Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19

ফণা তুলছে ভারতীয় প্রজাতি, ৫ রাজ্যে ‘বিপদসংকেত’, আসছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ

কিছু দিন আগেও চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছিলেন, করোনা ‘যুদ্ধে’ জয়ের পথে এগোচ্ছে দেশ তথা বাংলা।

ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৭:১৩
Share: Save:

যুদ্ধজয়ের মুখে আচমকা রণকৌশল বদলে ফেলে শত্রুপক্ষের হামলা!কিছু দিন আগেও চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছিলেন, করোনা ‘যুদ্ধে’ জয়ের পথে এগোচ্ছে দেশ তথা বাংলা। টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হওয়ায় এবং আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকায় কিছুটা স্বস্তিও পেয়েছিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা। ঠিক সেই সময়ই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বদলে ফিরে এল করোনাভাইরাস।

জিনের ‘সিকোয়েন্স’ করে জানা গিয়েছে, ভারতে করোনার নতুন প্রজাতির সন্ধান মিলেছে। মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, কেরল, কর্নাটক, ছত্তীসগঢ়ে যে ভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে, তাতে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) আছড়ে পড়লে অবাক হওয়ার কিছু নেই বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। সে কথা মাথায় রেখেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে প্রতিটি হাসপাতালকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। করোনা পরীক্ষা আরও বাড়ানোর উপরেও নতুন করে জোর দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যভবন জানিয়েছে, শুক্রবার মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, কেরল, কর্নাটক, ছত্তীসগঢ়ের কোনও বাসিন্দা কলকাতা বিমানবন্দরে নামলেই তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার বলেন, “আমরা সব রকমের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। সংশ্লিষ্ট রাজ্য থেকে যাঁরা বিমানবন্দর হয়ে আসবেন, তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। আরও পরীক্ষা এবং টিকাকরণের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। করোনা যুদ্ধ জয় করতে হলে রাজ্যবাসীকেও সচেতন হতে হবে।”

চিকিৎসকদের মতে, “লকডাউন পর্বে মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে যে সচেতনতা গড়ে উঠেছিল। যে আতঙ্ক ছিল, তা এখন নেই। অনেকেই ভাবছেন, আমরা করোনাকে জয় করে ফেলেছি। কিন্তু কেরল, মহারাষ্ট্র এবং পঞ্জাবে যে ভাবে করোনা আবার থাবা বসিয়েছে, তা দেখে সচেতন না হলে বড় খেসারত দিতে হবে।” রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ১ জানুয়ারি বাংলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজারের উপর। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকে। একটা সময়ে দৈনিক সংক্রমণ ২০০-রও নীচে নেমে গিয়েছিল। তার পর আবার বুধবার রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০২ জন। তার আগে শেষবার ওই সংখ্যা ২০০-র উপর ছিল গত ১২ ফেব্রুয়ারি। তার পর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকায় রাজ্যে সুস্থতার হার (ডিসচার্জ রেট) পৌঁছে গিয়েছে ৯৭.৬৩ শতাংশে। কিন্তু পরিস্থিতির দ্রুত বদল ঘটছে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এখনই সচেতন না হলে আবার লকডাউন পর্বের মতোই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে ফিরতে পারে রাজ্যে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসকের কথায়, “রাজ্যেবিধানসভা ভোট নিয়ে যতটা ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে, করোনা নিয়ে যদি সরকারি স্তরে প্রচারে সেই গুরুত্ব দেওয়া হলে মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে ভয় কমে যেত। সকলেই টিকা নিতেন।’’

ওই চিকিৎসক আরও জানাচ্ছেন, রাজ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে দৈনিক করোনা পরীক্ষার হারও অনেকটা কমে গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর তাঁর কথাকে বৈধতাই দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে দৈনিক করোনা পরীক্ষার সংখ্যা আগের থেকে অনেক কমেছে। যেমন বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি করোনা পরীক্ষা হয়েছে ২০,২১২ জনের। আগের থেকে যা অনেক কম। জানুয়ারির শুরুতেও দৈনিক প্রায় ৪০,০০০ করোনা পরীক্ষা হত। তবে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার যুক্তি, “রাজ্যে সংক্রমণ কম হচ্ছে বলেই পরীক্ষা কম হচ্ছে। ল্যাবরেটরির সংখ্যা কিন্তু আগের থেকে বেড়ে গিয়েছে।” এই মুহূর্তে মোট ১০৫টি ল্যাবরেটরিতে করোনা টেস্ট করানো যাচ্ছে। রাজ্যের জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। কিন্তু তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৮৪,৮৩,০২১ জনের করোনা পরীক্ষা করা গিয়েছে। মোট আক্রান্ত এখনও পর্যন্ত ৫ লক্ষ ৭৪ হাজার। সুস্থ হয়েছেন সাড়ে ৫ লক্ষের বেশি। করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজারের বেশি মানুষের।

ফলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আগে আরও বেশি সংখ্যায় করোনা পরীক্ষা হওয়া উচিত বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তারই পাশাপাশিই তাঁদের অভিমত, আরও দ্রুততার সঙ্গে বেশি সংখ্যায় মানুষকে টিকা দেওয়া। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আফ্রিকা, ইউকে, ব্রাজিলে করোনার নতুন প্রজাতির মতোই ভারতে করোনার নতুন প্রজাতিকে কম গুরুত্ব দিয়ে দেখার কিছু নেই। ‘স্প্যানিশ ফ্লু’-এর কথা স্মরণ করিয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ি বলেন, “আমরা এখনও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখিনি। আফ্রিকা, ইংল্যান্ড কিন্তু এর ভয়ঙ্কর রূপ দেখে নিয়েছে। স্প্যানিস ফ্লুয়ের সময়ও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল। দ্বিতীয় ঢেউয়েই বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন। কেরল, মহারাষ্ট্রে যেহেতু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাই আমাদের নিশ্চিন্ত হওয়ার জায়গা নেই। অবিলম্বে আরও মানুষকে টিকা দিতে হবে। সেই সঙ্গে করোনা রুখতে আরও তৎপর হতে হবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Corona vaccine COVID-19 Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy