গ্রামে ক্যাম্প করে নেওয়া হচ্ছে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।
দুয়ারে সরকার, দুয়ারে রেশনের পরে এ বার বসিরহাট মহকুমায় শুরু হয়েছে ‘দুয়ারে পুলিশ’ কর্মসূচি। পোশাকি নাম, ‘ভ্রাম্যমাণ পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র’। গ্রামে গ্রামে গিয়ে অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ কর্তাদের যুক্তি, করোনা পরিস্থিতিতে যাতায়াতের অসুবিধা থাকায় এমন কর্মসূচি। যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, সম্প্রতি ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে হাইকোর্টের চাপের মুখেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার। তবে কারণ যা-ই হোক, পুলিশের এই ভূমিকায় সম্তুষ্ট প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। গত কয়েক দিনে প্রচুর অভিযোগও জমা পড়ছে বলে জানাচ্ছেন পুলিশ কর্তারা।
ইতিমধ্যে মিনাখাঁ, ন্যাজাট ও সন্দেশখালি থানা এলাকায় ভ্রাম্যমান অভিযোগ গ্রহণকেন্দ্র নিয়ে পৌঁছেছে পুলিশ। চেয়ার-টেবিল পেতে হাটে-বাজারে বসছেন পুলিশ কর্মীরা। সেখানেই এসে মানুষ অভিযোগ দায়ের করছেন। বসিরহাট মহকুমার ১১টি থানা এলাকাতেই এই কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে খবর। বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার জবি থমাস কে বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত অনেক এলাকা থেকে প্রায় ২০-৩০ কিলোমিটার পেরিয়ে মানুষকে থানায় আসতে হয়। নদী পেরোতে হয়। সে সব কথা মাথায় রেখেই দুয়ারে সরকারের মতো এই কর্মসূচি।’’
পুলিশের একটি সূ্ত্র জানাচ্ছে, গত তিন দিনে মূলত জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদ, জিনিসপত্র হারানোর মতো মামুলি অভিযোগই জমা পড়েছে। এর মধ্যে মিনাখাঁয় ১৩০টি, ন্যাজাটে ৫০টি এবং সন্দেশখালিতে ১০০টির মতো অভিযোগ এসেছে। এত অভিযোগ আগে হত না বলেই জানাচ্ছে পুলিশ।
মিনাখাঁর চৈতল গ্রামের শ্যামলী মণ্ডল বলেন, ‘‘থানায় যেতে ৪০-৫০ টাকা খরচ। এখন বাড়ির পাশে পুলিশকে কাছে পেয়ে আমরা খুশি। আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কথা লিখিত আকারে জানাতে পারছি।’’ ন্যাজাটের বাউনিয়ার নুরজাহান বিবি বলেন, ‘‘নৌকোয় করে নদী পেরিয়ে থানায় যেতে হত। এখন দুয়ারে পুলিশ আসায় সুবিধা হয়েছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি, তারা তো সব দেখে ফেলছে। এ ভাবে শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত হবে, বুঝতে পারছি না। আগে দেখি, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ কতটা ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’
শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ অবশ্য সে ভাবে আসেনি বলেই জানাচ্ছে পুলিশের একটি সূত্র। বিজেপির বসিরহাট বিজেপি সাংগঠনিক জেলার যুব মোর্চার সভাপতি পলাশ সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘চাপে পড়ে এ সব করছে সরকার। ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনার জেরে যে ভাবে হাইকোর্ট রাজ্যকে ভর্ৎসনা করেছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যে ভাবে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে, তাতে তৃণমূল দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছে। বিষয়টি থেকে নজর ঘোরাতে দুয়ারে পুলিশ শিবির করা হয়েছে।’’ বিজেপি নেতার দাবি, এই উদ্যোগের ফলে সাধারণ মানুষের উপকার হওয়া
সম্ভব নয়। আগে অভিযোগ জানাতে থানায় গেলে যা-ও বা বিষয়টি গোপন থাকত, এখন পাড়ায় পুলিশ শিবিরে গিয়ে অভিযোগ জানালে অপরাধীরা সব জানতে পারবে। পলাশের প্রশ্ন, ‘‘তখন কি বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ নিরাপত্তা দেবে?’’
পুলিশ সুপারের মতে, তাঁরা গ্রামের মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এমন উদ্যোগ করেছেন। সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সব সময়ে সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা ভাবেন। করোনা আবহের মধ্যে মানুষদের আর্থিক দূরবস্থার কথা মাথায় রেখে তিনি এই প্রকল্প চালু করেছেন। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy