আরজি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে বসল আবক্ষ মূর্তি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে লাগাতার আন্দোলন চালাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁরা আগেই ঘোষণা করেছিলেন, মহালয়ার দিন আর জি করে নির্যাতিতার স্মরণে মূর্তি বসাবেন। সেই মতো বুধবার ক্যাম্পাসে নির্যাতিতার প্রতীকী আবক্ষ মূর্তি বসেছে। কিন্তু সেই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। মূর্তির অবয়ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে আপত্তি জানিয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধীরা যদিও চিকিৎসকদের উদ্যোগের মধ্যে ভুল কিছু দেখছে না।
মহালয়ার সকালে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্ল্যাটিনাম জুবিলি ভবনের সামনে স্থাপিত হয়েছে তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার প্রতীকী আবক্ষ মূর্তি। যার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘ক্রাই অব দ্য আওয়ার্স’। যদিও সেটিকে সরাসরি ওই নির্যাতিতার প্রতীকী মূর্তি বলছেন না জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁদের তরফে কিঞ্জল নন্দ বলেন, ‘‘আর জি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে এই মূর্তি একটি প্রতিবাদ ও আর্তনাদের প্রতীক।’’ কিঞ্জল আরও বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ ও সুপারের অনুমতি নিয়েই এটি স্থাপন করা হয়েছে।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা ভাস্কর্য শিল্পী অসিত সাঁই এই মূর্তি তৈরি করেছেন। অসিতের বক্তব্য, ‘‘কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের সময়ে এক জন তরুণী চিকিৎসক যে নির্মম অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, সেই আর্তনাদ তো বটেই, পাশাপাশি সমাজের সমস্ত নির্যাতিতার যন্ত্রণাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই সৃষ্টির মাধ্যমে।’’
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের অবশ্য দাবি, ‘‘তিলোত্তমার নামে এই মূর্তিটি বসানো সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যের ‘স্পিরিটে’র পরিপন্থী। কোনও দায়িত্বশীল ব্যক্তি এটা করতে পারেন না। শিল্পের নামেও না। প্রতিবাদ, ন্যায়-বিচারের দাবি থাকবেই। কিন্তু মেয়েটির যন্ত্রণার মুখ দিয়ে মূর্তি ঠিক নয়। নির্যাতিতার নাম, ছবি ব্যবহার নিয়ে নির্দেশিকা আছে। তাই ‘তিলোত্তমা’, ‘অভয়া’ বলা হয়। সেখানে নির্দিষ্ট ভাবে তার কথা বলে এই যন্ত্রণার মুহূর্তের মূর্তি হতে পারে না!’’
পাল্টা বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “এই সরকার চূড়ান্ত বাধ্যতা চায়। প্রতিবাদের ভাষা, স্বরূপ, গতিমুখ কী হবে তা কোনও শাসক স্থির করে দিতে পারে না।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, “ভারতের মধ্যে প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে এই বাংলার গর্ব ছিল। আর এখন এখন এক জন মহিলা চিকিৎসককে তাঁর কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন করা হয়েছে। তাঁর সহকর্মীরা স্বাভাবিক কারণেই তাঁর মূর্তি বসাবেন। এখন মূল প্রশ্ন গুলো ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সহকর্মী, সহপাঠীর জন্য চিকিৎসকেরা ঠিক কাজই করেছেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ও বলেছেন, “আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের মর্মান্তিক ঘটনা নিরাপত্তার চূড়ান্ত গাফিলতি। প্রমাণ লোপাটের, ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। জুনিয়র চিকিৎসকেরা তাঁদের সহপাঠীর জন্য মূর্তি তৈরি করলে সেটা তো সঙ্গত।’’
নির্যাতিতার জন্য ন্যায়-বিচারের দাবিতে এ দিনই এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির যৌথ উদ্যোগে হাওড়ার বি গার্ডেন আঞ্চলিক কমিটি আয়োজন করেছিল গণ-কনভেনশনের। মহিলা আন্দোলনের বর্ষীয়ান নেত্রী সর্বাণী ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে কনভেনশনে মূল বক্তা ছিলেন এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক দীপ্সিতা ধর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy