ক্ষোভ বেড়েছে পুজো-দর্শনার্থীদের মনে। প্রতীকী ছবি।
বৃষ্টির মধ্যেও বেশ কিছু বড় বাজেটের পুজোয় ভিড় উপচে পড়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা সদর বহরমপুরে। শহরের একাধিক বড় পুজো মণ্ডপে প্রবেশের ছাড়পত্র মিলছে ২০ থেকে ৫০ টাকা দিয়ে। যা অনুদান হিসেবে নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি পুজো কমিটিগুলির। বেশ কয়েক বছর আগে হাতে গোনা কয়েকটি পুজো কমিটি কুপনের বিনিময়ে প্রতিমা দর্শনের ছাড়পত্র দিত। মাঝখানে দু’বছর করোনার কারণে বন্ধ ছিল। কিন্তু এ বছর এক রকম গণহারে তা চালু হওয়ায় ক্ষোভ বেড়েছে পুজো-দর্শনার্থীদের মনে। যা নিয়ে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়াও।
বহরমপুরের এক বাসিন্দা লিখেছেন ‘‘ইচ্ছাকৃত ভিড় তৈরি করে ভিআইপি টিকিট কেটে প্রতিমা অথবা মণ্ডপ দেখার ব্যবস্থা বন্ধ হোক।’’ সমাজ মাধ্যমে আর এক বাসিন্দার বক্তব্য, ‘‘পাড়ার চাঁদা, সরকারি অনুদান ছাড়াও বড় বড় কোম্পানির বিজ্ঞাপন ঝুলছে চারদিকে! তবুও পেট ভরছে না।’’ পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা ছিল না। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি কেন কুপনের বিনিময়ে মণ্ডপে প্রবেশের ছাড়পত্র পাওয়া যাচ্ছে।’’চলতি বছর রাজ্য সরকার ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে বহু পুজো কমিটিকে। বহরমপুর পুরসভার পক্ষ থেকে পুর এলাকার পুজো কমিটিকে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেন কুপনের বিনিময়ে পুজো দেখতে হবে দর্শনার্থীদের? যদিও পুজোর খরচ সামলাতে এই পথে হাঁটতে হয়েছে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। কিন্তু তার জন্য সরকারি কোনও স্তরে কোনও অনুমতি নেয়নি পুজো কমিটিগুলি।বহরমপুর চুনাখালি সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির সম্পাদক কাঞ্চন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা কোনও পাস দিইনি। ২৫ টাকা লটারির টিকিট কাটতে বলা হয়েছে। সেই টিকিট দেখালে আলাদা রাস্তা দিয়ে তাঁদের ঠাকুর দেখানো হচ্ছে। পাঁচ হাজার এই টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এখান থেকে যে আয় হবে, তা আমাদের পুজোর স্থায়ী মন্দির নির্মাণে খরচ করা হবে।’’
পঞ্চায়েত এলাকার জন্য পুরসভার অনুদান অবশ্য পায়নি চুনাখালি। বিষ্ণুপুর আমরা ক’জন ক্লাবের পক্ষে প্রভাত কর্মকার বলেন, ‘‘অনুদানের টাকায় এত বড় পুজো করা যায় না। এ বার পুজোর বাজেট ২০-২২ লক্ষ টাকা। চাঁদাও তেমন ওঠে না। তাই খরচ সামলাতে কুপন সিস্টেম করতে হয়েছে।’’ বহরমপুর পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ভীষ্মদেব কর্মকার পুরাতন কান্দি বাসস্ট্যান্ড পুজো কমিটির এক জন কর্মকর্তা। সেই পুজোর প্রতিমাও দেখতে হচ্ছে কুপন কেটে। ভীষ্মদেব যদিও বলেন, ‘‘ভিড় সামলাতে এই পথে হাঁটতে হয়েছে। তবে সবার কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে না। যাঁরা তাড়াহুড়ো করছেন, তাঁদের জন্য কুপনের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।’’ লোয়ার কাদাই বিটি কলেজ বটতলা ভট্টাচার্য পাড়া পুজো কমিটির দু’মিনিটের লেজার শো এক সঙ্গে দেড়শো থেকে দু’শো লোক দেখতে পাচ্ছেন। সেই শো দেখতে ৫০ টাকা করে টিকিট কাটতে হচ্ছে। পুজো কমিটির সম্পাদক সুজয় সরকার বলেন, ‘‘পুজোর খরচ সামাল দিতে এই টিকিটের ব্যবস্থা করতে হয়েছে।’’
উল্লেখ্য, অনুদান ছাড়াও এই পুজো কমিটি এবং চুনাখালি সেরা পুজোর তকমা পাওয়ায় পুরস্কার বাবদ ৫০ হাজার টাকা করে পেয়েছে। কুপন কেটে প্রতিমা দর্শন করানোতে বাদ নেই শহর কংগ্রেস সভাপতি অরিন্দম দাস ওরফে পাপুর পুজোও। হরিবাবুর ঢালু পুজো কমিটির পক্ষে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘পুজোর খরচ সামলাতে সপ্তমী থেকে দর্শক পিছু ২০ টাকা করে কুপন চালু করেছি অন্য পুজো কমিটিকে দেখে।’’
বহরমপুর পুরসভার পুরপ্রধান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাজেট বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে খরচ বেড়েছে। অনেকে চাঁদা দিতে চান না। তাই অতিরিক্ত টাকার প্রয়োজন আছে মানলাম। কিন্তু মানুষের জন্য পুজোতে মানুষই এই ভাবে অনুদান দেওয়ায় বিরক্ত হলে পুজো কমিটিগুলোকে এই রাস্তা বদলাতে হবে।’’জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘‘পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে কথা বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy