Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
West Bengal Weather Update

কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি, উদ্বৃত্ত উত্তরে, ‘অদ্ভুত’ পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিল হাওয়া অফিস

হাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত দক্ষিণের জেলাগুলিতে বৃষ্টির ঘাটতির পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে ৭২ শতাংশ। সব থেকে বেশি ঘাটতি কলকাতায়। উত্তরের পাঁচ জেলায় উদ্বৃত্ত হয়েছে বৃষ্টি।

দক্ষিণের সব জেলায় জুন মাসে বৃষ্টির ঘাটতি।

দক্ষিণের সব জেলায় জুন মাসে বৃষ্টির ঘাটতি। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ২১:২৯
Share: Save:

দীর্ঘ অপেক্ষার পর দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ জেলায় বর্ষা প্রবেশ করেছে। কিন্তু কলকাতা-সহ সে সব জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়নি আলিপুর আবহাওয়া দফতর। বর্ষা এলেও বৃষ্টি অধরাই। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, দুর্বল মৌসুমি বায়ু এবং দেরিতে বর্ষা আসার ফলে ১ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টির ঘাটতির পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে ৭২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি কলকাতায়। অন্য দিকে, উত্তরের পাঁচ জেলায় উদ্বৃত্ত হয়েছে বৃষ্টি। কোচবিহারে ১৫৯ শতাংশ উদ্বৃত্ত বৃষ্টি হয়েছে।

দক্ষিণবঙ্গে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১১ দিন পর প্রবেশ করেছে বর্ষা। তা-ও সব জেলায় এখনও প্রবেশ করেনি বর্ষা। যেখানে বর্ষা প্রবেশ করেছে, সেখানেও ছিটেফোঁটাই হচ্ছে বর্ষণ। তাতেই তৈরি হচ্ছে ঘাটতি। হাওয়া অফিস ১ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত রাজ্যে বৃষ্টিপাতের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত কলকাতায় বৃষ্টির ঘাটতি ৮৬.৬ শতাংশ। এই সময়সীমার মধ্যে কলকাতায় স্বাভাবিক ভাবে ২১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে বৃষ্টি হয়েছে ৩০.৯ মিলিমিটার। ২৩ জুন পর্যন্ত কলকাতায় বৃষ্টির ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৪ শতাংশ। আবহাওয়া দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘন্টায় কলকাতায় যা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি না হলে এই ঘাটতি মেটার সম্ভাবনা নেই।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

মুর্শিদাবাদে এই সময়কালে বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল ১৫৬.৮ মিলিমিটার। কিন্তু হয়েছে ২৫.৬ মিলিমিটার। সেখানে ঘাটতির হার ৮৪ শতাংশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এই সময়সীমার মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল ২২৫.৮ মিলিমিটার। কিন্তু ১ জুন থেকে এই জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ৬৩.৮ মিলিমিটার। ঘাটতির হার ৭২ শতাংশ। উত্তর ২৪ পরগনায় ১৮৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে ৩৯.২মিলিমিটার। ঘাটতির হার ৭৯ শতাংশ। বৃষ্টির ঘাটতি পূর্ব বর্ধমানে ৭৯ শতাংশ, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭৮ শতাংশ, মালদহে ৭৭ শতাংশ, হুগলিতে ৭৭ শতাংশ, নদিয়ায় ৭৫ শতাংশ। বৃষ্টির এই ঘাটতির কারণে আষাঢ় মাসেও হাঁসফাঁস গরম দক্ষিণবঙ্গে। আর্দ্রতার কারণে অস্বস্তিও যথেষ্ট। ছিটেফোঁটা বৃষ্টির পর সেই অস্বস্তি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা হাবিবুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ‘‘কলকাতায় জুন মাসের প্রথম দিকে বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে স্থানীয় ভাবে বৃষ্টি এবং পরে মৌসুমি বায়ুর আগমনের ফলে বর্ষার বৃষ্টি হয়। কিন্তু চলতি বছরে বর্ষা দেরিতে এসেছে। সেই কারণে বৃষ্টি কম হয়েছে। তার উপর মৌসুমি বায়ু দুর্বল থাকায় ভারী বৃষ্টিপাতও হয়নি। ফলে কলকাতায় ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই অবস্থা কলকাতা সংলগ্ন জেলা হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনাতে।’’ তিনি জানিয়েছে, এই সময় বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বৃষ্টি হলে তা হয় মূলত স্থানীয় ভাবে। কখনও দেখা যায় বেহালায় বৃষ্টি হলেও ধর্মতলায় রোদ। এর ফলে অল্প পরিধির মধ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণেও ফারাক দেখা যায়। একই কারণে ঝাড়গ্রামে মৌসুমি বায়ু এখনও প্রবেশ না করলেও রবিবার সেখানে কলকাতার থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

দক্ষিণবঙ্গে যখন বর্ষার ঘাটতি, তখন উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ জেলায় উদ্বৃত্ত বৃষ্টি হয়েছে। ৩১ মে বর্ষা এসেছে উত্তরে। তার পর থেকে কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টি চলছেই। সব থেকে বেশি উদ্বৃত্ত বৃষ্টি হয়েছে কোচবিহারে। সেখানে ১৫৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ১ থেকে ২৪ জুন সেখানে ১১৫১.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ওই সময়সীমায় আলিপুরদুয়ারে ১১০৬.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ৯৪ শতাংশ বেশি। তবে উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহে বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে যথেষ্ট। মালদহে ১ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ঘাটতির হার ৭৭ শতাংশ। উত্তর দিনাজপুরে ৪৭ শতাংশ, দক্ষিণ দিনাজপুরে ১০ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Weather Update Monsoon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE