Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Kuwait Fire Incident

সাধের বাড়ি দেখা হল না দ্বারিকেশের

কুয়েতে বহুতলে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছে দ্বারিকেশের। বুধবার ভোরে কুয়েতের রাজধানী শহরের দক্ষিণে মানগাফ এলাকার ওই বহুতল আবাসনে অগ্নিকাণ্ডে মৃত ৪৫ জন ভারতীয়ের দেহ এ দিন ফিরিয়ে আনা হয়েছে দেশে।

মেদিনীপুর শহরে দ্বারিকেশ পট্টনায়কের বাড়ি।

মেদিনীপুর শহরে দ্বারিকেশ পট্টনায়কের বাড়ি। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর ও দাঁতন শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪ ০৭:৫৭
Share: Save:

বড় সাধ ছিল, নিজের একটা বাড়ির। মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লিতে স্বপ্নের সেই বাড়ি তৈরিও করছিলেন। গত বছর এপ্রিলে যখন শেষ বার দ্বারিকেশ পট্টনায়ক বাড়ি এসেছিলেন, তখনও বাড়ি অসম্পূর্ণ। তবে এখন বাড়ি তৈরি। কথা ছিল পুজোর সময় দেশে ফিরে সেই বাড়ি দেখবেন বাড়ির মালিক। তা আর হল না!

কুয়েতে বহুতলে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছে দ্বারিকেশের। বুধবার ভোরে কুয়েতের রাজধানী শহরের দক্ষিণে মানগাফ এলাকার ওই বহুতল আবাসনে অগ্নিকাণ্ডে মৃত ৪৫ জন ভারতীয়ের দেহ এ দিন ফিরিয়ে আনা হয়েছে দেশে। বায়ুসেনার বিমানে কেরলের কোচিতে পৌঁছেছে দেহগুলি। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কেরল থেকে শুক্রবার রাতে মেদিনীপুর হয়ে দাঁতনের তুরকাগড়ে পৌঁছতে পারে দ্বারিকেশের দেহ। পট্টনায়কের পরিবার সূত্রে খবর, সেই জন্মগ্রামেই তাঁর শেষকৃত্য হবে।

দাঁতন ২ ব্লকের খণ্ডরুইয়ের তুরকাগড়ের আদি বাড়ি দ্বারিকেশদের। তাঁরা চার ভাই। সাবড়া রামকৃষ্ণ বিদ্যাভবন থেকে মাধ্যমিক পাশের পরে মাত্র আঠারো বছর বয়সেই মুম্বইয়ের একটি সংস্থায় ‘ফিটারে’র কাজে যোগ দেন দ্বারিকেশ। সেখানে কয়েক বছর কাটিয়ে চলে যান ওমানে। সেখানে ছ’মাস কাটিয়ে, ১৯৯৭ সালে কুয়েতে যান দ্বারিকেশ। তার পরে দীর্ঘ ২৭টা বছর কুয়েতেই ছিলেন তিনি। সেখানে এনবিটিসি কোম্পানিতে মেকানিক্যাল সুপারভাইজ়ার (ওয়ার্কশপ) পদে কর্মরত ছিলেন দ্বারিকেশ। বছরে এক বার বাড়ি আসতেন দ্বারিকেশ, সাধারণত এপ্রিলে। তবে এ বার আসেননি। ইচ্ছে ছিল, দুর্গাপুজোর সময় আসবেন। কারণ, তখনই তাঁর একমাত্র মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ঐশীর জন্মদিন। ইচ্ছে ছিল, মেয়ের ১৮ বছরের জন্মদিনটা জমকালো ভাবে পালন করার। সেই ইচ্ছেও রয়ে গেল অপূর্ণ।

কুয়েত থেকে রোজ সকালে কাজে বেরোনোর আগে স্ত্রীকে ফোন করতেন দ্বারিকেশ। কিন্তু গত বুধবার সকালে সেই ফোন আসেনি। দ্বারিকেশের শ্যালক সায়ন্তন বললেন, ‘‘বুধবার জামাইবাবু ফোন করেননি। পরে দিদিই ফোন করে। কিন্তু ফোনটা বেজে যায়। দুপুরেও ফোন বেজে গিয়েছে। কেউ ধরেননি।’’ পরে এক সহকর্মীর কাছে অগ্নিকাণ্ডের খবর পান তাঁরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে যে সংস্থায় দ্বারিকেশ কর্মরত ছিলেন, সেখান থেকে ফোনে দ্বারিকেশের মৃত্যুসংবাদ জানানো হয়।

মেদিনীপুরে এলে গ্রামের বাড়িতেও যেতেন দ্বারিকেশ। ক’টা দিন সেখানে কাটাতেন। অংশ নিতেন গ্রামের নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে। স্থানীয় ক্লাবের সদস্য সন্দীপ মাইতি বলেন, ‘‘খুব ভাল মানুষ ছিলেন। সকলের সঙ্গে মিশতেন।’’

সেই জন্মগ্রামে এখন দেহ আসার অপেক্ষা। দাঁতন ২-র বিডিও অভিরূপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ এ দিন মেদিনীপুরে এসে দ্বারিকেশের পরিজনের সঙ্গে দেখা করেছেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল। মৃতের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরাও বলেন, ‘‘আমরা ওঁর পরিবারের পাশে রয়েছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy