ছবি: শাটারস্টক।
কোভিডের সঙ্গে লড়াই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপরে অনেকখানি নির্ভরশীল। কিন্তু করোনা আক্রান্ত মায়ের সদ্যোজাতদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) তৈরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে কি না, মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহে সেই প্রশ্ন উঠে গেল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি গত কয়েক মাসে একাধিক গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, মা কোভিড পজ়িটিভ হলেও সুরক্ষাবিধি মেনে সদ্যোজাতকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। প্রশ্ন হল, বাস্তবে তা হচ্ছে কি!
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, দমদম ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দা শিখা দাস গত ৫ জুন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। দু’দিন পরে শিখাদেবীর কোভিড ধরা পড়লে মা এবং সদ্যোজাতকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্থানান্তরিত করানো হয়। সপ্তাহ খানেক পরে ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব’ থেকে সদ্যোজাতকে ছাড়া হলেও ইডেন বিল্ডিংয়ে চিকিৎসাধীন মায়ের ছুটি হয় আরও দিন তিনেক পরে। সদ্যোজাতের মামা গৌতম দাস বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজে থাকার সময় মা এবং বাচ্চাকে আলাদা রাখা হয়েছিল। দিদির ছুটির পরও ১০ দিন বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে বারণ করেছিলেন ডাক্তারেরা। ’’
বালিগঞ্জের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা সিংহের কোভিড ধরা পড়লে তাঁকেও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। সদ্যোজাতের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ায় তাকে ভর্তি করানো হয়নি। দিন তিনেক পরে প্রিয়াঙ্কার রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তাঁকেও বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেন চিকিৎসকেরা। স্বামী শিবশঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘ডাক্তারেরা ১৪ দিন বুকের দুধ খাওয়াতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু সন্তানের ভালর কথা ভেবে দু’মাস মায়ের থেকে বাচ্চাকে আলাদা রেখেছিলাম!’’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মা করোনা আক্রান্ত হলেও সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। বরং বুকের দুধ খেলে সন্তানের দেহে তৈরি হবে রোগ প্রতিরোধ (ইমিউনিটি) ক্ষমতা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জার্নাল ল্যান্সেটে প্রকাশিত ‘নিওনেটাল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড আউটকামস ডিউরিং দ্য কোভিড ১৯ প্যানডেমিক’, এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে নিউ ইয়র্ক শহরের একটি হাসপাতালে ২২ মার্চ-১৭ মে’র মধ্যে ১৪৮১টি সন্তান প্রসবের মধ্যে সমীক্ষা করে ১১৬ জন মায়ের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ৮২ জন সদ্যোজাতকে মায়ের সঙ্গে একঘরে রেখে বুকের দুধ খাওয়াতে বলা হয়েছিল। পাঁচ-সাতদিন পরে আরটি-পিসিআরে সেই সকল সদ্যোজাতদের নমুনা পরীক্ষা করানো হলে ৭৯ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। দু’সপ্তাহ পরে ফের ৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা করানো হলে সেই রিপোর্টও নেগেটিভ আসে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গবেষণাপত্রের পর্যবেক্ষণ হল, বুকের দুধ পান করানোর সময় মুখে মাস্ক পরা, সন্তানকে কাছে নেওয়ার আগে ভাল করে হাত ধুয়ে নিলে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এনআরএসের এসএনসিইউ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অসীম মল্লিক বলেন, ‘‘ভাইরাস যে পথে প্রবেশ করবে সদ্যোজাতদের দেহের ক্ষেত্রে সেই পথ মসৃণ নয়। বাচ্চাদের নাক এবং শ্বাসনালীতে এসিই ২ এবং টিএমপিআরএসএস২ পূর্ণবয়স্ক মানবদেহের তুলনায় কম থাকে। পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে এগুলি সংখ্যায় বেশি থাকায় ভাইরাসের প্রবেশে সুবিধা হয়।’’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান মৌসুমি নন্দীও বলেন, ‘‘ইউনিসেফের নির্দেশিকা অনুযায়ী, মায়ের কাছেই সদ্যোজাত থাকবে। মা মাস্ক, ফেসশিল্ড পরে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে কোনও সমস্যা নেই।’’ কিন্তু মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি থাকা প্রসূতির পরিজনেরা তো উল্টো কথা বলছেন? বিভাগীয় প্রধান বলেন, ‘‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। একটা মিটিংয়ে আছি পরে কথা বলব।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy