঁর আপ্ত সহায়কের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। রেশন বণ্টন ‘দুর্নীতি’ মামলায় উঠে এসেছে বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম। বৃহস্পতিবার সাতসকালে মন্ত্রীর সল্টলেকের বাড়িতে হানা দিয়েছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর আধিকারিকেরা। ইডি সূত্রে খবর, রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় বাকিবুর রহমানের গ্রেফতারির পরেই নাম উঠে এসেছে জ্যোতিপ্রিয়ের। সল্টলেকের বিসি ব্লকে পাশাপাশি দু’টি বাড়িতে (বিসি ২৪৪ এবং বিসি ২৪৫) বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ইডি।
জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ির পাশাপাশি তাঁেের আপ্তসহায়ক অমিত দের নাগেরবাজারের ফ্ল্যাটেও পৌঁছে গিয়েছে ইডি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ সেখানে পৌঁছয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দল। নাগেরবাজারে দু’টি ফ্ল্যাটে গিয়েছে ইডি। একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ভগবতী পার্ক এলাকায় এবং দ্বিতীয় ফ্ল্যাটটি রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ রোডে। সূত্রে খবর, দু’টি ফ্ল্যাটেই পালা করে অমিত থাকেন। তবে দু’টি ফ্ল্যাটই তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে। সকাল থেকে এই প্রতিবেদন প্রথম প্রকাশের সময়ও ফ্ল্যাটের ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
সকাল থেকেই আটটি জায়গায় তল্লাশি অভিযানে নেমেছেন ইডির আধিকারিকেরা। মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুরের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়ের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা নিয়েই তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি।
রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে গত বুধবার সকাল থেকে বাকিবুরের কলকাতার কৈখালির ফ্ল্যাটে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছিল ইডি। বাকিবুরের ফ্ল্যাট থেকে ১০০-র বেশি সরকারি দফতরের সিলমোহর (স্ট্যাম্প) মিলেছে বলে ইডি সূত্রে খবর। খাদ্য সরবরাহ সংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ১০৯টি স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়েছে। সাড়ে ৫৩ ঘণ্টা তল্লাশির পর গত শুক্রবার বাকিবুরকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর ফ্ল্যাট থেকে বেরোয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তার পর আরও ১১ ঘণ্টা জেরার পর শনিবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। সোমবার বাকিবুরকে আদালতে পেশ করবে ইডি।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, বাকিবুরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-সহ যে নথিগুলি উদ্ধার হয়েছে, তা থেকে প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে বাকিবুরের বিভিন্ন সংস্থায় ৫০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ঢুকেছে। একাধিক হোটেল, রিসর্ট, পানশালা রয়েছে বাকিবুরের। তার পাশাপাশি রয়েছে বেশ কয়েকটি রাইস মিলও।
বাকিবুরের পাশাপাশি, তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুচরের বাড়িতেও তল্লাশি চালায় ইডি। বাকিবুরের ওই ঘনিষ্ঠের নাম অভিষেক বিশ্বাস। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্পর্কে বাকিবুরের শ্যালক হন অভিষেক। তাঁর বাড়ি চিনার পার্কে। সেখানে গিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা তল্লাশির পাশাপাশি, জিজ্ঞাসাবাদও করেন অভিষেককে। অভিষেক এবং বাকিবুরের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁরা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করেছিলেন বাকিবুরই। যা থেকে তদন্তকারী সংস্থাটি মনে করছে, পরিবারের সদস্যদের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার লেনদেন চালিয়েছিলেন বাকিবুর।
গত বুধবার ইডি গিয়েছিল নদিয়ার বিভিন্ন রেশন দোকান এবং দোকানের মালিকের বাড়িতে। একই দিনে সল্টলেক এবং নিউ টাউনের অনেকগুলি জায়গাতেও তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি।
জানা গিয়েছে, বাংলার বাইরে আরও তিনটি রাজ্যে বাকিবুরের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ রয়েছে। বছর তিনেক আগে খাদ্যবীজের দুর্নীতির সূত্রে প্রথম বাকিবুরের নাম প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই দুর্নীতিতে উদ্ধার হওয়া খাদ্যবীজের বস্তায় বাকিবুরের সংস্থার নাম ছিল বলে খবর। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, বাকিবুর বাম জমানা থেকেই রেশনের চাল, গম নিয়ে খোলা বাজারে কারবার করতেন। বামফ্রন্ট সরকারের এক মন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে দাবি অনেকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy