প্রতীকী ছবি।
বিশশো বিশের তুলনায় চলতি বছরে ধাক্কাটা এল মাস চারেক আগেই। গত বছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি বঙ্গে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দু’হাজারের ঘর পার করেছিল। এ বার সেটা হয়ে গেল এপ্রিলের গোড়াতেই! সেই সঙ্গে সমধিক উদ্বেগের খবর হল, বয়স্কদের তুলনায় অল্পবয়সিদের মধ্যে সংক্রমণের হার এ বার বেশি বলে জানাচ্ছেন এক শ্রেণির চিকিৎসক।
গত বছর ১৮ জুলাই রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হন ২১৯৮ জন। বাংলায় দৈনিক সংক্রমণ সে-দিনেই প্রথম দু’হাজার ডিঙোয়। এ বছর ৬ এপ্রিল সংক্রমিত হয়েছেন ২০৫৮ জন। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী বুধবার করোনায় আক্রান্ত ২৩৯০ জন। মারা গিয়েছেন আট জন। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘যে-ভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে বড় বিপদের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’’
কিন্তু হুঁশ ফিরছে না জনতার একাংশের। ভোটযুদ্ধের ময়দানে কে কাকে কী ভাবে টেক্কা দিচ্ছে, আমজনতা সেই জল্পনাতেই ব্যস্ত। কলকাতার এক চিকিৎসকের আক্ষেপ, ‘‘কোথায় কত শতাংশ ভোট পড়ল, কার সভায়-মিছিলে কত লোক এল, তা নিয়ে যত উৎসাহ, দৈনিক করোনা-আক্রান্তের পরিসংখ্যানে চোখ বুলোনোর ক্ষেত্রে যদি সেটা থাকত, তা হলে মানুষ আসন্ন বিপদটা বুঝতে পারত।’’ কে শোনে কার কথা! ব্যারাকপুরের এক যুবক সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। ডাক্তার, সংক্রমণ বিশারদেরা জানাচ্ছেন, গত বছর বয়স্কেরা বেশি আক্রান্ত হলেও এ বার সেই হার ততটা নয়। বরং কমবয়সি অর্থাৎ ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সিরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।
কলকাতা এবং রাজ্যের অন্যত্র বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে। এবং তাঁদের মধ্যে কমবয়সির সংখ্যা বেশি। এটা হচ্ছে কেন? চিকিৎসক ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ‘‘কাজের সূত্রে অল্পবয়সিদের রাস্তায় বেরোতেই হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তাঁদের বেশির ভাগেরই মাস্ক থাকছে না। ফলে ওঁদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বেশি।’’ চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা, বয়স্কদের বেশির ভাগই প্রতিষেধক নিয়েছেন। তাঁদের একটা বড় অংশ এখন বিপদ থেকে দূরে। বাড়ির লোকেরা তাঁদের অনেক বেশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রাখছেন। কিন্তু ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের প্রতিষেধক দেওয়া সবে শুরু হয়েছে। আর ৪৫ বছরের নীচে যাঁদের বয়স, তাঁদের প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হয়নি। অভিযোগ, ঢিলেঢালা মনোভাব এই বয়সের মানুষদের মধ্যেই বেশি। সব মিলিয়ে কমবয়সিদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি বলেই চিকিৎসকদের একাংশের অভিমত।
স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন জানাচ্ছে, সর্বাধিক সংক্রমণ কলকাতায়— নতুন করে আক্রান্ত ৭২২ জন। উত্তর ২৪ পরগনা ৫৪৮ এবং হাওড়ায় ২২৪ জন সংক্রমিত। এ দিন কলকাতার তিন জন, উত্তর ২৪ পরগনার তিন জন, হাওড়ার এক জন এবং পশ্চিম বর্ধমানের এক জনের মৃত্যু হয়েছে।
ভোটে বিজেপির কলকাতা জ়োনের দায়িত্বপ্রাপ্ত উত্তরপ্রদেশের দলীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুনীল বনসল করোনায় আক্রান্ত। বিজেপি সূত্রের খবর, তিনি লখনউয়ে নিভৃতবাসে রয়েছেন। বিজেপির রাজ্য দফতর এবং হেস্টিংসের নির্বাচনী অফিসের সাত জনের করোনা হয়েছে। ভোট প্রচারে কোভিড বিধি না-মানায় বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। সম্প্রতি চিকিৎসকদের মঞ্চ ‘প্রোটেক্ট দ্য ওয়ারিয়রস'-এর তরফে কোভিড বিধি মেনে চলার জন্য সব রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে ৩০ জন চিকিৎসকের সই সংবলিত আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি ফের ঘোরালো হতে পারে আঁচ করে কোমর বাঁধছে স্বাস্থ্য ভবনও। ইতিমধ্যে জেলার স্বাস্থ্যকর্তা, বিভিন্ন হাসপাতালের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy