Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
TMC-BJP Conflicts

প্রকল্পের নাম নিয়ে লড়াই কেন্দ্র-রাজ্যের, বঞ্চিত প্রসূতিরা 

সদ্য মা হওয়া মহিলা ও তাঁর শিশুর অপুষ্টি নিবারণে ২০১৭ সালে কেন্দ্র চালু করেছিল ‘প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা যোজনা।’ এই প্রকল্পে প্রথম বার মা হলে প্রসূতি পাবেন পাঁচ হাজার টাকা।

An image of flags

—প্রতীকী চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৪
Share: Save:

অল্পস্বল্প টাকা নয়, সদ্য প্রসূতিদের এককালীন মাথাপিছু পাঁচ-ছ’হাজার করে টাকা দেওয়ার এক সরকারি প্রকল্প। অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের টানাপড়েনে বড় অঙ্কের সেই প্রাপ্য টাকা হারাচ্ছেন রাজ্যের কয়েক
লক্ষ মহিলা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে তা নিয়ে চলছে লড়াই। কিন্তু মেলেনি সুরাহা।

সদ্য মা হওয়া মহিলা ও তাঁর শিশুর অপুষ্টি নিবারণে ২০১৭ সালে কেন্দ্র চালু করেছিল ‘প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা যোজনা।’ এই প্রকল্পে প্রথম বার মা হলে প্রসূতি পাবেন পাঁচ হাজার টাকা। দ্বিতীয় বার মা হওয়ার ক্ষেত্রে কন্যাসন্তান হলে মা পাবেন ছ’হাজার টাকা। কিন্তু কেন্দ্রের আরও একাধিক প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পের নাম থেকেও ‘প্রধানমন্ত্রী’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গে। নাম বদলে রাখা হয় ‘বাংলা মাতৃ প্রকল্প’।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রথম কয়েক বছর কেন্দ্র হুঁশিয়ারি দিয়েছে। নাম বদল করতে বলেছে। কিন্তু তা করা হয়নি। ২০২২ সালে কেন্দ্র এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের টাকা বন্ধ করে দেয়। প্রায় চার লক্ষ মায়ের টাকা আটকে যায়। তখন রাজ্য প্রকল্পের নাম বদলের আশ্বাস দেয় এবং ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে কেন্দ্র ১৬০ কোটির মতো টাকা ছাড়ে। তা দিয়ে কিছু মাকে টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু ফের নাম বদলে রাজ্য গড়িমসি করছে, এই অভিযোগে ২০২৩ সালের মে মাস থেকে কেন্দ্র এই প্রকল্পে রাজ্যকে টাকা দেওয়া বন্ধ করেছে।

প্রায় তিন-চার মাস হল, কার্যত নাকখত দিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ফের প্রকল্পের নাম বদলে
‘প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা যোজনা’ করেছে। নতুন মায়েদের নাম অনলাইনে নথিভুক্ত করার কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। টাকা আসেনি। এতে এক বিচিত্র জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রথমত, প্রকল্পের রাজ্যের দেওয়া নামে যে সব মায়েদের নাম নথিভুক্ত ছিল, তাঁরা আর কোনও দিন টাকা পাবেন কি না, কেউ জানে না। এমন প্রায় আড়াই লক্ষ মায়ের কমপক্ষে ৮০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রের কথা মতো নাম বদল করার পরে গত দু’-তিন মাসে যে সব মায়ের নাম নথিভুক্ত হয়েছে, তাঁদের এক জনও এখনও পর্যন্ত টাকা পাননি। প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী, মায়েদের নাম নথিভুক্ত হওয়ার পরে ৪৭০ দিন পেরিয়ে গেলে আর টাকা পাওয়া যাবে না। অনেক জেলা আবার পরিবর্তিত নামের প্রকল্পে মায়েদের নাম অনলাইনে নথিভুক্ত
করার কাজ ঠিক মতো শুরুই করতে পারেনি।

জেলায় জেলায় আশাকর্মীরাও অভিযোগ করেছেন, মায়েরা এই প্রকল্পের টাকা পাচ্ছেন
না বলে গ্রামেগঞ্জে মানুষের হাতে তাঁদের হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। কারণ, অনেকেই মনে করছেন, নাম যেহেতু আশাকর্মীরা সংগ্রহ করেছেন, তাই তাঁরাই ওই টাকা হস্তগত করেছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের আধিকারিক অসীম দাস মালাকার এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘কেন্দ্রের সঙ্গে কথা চলছে। এর বেশি কিছু বলব না।’’

কলকাতার পরিস্থিতি আরও বিচিত্র। এখানে রাজ্যের সেরা মেডিক্যাল কলেজগুলি রয়েছে। সেখানে প্রতি মাসে প্রচুর মহিলা সন্তানের জন্ম দেন। অথচ আর জি কর, কলকাতা মেডিক্যাল, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল, ন্যাশনাল মেডিক্যালের মতো কোনও হাসপাতালেই কখনও মায়েদের নাম এই প্রকল্পে নথিভুক্ত করা হয়নি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরা জানিয়েছেন। কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত রায়চৌধুরী জানান, যে সব মায়েরা পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেখাতে এসেছিলেন, তাঁদের নাম ‘প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা যোজনা’-য় তোলা হয়েছে। কিন্তু সেই সংখ্যা খুব কম। ২০২০-’২২ সালে ২৭৮ জনের নাম, ২০২২-’২৩ সালে ১০৯৯ জনের নাম এবং ২০২৩-এর নভেম্বর পর্যন্ত ১৮৯ জন মায়ের নাম তোলা হয়েছে। অথচ তাঁরা টাকা পেয়েছেন কি না, পুরসভার জানা নেই।

সব দেখেশুনে বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, লক্ষ্মীর ভান্ডারের ৫০০ টাকা নিয়ে রাজ্যের এত প্রচার, অথচ তারাই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম পাল্টানোয় কয়েক লক্ষ মহিলা বঞ্চিত হচ্ছেন। সন্তানের জন্মের পরে পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছেন না তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC-BJP Conflicts TMC BJP Pregnant Women Motherhood Central Government schemes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy