Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

জাল নয়, বাজার ভর্তি নকল ওষুধ, ড্রাগ কন্ট্রোল হিমশিম

জাল ওষুধ নয়, নকল ওষুধ! আর তা নিয়েই একের পর এক অভিযোগে রীতিমতো জেরবার রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৯
Share: Save:

জাল ওষুধ নয়, নকল ওষুধ! আর তা নিয়েই একের পর এক অভিযোগে রীতিমতো জেরবার রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল।

জাল ওষুধের সঙ্গে নকল ওষুধের পার্থক্য কী?

ড্রাগ কন্ট্রোল কর্তারা জানাচ্ছেন, সাধারণ ভাবে শুনতে দুটোই এক। কিন্তু তাঁদের কাছে এ দু’টি আলাদা। জাল ওষুধ বলতে তাঁরা বোঝেন যে ওষুধের কোনও কার্যকারিতা নেই, উল্টে তা ব্যবহারের পরিণাম হিতে বিপরীত হতে পারে। কিন্তু নকল ওষুধের ক্ষেত্রে প্রস্তুতকারী সংস্থাটি নকল। যে প্রস্তুতাকারী সংস্থা আদতে ওই ওষুধ বাজারে এনেছে, তাদের নকল করে কোনও ভুঁইফোঁড় সংস্থা হয়তো ওই ওষুধ তৈরি করেছে। ওষুধের কার্যকারিতা সব সময়ে একেবারে থাকে-না যে তা নয়। বহু ক্ষেত্রে কার্যকারিতার পার্থক্য সহজে ধরা যায় না। বাজার চলতি নামী সংস্থার ওষুধকে নকল করে কোনও অখ্যাত সংস্থা ওই ওষুধগুলি তৈরি করে বাজারে ছাড়ে। ওষুধ বিক্রেতাদের সঙ্গে তাদের যোগসাজস থাকে। সাধারণ মানুষ না-জেনেই নকল জিনিসটি কিনে নেন। কারণ অবিকল একই মোড়ক। ভেতরের ট্যাবলেট বা সিরাপের চেহারাও একই।

বছর খানেক ধরে কয়েকটি বহুজাতিক সংস্থার তরফে নকল ওষুধের বিষয়ে ড্রাগ কন্ট্রোলে একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে। ড্রাগ কন্ট্রোল কর্তারা জানিয়েছেন, বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতাও মেলার পরে বিষয়টির তদন্ত শুরু হয়েছে। রাজ্যের কয়েকটি জেলায় তল্লাশি চালিয়ে ওই নকল ওষুধের নমুনাও উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, মুলত ঝাড়খণ্ড ও বিহার থেকে ওই ওষুধ এ রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। কয়েকটি এলাকাকেও চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশকে জানানো হয়েছে। ড্রাগ কন্ট্রোল কর্তাদের বক্তব্য, কর্মীর অভাবে তাঁরা যথাযথ ভাবে তদন্ত চালাতে পারছে না। পারলে বাজার ছেয়ে থাকা বিভিন্ন ওষুধের আসল ছবিটা সামনে আসত।

রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোলার চিন্তামণি ঘোষ বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ভিজিল্যান্স বিভাগ এটা দেখছে। এখন এর বাইরে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

নকল ওষুধের ঝুঁকির দিকগুলি কী? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নামী ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার মতো উন্নত পরিকাঠামো ও পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকে না ওই সব সংস্থার। থাকে না গবেষণার ব্যবস্থাও। কোনও মতে প্রযুক্তিটি জেনে তা ব্যবহার করেই ওষুধ তৈরি করা হয়। তাই গুণমান ঠিক থাকে না। এই ওষুধ খাওয়ার পর রোগীর ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও খুব বেশি।

কী ভাবে নকল ধরা পড়ল?

ওষুধ প্রস্তুতকারী একটি বহুজাতিক সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘কয়েক বছর ধরে আমাদের একটি ওষুধের বিক্রি ধীরে ধীরে কমছিল। কিন্তু প্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী ওষুধের চাহিদা প্রচুর। তার পরই বাজার যাচাই করে আমাদের সংস্থার প্রতিনিধিরা রিপোর্ট দেয়— বাজারে সরবরাহ করা ওষুধের থেকে বেশি পরিমাণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে।’’

ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে বাজার যাচাই করে তাঁরা দেখেন, সরবরাহ করা ওষুধের প্রায় দ্বিগুণ ওষুধ বিক্রি হয়েছে। আরও ওষুধ বিভিন্ন দোকানে মজুত রয়েছে। তার পরই নকল ওষুধের বিষয়টি সামনে আসে ড্রাগ কন্ট্রোলের কর্তারা জানিয়েছেন, বর্ধমান ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় সরবরাহ করা ওষুধের থেকে অনেক বেশি ওষুধ বাজারে রয়েছে বলে একটি বহুজাতিক সংস্থার তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল। মুলত একটি ব্যথানাশক (পেন কিলার) ট্যাবলেট ও ভিটামিন ক্যাপসুলের বিষয়ে নিদিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। ওই দুই জেলার বিভিন্ন ওষুধের দোকান ও মধ্য কলকাতার ওষুধের বাজার থেকে ওই দু’টি ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে আসল ওষুধের সঙ্গে অক্ষর ও বানানের সামান্য হেরফের ধরা পড়ে, খুব খুঁটিয়ে না দেখলে যা ক্রেতাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।

এখন একাধিক বহুজাতিক ও দেশি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা নকল ওষুধের বিষয়ে অভিযোগ করেছে। ওই সব অভিযোগের ভিত্তিতে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Drug control drug pharmacy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy