প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারের (এনপিআর) কাজ যে স্থগিত থাকবে, তৃণমূল সরকার আগেই তা ঘোষণা করেছে। কিন্তু সেন্সাস বা জনগণনার কাজ কী ভাবে শুরু হবে, তা নিয়ে ধন্দে রাজ্যের প্রতিটি জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এই রাজ্যে জনগণনার সময় এখনও নির্দিষ্ট না-হওয়ায় জেলা প্রশাসনগুলির অন্দরে ধোঁয়াশা এবং জল্পনাকল্পনা ক্রমশই বাড়ছে।
সারা দেশে আদমশুমারির কাজ চলবে ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। রাজ্যগুলি এই ছ’মাসের মধ্যে সুবিধামতো যে-কোনও ৪৫ দিন বেছে নিয়ে নিজেদের এলাকায় জনগণনার কাজ করাতে পারে। কিন্তু বাংলায় কোন সময়ে ৪৫ দিন ধরে জনগণনা হবে, তা স্থির হয়নি। সরকারি ভাবে মুখ খুলতে না-চাইলেও জনগণনা-কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, রীতি অনুযায়ী কোন ৪৫ দিন বেছে নেওয়া হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের তরফে সেটা রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়াকে (আরজিআই) জানিয়ে দিতে হয়। তার ভিত্তিতে আদমশুমারি-কর্তৃপক্ষ বাকি কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সেই তথ্য জানানোর সময়সীমাও ইতিমধ্যে পেরিয়ে গিয়েছে।
এই অবস্থায় রাজ্যের প্রায় সব জেলায় জনগণনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ থমকে আছে। সংশ্লিষ্ট কাজে গণক নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলছে না। নবান্ন থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ বা ইঙ্গিত না-মেলায় জেলা প্রশাসনগুলিতে বিভ্রান্তি চরমে উঠেছে। বহু জেলা প্রশাসনের ব্যাখ্যা, কেন্দ্রীয় ভাবেও এই প্রশিক্ষণ হওয়ার কথা। সেখানে ‘মাস্টার ট্রেনারদের’ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিছুটা হওয়ার পরে সেই প্রশিক্ষণও বন্ধ আছে। কারণ, প্রথমে এনপিআর নিয়ে রাজ্যের তেমন কোনও আপত্তি লক্ষ করা যায়নি। কিন্তু সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সমস্যা ঘোরালো হয়ে ওঠে। রাজ্য মনে করে, এনপিআর হল ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনের (এনআরসি) প্রথম ধাপ। সেই জন্য ১৬ ডিসেম্বর এক নির্দেশিকায় সরকার জানিয়ে দেয়, এ রাজ্যে এনপিআরের যাবতীয় কাজ স্থগিত থাকবে এবং রাজ্যের অনুমতি ছাড়া কেউ সেই কাজ শুরু করতে পারবেন না। সব জেলায় এই নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: আইনশৃঙ্খলার প্রশস্তি, সিএএ-র ‘বিরোধিতা’ করলেন ধনখড়
অনেক জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, আরও কয়েকটি বিষয়কে ঘিরে সমস্যা বেড়েছে। ১) দিল্লি থেকে এই বিষয়ে যত চিঠিপত্র এসেছে, তাতে সেন্সাস এবং এনপিআর-কে এক পঙ্ক্তিতে রাখা হয়েছিল। ফলে প্রশিক্ষণ চালু রাখলে তা দুই ক্ষেত্রেই বলবৎ হত।
২) দু’টি বিষয়কে এক পঙ্ক্তিতে রাখায় গণক নিয়োগ নিয়ে জটিলতা বেড়েছে। কিছু জেলায় পুরসভাগুলি গণক নিয়োগের নির্দেশিকা দিয়েও তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, যিনি জনগণনার কাজ করবেন, তাঁরই এনপিআরের তথ্য সংগ্রহ করার কথা। ফলে গাঢ় ধোঁয়াশার মধ্যে গণক হিসেবে শিক্ষক বা অঙ্গনওয়াড়ি-কর্মীদের নিয়োগ করা যাচ্ছে না।
৩) জনগণনা এবং এনপিআরের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে যে-তথ্য সংগ্রহ করা হত, উভয় ক্ষেত্রে সেই নমুনা প্রশ্নের অধিকাংশে যথেষ্ট মিল রয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট প্রচার ও বিজ্ঞাপন ছাড়া এই দুই পদ্ধতিকে সাধারণ মানুষের সামনে আলাদা করে তুলে ধরা মুশকিল। সে-ক্ষেত্রে কাজ শুরু করলেও গণকদের সমস্যা হতে পারে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশ আসার আগে জেলা স্তরে প্রশিক্ষণ, গণক নিয়োগ-সহ কোনও কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এটা ঠিক যে, আদমশুমারি শুরুর দিন এগিয়ে আসছে। এ বার হঠাৎ নির্দেশ এলে জনগণনা-প্রস্তুতির চাপ অকল্পনীয় ভাবে বেড়ে যাবে, সন্দেহ নেই।’’ অবশ্য অন্য এক কর্তার দাবি, নির্দেশ পেলে গোটা প্রক্রিয়া সময়ের মধ্যে সেরে ফেলতে অসুবিধা হবে না।
গোটা বিষয়টি নিয়ে সরকারি স্তরে কেউ মুখ খুলতে চাননি। মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য কোনও মন্তব্য করেননি। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও ফোনে যায়নি। উত্তর মেলেনি মেসেজেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy