রাত তখন সাড়ে ১২টা। রাতের খাওয়া সেরে বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলাম। পাড়ার মোড়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারছিলাম। হঠাৎ শুনি ‘আগুন, আগুন’ চিৎকার। তখনই মায়ের ফোন পেয়ে বাড়ির দিকে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি, তেতলা থেকে গল গল করে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। সঙ্গে আগুনের লেলিহান শিখা। আগুন যেন চারপাশ গ্রাস করে নিয়েছিল। কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সবার আগে ১০০ ডায়ালে ফোন করি। আগুনের খবর জানানোর কিছু ক্ষণের মধ্যেই দমকলের দু’টি গাড়ি আসে। পর পর আরও গাড়ি ঢুকতে থাকে। তেতলায় কাপড়ের গুদাম ছিল। সেই গুদামে থাকা তিন জন কর্মী বেরোতে পেরেছিলেন। কিন্তু চারতলার দু’জন পুরোহিত তখন ঘুমোচ্ছিলেন। ওঁরা রাত ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তেন। আগুন তেতলা থেকে চারতলার দিকে ছড়াতে থাকে। ভোরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরে আমি চারতলায় উঠেছিলাম। এক জনের হাত কেটে রক্ত বেরোচ্ছিল। বুঝতে পারছিলাম, আগুন থেকে বাঁচতে ওঁরা প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। কাচের জানলা ভাঙা ছিল। মানে যাঁর হাত কাটা ছিল, তিনি হয়তো জানলা ভেঙে বেরোতে চেষ্টা করেছিলেন।
আগুন লাগার সময়ে কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, উপরে কেউ আছেন কিনা। উনি জানিয়েছিলেন, গুদামের তিন জন বেরিয়ে এসেছেন। কিন্তু চারতলায় যে দু’জন আটকে রয়েছেন, প্রথমে খেয়াল করেননি কেউ। জানলে আমি নিজে উপরে ওঠার চেষ্টা করতাম। আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পরে যখন
দমকলকর্মীদের সঙ্গে চারতলায় উঠি, তত ক্ষণে সব শেষ। ঝলসে গিয়েছিলেন ওই দু’জন। পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্স এসে দু’জনকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে
নিয়ে যায়। ওখানেই তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। আগুন উপরের দিকে ছড়িয়েছিল, তাই একতলায় আমাদের ঘর কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আগুন ভোরের দিকে লাগলে বিপদ হয়তো আরও বাড়ত। কারণ সাড়ে ১২টা নাগাদ
আমরা অনেকেই জেগেছিলাম। আগুনের খবর দ্রুত দমকলকে জানানো সম্ভব হয়েছিল। দমকল সময়ে এসে আগুন নেভানোর কাজও শুরু করেছিল। খুব কষ্ট হচ্ছে যে, দু’জনকে বাঁচানো গেল না। ছাদের দরজায় তালা ঝোলানো ছিল। ছাদে পৌঁছতে পারলেও হয়তো ওঁরা বেঁচে যেতেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)