Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

এইচআইভি! প্রসব করাতে আপত্তি চিকিৎসক-নার্সের

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের এক গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সেরা এইচআইভি আক্রান্ত এক প্রসূতির অস্ত্রোপচার করতে রাজি হননি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৯
Share: Save:

সচেতনতা-প্রচারে ইদানীং ভাটা পড়েছে। আগে প্রচার চালানো হলেও এইচআইভি-এড্‌স নিয়ে সাধারণ মানুষের, এমনকি চিকিৎসকদেরও ভ্রান্ত ধারণা কাটছে না। এই রোগ ও রোগী নিয়ে ছুতমার্গ কত গভীরে শিকড় গেড়েছে, সেটা প্রকাশ্যে এনে দিল পূর্ব মেদিনীপুরের একটি ঘটনা।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের এক গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সেরা এইচআইভি আক্রান্ত এক প্রসূতির অস্ত্রোপচার করতে রাজি হননি। তাঁদের বক্তব্য, রোগিণীকে কোনও জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হোক। এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে সতর্কতা হিসেবে প্রোটোকল মেনে ‘সেফ ডেলিভারি কিটের’ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাচ্চার জন্য মজুত ছিল নেভিরাপিন সিরাপ। তার পরেও চিকিৎসক-নার্সদের প্রথমে রাজি করানো যায়নি। অগত্যা তাঁদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা হয়। বোঝানো হয়, অন্য হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সেরা তো তাঁদেরই সহকর্মী। তাঁদের কি সংক্রমণের ভয় নেই? এই প্রশ্নের মুখে প্রসবে রাজি হন ওই গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সেরা।

রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, শেষ পর্যন্ত ছবিটা সাফল্যের। কিন্তু রাজ্যের একাধিক জেলায় ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ অসাফল্যের নজির তৈরি করছেন! সেই অসুখ কত গভীরে, তা বোঝাতে স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, যে-টেবিলে এইচআইভি রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে, সম্প্রতি ওয়ার্ড থেকে সেই টেবিল বার করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে!

আরও পড়ুন: শীতে ভিড় টানতে দিঘার ট্রেনে ছাড়

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান বন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই ধরনের অস্ত্রোপচারে রোগীর দেহ থেকে প্রচুর রক্ত এবং দেহরস বেরোয়। তা অন্যের শরীরে ঢুকলে তবেই সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ ধরনের গ্লাভস, মাস্ক, চশমার পাশাপাশি স্টেরিলাইজেশন-সহ সব রকম ব্যবস্থা থাকলে আশঙ্কার কারণ নেই।’’ স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিরেক্টর প্রতীপ কুণ্ডু বলেন, ‘‘রোগীর সেবা করাই তো আসল কথা।’’

উল্টো মতও রয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘সব ধরনের রক্ষাকবচ আদৌ ছিল কি না, তা যাচাই করতে হবে। গাউন, গ্লাভসের গুণমান খতিয়ে দেখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। ছুতমার্গ পুরো চলে গিয়েছে, বলছি না। কিন্তু অনেক সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিট থাকে না, এটাও সত্যি।’’

এড্‌স-সচেতনতা নিয়ে কর্মরত প্রবীণ চিকিৎসক দেবপ্রিয় মল্লিক জানান, কয়েক বছর আগে এইচআইভি আক্রান্ত এক রোগীকে ফিরিয়ে দিয়েছিল এনআরএস, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং বাঙুর ইনস্টিটিউটও। সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, এইচআইভি রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া অমানবিক, বেআইনি। এড্‌স নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য উদয় সেন বলেন, ‘‘২০১৯ সালেও এমন ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। যা শুনছি, তাতে মনে হচ্ছে, সিভিল সোসাইটির মধ্যেও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।’’ সেই সচেতনতা প্রচার এখন শিকেয় উঠেছে বলে জানান দেবপ্রিয়বাবু। জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশেরও বক্তব্য, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মী, আশা-কর্মী, নার্সদের আগে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলত। এখন তাতে লাগাম পড়েছে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর কর্মসূচিতে ছেদ পড়া ঠিক নয়।’’

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সাফল্য একটা জায়গায় পৌঁছনোর পরে প্রচারে হয়তো ঘাটতি হচ্ছে। নতুন অনেক চিকিৎসক, নার্সও কাজে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের সচেতনতা বাড়াতেই হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

HIV
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy