আজহারউদ্দিন খান এবং রতন রায় (বাঁ দিক থেকে) —নিজস্ব চিত্র।
আপৎকালীন পরিস্থিতিতে দু’জনের মাথাই অদ্ভুত ভাবে শান্ত থাকে। লক্ষ্যে স্থির থাকেন দু’জনেই। বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ‘শত্রু দমনে’ এগিয়ে যেতে দু’বার ভাবেন না তাঁরা। প্রথম জন আজহারউদ্দিন খান। মালদহের ডিএসপি। অন্য জন, রতন রায়। নদিয়ার রানাঘাট থানার এএসআই। প্রথম জন গত এপ্রিল মাসে স্কুলে ‘বন্দুকবাজ’ ঢুকে গিয়েছে শুনে ছুটে গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে। তার পর ছুটে গিয়ে ঝাঁপ দিয়ে অভিযুক্তকে চকিতে শায়েস্তা করেছিলেন। দ্বিতীয় জন রিভলভার দিয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রে ‘সজ্জিত’ ডাকাতদলকে ঘায়েল করেছেন। দু’জনেই প্রমাণ করেছেন, পেশিবহুল চেহারাই শেষ কথা নয়, বিপদের সময় অকুতোভয় হয়ে তার মোকাবিলায় দরকার বুকের পাটা। এবং অবশ্যই, স্থিরতা— কর্তব্যে অবিচল থাকা।
ডিএসপি আজহারের ওজন ৯০ কিলোগ্রাম। এএসআই রতনের ১০২ কিলোগ্রাম ওজন। গত ২৬ এপ্রিল মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাই স্কুলে বন্দুক এবং বিস্ফোরক নিয়ে ঢুকে শাসানি দেওয়া প্রৌঢ়কে বাগে আনতে কয়েক সেকেন্ড সময় লেগেছিল আজহারের। মঙ্গলবার কয়েক মিনিটের অপারেশনে ডাকাতদলের দু’জনকে ধরাশায়ী করে আলোচনায় উঠে এসেছেন রতন। তাঁকে নিয়ে উৎফুল্ল মালদহের ডিএসপি। তাঁর কথায়, ‘‘এই খবরে আমি ভীষণ খুশি। আমাদের ডিপার্টমেন্টে যে কত সাহসী পুলিশ অফিসার এবং কর্মী রয়েছেন, তার আরও এক বার প্রমাণ দিলেন রতনবাবু। ওঁকে অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এ ভাবেই কর্তব্য পালন করুন। খাকি উর্দির সম্মান বৃদ্ধি করুন।’’
আর তাঁদের ওজনের বিষয়টা? একটু ছিপছিপে হলে অপরাধী দমনে আরও সুবিধা হত না কি? প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেলেন মালদহের ডিএসপি। আনন্দবাজার অনলাইনকে আজহারউদ্দিন বলেন, ‘‘আমি তো আগেরবারই আপনাদের বলেছিলাম, ক্রিকেটার ইনজামাম-উল-হক থেকে অর্জুন রণতুঙ্গা বা ডেভিড বুন চেহারা কারও কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি। ওজনদার ওই খেলোয়াড়রাও ফিট ছিলেন। ফিটনেসের সঙ্গে ওজনের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
রানাঘাটের এএসআই রতনের শারীরিক উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। সেই তুলনায় ওজন অনেকটাই বেশি। তবে ডাকাতদলের পিছু নেওয়ার যে ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, তাতে একেবারেই রতনকে আনফিট বলা চলে না। এমনিতে ভীষণ খাদ্যরসিক মানুষ রতন। স্কুলবেলায় চেহারার জন্য বন্ধুরাও মজা করেছেন। তবে রতন নিজে বিশ্বাস করেন, পুলিশে চাকরি করতে হলে শারীরিক সক্ষমতার চেয়েও বেশি জরুরি মানসিক ক্ষিপ্রতা। থানায় কোনও অভিযোগ বা খবর এলে তার গুরুত্ব বুঝে ঘটনাস্থলে হাজির হতে দেরি হয় না তাঁর। ব্যারাকপুর সেন্টারের ১৯৯৬ ব্যাচের কনস্টেবল থেকে সদ্য পদোন্নতি পাওয়া এএসআই রতন মঙ্গলবার রানাঘাটে ডাকাতদলের ছোড়া মুহুর্মুহু গুলির সামনে পড়ে গিয়েও পিছু হঠেননি। বরং চার দুষ্কৃতীকে প্রায় ৫০০ মিটার ধাওয়া করেছেন তিনি। দু’জনের পায়ে নিপুণ নিশানায় গুলি করেছেন। তার অল্প ক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা। সঙ্গে ছিল বাহিনী। রতনের কাণ্ড দেখে বাল্যবন্ধু মঞ্জুল সরকার বলছেন, ‘‘ও মোটাসোটা বলে আমরা মাঝে মাঝেই ঠাট্টা করি। ভোটের মধ্যেই তো বলেছিলাম, ‘বোমা মারলে পালাতে পারবি তো?’ কিন্তু ও আজ প্রমাণ করে দিল রতন আসলে আমাদের রত্ন।’’
রতনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী। স্ত্রী এবং দুই সন্তান থাকেন মুর্শিদাবাদের লালবাগের বাড়িতে। রতনের কীর্তিতে গর্বিত গোটা পরিবার। গত ২৪ ঘণ্টা ধরে অজস্র শুভেচ্ছায় ভাসছেন রতন। তবে উচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে নারাজ তিনি। মালদহের ডিএসপির মতো রানাঘাট থানার এএসআই জানাচ্ছেন, পুলিশ হিসাবে নিজের কর্তব্যটুকু পালন করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন। খাকির সম্মান অটুট রাখতে রাজ্য পুলিশের দুই ‘ওজনদার’ই সঙ্কল্পবদ্ধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy