আরজি কর-কাণ্ডের আবহে বিশেষ স্কলারশিপ চালু করছে নরেন্দ্রপুরের একটি পুজো কমিটি। আবাসনের কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ওই স্কলারশিপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। নাম দেওয়া হয়েছে ‘অভয়া স্কলারশিপ’। আরজি করে নির্যাতিতা চিকিৎসককে মনে রাখতেই এই উদ্যোগ, জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
নরেন্দ্রপুরের কৃষ্টি-সুগমপার্ক পুজো কমিটির উদ্যোগে দুর্গাপুজো এ বছর ১৯ বছরে পা দিয়েছে। তাদের আবাসনে প্রায় ৫০০ পরিবারের বাস। প্রতি বছর চাঁদা তুলে পুজোর আয়োজন করা হয়। গত কয়েক বছর নিয়ম মেনে সরকারি অনুদানও নিয়েছেন। কিন্তু আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ বছর তাঁরা সেই ‘দুর্গার ভান্ডার’ও প্রত্যাখ্যান করেন। পুজোর অনুদান বাবদ রাজ্য সরকারের দেওয়া ৮৫ হাজার টাকা নেয়নি নরেন্দ্রপুরের এই পুজো কমিটি। এ প্রসঙ্গে কৃষ্টি-সুগমপার্ক পুজো কমিটির প্রেসিডেন্ট গোপা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রতি বছর সরকারের নিয়ম মেনেই আমরা পুজো করি। এ বছরও সমস্ত নিয়ম মানা হয়েছে। শুধু অনুদানটুকু প্রত্যাখ্যান করেছি। আবাসনের বাসিন্দাদের মতামত নিয়ে সর্বসম্মত ভাবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

নরেন্দ্রপুরের কৃষ্টি-সুগমপার্ক আবাসনের কর্মচারীরা। —নিজস্ব চিত্র।
স্কলারশিপ হিসাবে বার্ষিক ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে পুজো কমিটির তরফে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের আবাসনে নিরাপত্তারক্ষী, জিম প্রশিক্ষক-সহ যে কর্মীরা রয়েছেন, তাঁদের সন্তানদের জন্য ‘অভয়া স্কলারশিপ’ চালু করা হচ্ছে। প্রতি বছর যে কৃতী ছাত্রছাত্রীরা দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় সর্বাধিক নম্বর পাবে, তাদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এ ভাবেই আরজি করের নির্যাতিতার স্মরণে স্কলারশিপ চালিয়ে যেতে চান উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল আচার্য বলেন, ‘‘আমাদের হাউসিংয়ে ৪৭ জন কর্মচারী রয়েছেন। তাঁদের সন্তানেরা কেউ দশম বা দ্বাদশের পরীক্ষায় পাশ করলে প্রতি বছর সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ বছর থেকে আমরা ঠিক করেছি, দশম এবং দ্বাদশের যারা সর্বধিক নম্বর পাবে, তাদের স্কলারশিপ দেওয়া হবে। কোনও ভাবেই যাতে তাদের কখনও পড়াশোনা ছেড়ে দিতে না হয়। আমাদের সন্তানেরা যে প্ল্যাটফর্মে পুরস্কার পাচ্ছে, আমাদের কর্মচারীদের সন্তানেরাও সেই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। আমরা সকলেই সমানাধিকারের কথা বলি। এ ক্ষেত্রে নিজের ঘর থেকেই আমরা সেটা শুরু করছি। আরজি করে যে মেয়েটি অসময়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেল, তাঁকে যদি কোনও ভাবে মনে রাখা যায়, সে কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত।’’
আরও পড়ুন:
কৃষ্টি-সুগমপার্ক পুজো কমিটির আবাসনে বুধবার ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় স্কলারশিপ দেওয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ভাষাবিদ পবিত্র সরকার সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কৃতী ছাত্রদের হাতে স্কলারশিপের চেক তুলে দিয়েছেন তিনি।

দীপ মল্লিকের হাতে স্কলারশিপের চেক তুলে দিচ্ছেন পবিত্র সরকার। —নিজস্ব চিত্র।

শুভঙ্কর দাসের হাতে স্কলারশিপের চেক তুলে দিচ্ছেন পবিত্র সরকার। —নিজস্ব চিত্র।
উল্লেখ্য, আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে বিচার চেয়ে এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে গত দু’মাস ধরে আন্দোলন করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শনিবার রাত থেকে তাঁরা আমরণ অনশন চালাচ্ছেন। প্রথমে ছ’জন অনশন শুরু করেছিলেন। তার পর আরও এক জুনিয়র ডাক্তার অনশনে যোগ দেন। বুধবার ওই সাত জনের অনশন পঞ্চম দিনে পড়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও ডাক্তারদের আমরণ অনশন চলছে। এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে প্রতীকী অনশনে যোগ দিয়েছেন সিনিয়র ডাক্তারেরাও। আরজি কর-সহ একাধিক হাসপাতালে সিনিয়রেরা ‘গণইস্তফা’ দিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফে সাড়া মেলেনি। এই ঘটনার প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক পুজো কমিটি পুজোর অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে নির্যাতিতার স্মরণে তাঁর নামে স্কলারশিপ চালু করার উদ্যোগ অভিনব। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।