চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যকে ফের তলব করতে চলেছে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এই শিল্পীকে দু’-দু’বার ইডির দফতরে হাজিরা দিতে হয়েছে। যেতে হয়েছে সিবিআইয়ের দফতরেও। তার পরেও শিল্পীর বয়ান এবং তাঁর পাঠানো নথিপত্রের মধ্যে অসঙ্গতি থেকে যাচ্ছে বলে ইডি সূত্রের খবর। তাই খুব শীঘ্রই প্রবীণ এই শিল্পীকে তারা ফের ডাকবে বলে জানা গিয়েছে।
এ বছরের মার্চ মাসে শুভাপ্রসন্নকে এক বার ডেকেছিল ইডি। তার পরে কয়েক মাস চুপচাপ থাকার পরে এই সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে তারা একাধিক বার ডেকে পাঠিয়েছে শিল্পীকে। কথা বলেছে শিল্পীর স্ত্রী শিপ্রা ভট্টাচার্যের সঙ্গেও। একাধিক বার চেয়ে পাঠিয়েছে নথিপত্র। পাশাপাশি সিবিআইও প্রথমে নথি চেয়ে পরে শিল্পীকে সশরীরে তলব করেছে। এখন ইডি আবার তাঁকে ডাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে কেন এত বার ডাকতে হচ্ছে শুভাপ্রসন্নকে?
ইডি-র তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন সারদাকে বিক্রি করা শুভাপ্রসন্নর সংস্থা দেবকৃপা ব্যাপার লিমিটেড, চালু না হওয়া চ্যানেল ‘এখন সময়’, মুম্বইয়ে শুভার ফ্ল্যাটের ঠিকানা, রাজারহাটের আর্টস একর প্রায় সব কিছু নিয়েই তথ্যে নানা অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবারই শুভা নতুন কিছু নথিপত্র ইডি-র কাছে
পাঠিয়েছিলেন। ওই দিনই আবার ‘এখন সময়’-এর দফতরে গিয়ে তল্লাশি চালিয়েও কিছু কাগজ ও নথিপত্র তদন্তকারীরা উদ্ধার করেছেন। সেগুলি হাতে নিয়ে তদন্তকারীরা শুভাপ্রসন্নর কাছে ফের কিছু প্রশ্নের ব্যাখ্যা চাইবেন। এ নিয়ে এ দিন শুভাপ্রসন্নবাবুর প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হয়। সাড়া মেলেনি।
ইডি সূত্রে আগেই জানা গিয়েছে যে, ২০০৬-এ দেবকৃপা ব্যাপার লিমিটেড সংস্থাটি হয়। সংস্থা চালু হওয়ার কিছু দিন পরে তার ডিরেক্টর পদে যোগ দেন শুভাপ্রসন্ন ও তাঁর স্ত্রী শিপ্রাদেবী। এই সংস্থাই ২০১০-১১ সাল থেকে ‘এখন সময়’ নামের একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেল তৈরির কাজ শুরু করে। কিন্তু সেই চ্যানেল চালু হয়নি। পরে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন চ্যানেল-সমেত গোটা দেবকৃপাই কিনে নেন।
এখন তদন্তে নেমে ইডি এবং সিবিআই দেবকৃপা আর ‘এখন সময়’ নিয়ে বিস্তর ধাঁধাঁর সম্মুখীন হচ্ছে। শুভাপ্রসন্ন দেবকৃপায় যুক্ত হওয়ার আগে থেকেই কেন তাঁর বাড়ির ঠিকানা সংস্থায় ব্যবহৃত হয়েছে, শুভাপ্রসন্ন সংস্থা বিক্রি করে দেওয়ার পরেও কেন তাঁর নাম থেকে গিয়েছে, সর্বোপরি সংস্থার কাজকর্ম এবং বিক্রিবাটায় ঠিক কত টাকা কোন খাতে গিয়েছিল এ সব নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে।
যেমন দেবকৃপার আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য থেকে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ২০০৬-০৭ সাল থেকে ২০০৮-০৯ সাল পর্যন্ত সংস্থার শেয়ার কেনার জন্য যাঁরা আবেদন করেন, তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া কয়েক কোটি টাকার হিসেব দেখানো হয়েছে। কিন্তু কারা সেই টাকা দিয়েছিলেন, সেই তথ্যের অনেকটাই এখনও ইডি-র হাতে আসেনি।
সুপ্রিম কোর্টে সারদা মামলার অন্যতম আবেদনকারী অমিতাভ মজুমদার অভিযোগ করছেন, অন্য একটি চিটফান্ড সংস্থার হিসেবপত্রেও দেখানো ছিল, শেয়ার কেনার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ২০০ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে সেই সব ব্যক্তির অস্তিত্ব ছিল কি না, সেটাই পরে মূল প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রেও তেমন কোনও রহস্য রয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার বলে দাবি তুলছেন অমিতাভবাবু। ঠিক এই খটকাটাই ইডি-র মাথাতেও রয়েছে। এ ছাড়া নিউটাউন-ভাঙর এলাকায় শিল্প কর্মশালা আর্টস একর সম্পর্কেও পুরো তথ্য হাতে পাননি তদন্তকারীরা। ওই কর্মশালার ব্যাপারে শুভাপ্রসন্ন সহযোগিতা করছেন না বলে ইডি-র অভিযোগ।
তা ছাড়া দেবকৃপা কত টাকায় বিক্রি হয়েছে, তার জটও খোলেনি। রাজ্য পুলিশের সিট বলছে, ১৪ কোটি। সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের দাবি, তিনি ১৬ কোটি টাকা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকেও তার সমর্থন মিলেছে। কিন্তু শুভাপ্রসন্নের দাবি, দেবকৃপা সাড়ে ছ’কোটিতে বিক্রি হয়েছে। তা হলে বাকি টাকা কোথায় গেল? শুভাপ্রসন্ন যে তথ্য দিয়েছেন, তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ধোঁয়াশা বেড়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।
ইডি সূত্রের খবর, একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে কয়েক কোটি টাকায় ‘এখন সময়’ চ্যানেলের সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল। চ্যানেল হস্তান্তরের সময়ে সেই সরঞ্জাম বাবদ কয়েক কোটি টাকা এবং সংস্থার অংশীদারদের টাকা সারদার গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মেটানো হয়। সেই টাকাই বা কোথায় গেল? প্রশ্ন ইডি-র। এমন নানা প্রশ্ন এবং অসঙ্গতি নিয়ে রীতিমতো একটি তালিকা তৈরি করেছেন তদন্তকারীরা। সেই তালিকা ধরে ধরে এ বার শুভাপ্রসন্নকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তাঁরা। আর সেই জন্যই শুভাপ্রসন্নকে আবারও তলব করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy