পরীক্ষাকেন্দ্রে নজরদারিতে কড়াকড়ি বন্ধ না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে বলেও জানিয়েছেন ডোমকলের বিক্ষোভরত পরীক্ষার্থীরা। —নিজস্ব চিত্র।
করোনাকালে দীর্ঘ দিন কলেজ বন্ধ থাকায় পড়াশোনার অভ্যাস চলে গিয়েছে। তাই পরীক্ষাকেন্দ্রে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এবং প্রয়োজনে টোকাটুকি করে উত্তরপত্র লেখার সুযোগ দিতে হবে। অভিযোগ, এ হেন দাবিতে বুধবার রাস্তা অবরোধ, পরীক্ষকদের সঙ্গে হাতাহাতি থেকে শুরু করে ইটবৃষ্টি-সহ বিক্ষোভে বসেছেন মুর্শিদাবাদের ডোমকলের একটি কলেজের পরীক্ষার্থীরা। ওই কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, কলেজ জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। একে শিক্ষাক্ষেত্রে কালো দিন বলে আখ্যা দিয়েছেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদের ডোমকল বসন্তপুর কলেজের সাধারণ বিভাগের তৃতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শেখপাড়া জিডি কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্রে অত্যন্ত কড়াকড়ির চলছে। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ বেশ কয়েক জন পরীক্ষার্থী। তাঁদের অভিযোগ, মঙ্গলবার থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে ‘অযথা বাড়তি নজরদারি’ করছেন শিক্ষকেরা। ফলে অন্য পরীক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচনা করে উত্তর লিখতে পারেননি তাঁরা।
মঙ্গলবার পরীক্ষা শেষে শেখপাড়া জিডি কলেজে শিক্ষকদের সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের এক দফা গন্ডগোল হয়। কলেজের সিসিটিভি, কম্পিউটার-সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ।
পরীক্ষাকেন্দ্রে কড়াকড়ির বিরুদ্ধে বুধবারও সরব হয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। প্রয়োজনীয় নথি এবং জলের বোতল ছাড়া অন্য কোনও সামগ্রী নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশে করা যাবে না বলে বুধবার নির্দেশিকা জারি করেন জিডি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই নতুন নির্দেশিকা ঘিরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পরীক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে লেখার সুযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনে টোকাটুকিও করতে দিতে হবে। ডোমকল বসন্তপুর কলেজের বিক্ষোভকারী ছাত্র তোফাজুল আহমেদ শেখের দাবি, ‘‘করোনাকালে ৩ বছর কোনও পড়াশোনা না করেই পাশ করেছি। পড়াশোনার অভ্যাস আর নেই। পরীক্ষাও দিইনি। হঠাৎ করে আমরা কী ভাবে পরীক্ষায় লিখব? সকলের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পেলে তবু একটু লেখা যায়! আমাদের পরিষ্কার দাবি, পরীক্ষাকেন্দ্রে আলোচনার সুযোগ দিতে হবে। খুব প্রয়োজনে দু’একটা উত্তর দেখে লিখতেও দিতে হবে।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘এটা তো আইএএস, আইপিএস কিংবা অন্য কোনও চাকরির পরীক্ষা নয়। সামান্য একটি ডিগ্রির পরীক্ষা। তা নিয়ে এত কড়াকড়ির কী আছে?’’ যদিও বিক্ষোভকারীদের দাবি মানতে অসম্মত শিক্ষকেরা। তা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে ছাত্রদের হাতাহাতি শুরু হয় বলে অভিযোগ। শিক্ষকদের আরও অভিযোগ, দীর্ঘ ক্ষণ তাঁদের আটকে রাখেন পরীক্ষার্থীরা। এমনকি, বাঁশ-লাঠি নিয়ে কলেজে ভাঙচুর চালানো হয়। কলেজ লক্ষ্য করে চলে ইটবৃষ্টি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ বাহিনী। সে সময় কলেজের বাইরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন পরীক্ষীর্থীরা। বুধবার কলেজের একাধিক জায়গায় ভাঙচুর চালানো ছাড়াও ছোটখাটো অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে ওই ছাত্রদের বিরুদ্ধে। ছাত্রদের বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের খণ্ডযুদ্ধে বর্তমানে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে।
গোটা ঘটনায় মানসিক ভাবে আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন জিডি কলেজের ভারপ্রাপ্ত মহাতাব আলম। কলেজ পরিচালন সমিতির সম্পাদক জহাঙ্গীর ফকির বলেন, ‘‘গণটোকাটুকির দাবিতে বসন্তপুর কলেজের ছাত্ররা আমাদের কলেজ জুড়ে তাণ্ডব করেছেন। ওঁদের আক্রমণে আমাদের ৬-৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আহত। শিক্ষাক্ষেত্রে এ রকম কালো দিন আমি দেখিনি।’’
বুধবার বিক্ষোভের অঙ্গ হিসাবে প্রায় দু’শো পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বয়কট করেছেন। পরীক্ষাকেন্দ্রে নজরদারিতে কড়াকড়ি বন্ধ না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy