জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদেরও দাবি তেমনটাই। আড়ালে তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রস্তাবিত কয়লা খনি এলাকায় (ডেউচা) তো বটেই, পাথর খাদান রয়েছে তার আশপাশে এবং লাগোয়া ঝাড়খণ্ডেও।
ফাইল চিত্র।
কয়লা খনি নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে তৎপরতা। বুধবার থেকে মুখ্যমন্ত্রী নিজে জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণ ও চাকরি দেওয়ার প্রক্রিয়ার সূচনা করেছেন।
কিন্তু, ডেউচা-পাঁচামির ছবিটা কেমন?
গোটা তল্লাটই থমথমে। বাইরের লোকজনের প্রবেশ কার্যত নিষিদ্ধ। নতুন করে খনি-বিরোধী আন্দোলন চাগিয়ে উঠছে। আন্দোলনের ভার মূলত আদিবাসী মহিলারা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বীরভূম জেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, ‘ইন্ধন’ জুগিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে তুলছে বহিরাগতেরা। বুধবার এলাকায় গিয়ে তেমনটাই জানা গিয়েছে।
যে কোনও পথ দিয়ে বাইরের লোকজন এলাকায় ঢুকলেই প্রশ্ন করা হচ্ছে, ‘কে তুকে পাঠিনছে?’ যুতসই উত্তর দিতে না পারলে ‘হেনস্থা’র ভয় আছে। এলাকার কেউ বাইরের কাউকে গ্রামে নিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন না। ‘পুলিশি সক্রিয়তা’র প্রতিবাদ আন্দোলনের জেরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এলাকার সমস্ত পাথর খাদান ও ক্রাশার। সংবাদ মাধ্যমের সামনে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। কিছু বললেও নাম প্রকাশ না-করার জন্য বারবার অনুরোধ করছেন। পরিস্থিতি এমনই যে, খনি গড়ার জন্য যাঁরা ইতিমধ্যেই জমি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন এবং চাকরির আবেদন করেছেন, তাঁদেরও একাংটা অংশকে খনি-বিরোধী আন্দোলনে শামিল হতে হচ্ছে! স্থানীয়দের একাংশ বলছেন, না বুঝে কখনও বা চাপে পড়ে তাঁরা
সঙ্গ দিচ্ছেন।
সেটা যে খুব একটা মিথ্যা নয়, তা কেন্দ্রপাহাড়ি এবং হরিণশিঙা গ্রামের দু’টি বাড়িতে গিয়েই টের পাওয়া গেল। খনি প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হওয়ার কথা এই দেওয়ানগঞ্জ, হরিণশিঙা ও নিশ্চিন্তপুর মৌজার খান পাঁচেক গ্রামেই। দু’টি পরিবারের সদস্যেরাই কার্যত হাতজোড় করে বললেন, ‘‘এখান থেকে চলে যান। তা না হলে রাতে আমাদের বাড়ি আক্রমণ হতে পারে!’’
এলাকার মানুষ জানাচ্ছেন, কয়লা খনি নিয়ে সরকারি ঘোষণা সামনে আসতেই, পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকার বাসিন্দাদের মনে জীবন-জীবিকা নিয়ে সংশয় ছিল। জোর করে জমি নেওয়া হবে না কিংবা কাউকে বঞ্চিত করা হবে না, চাকরি দেওয়া হবে— ক্রমাগত সরকারের আশ্বাসের পরেও বিরোধী স্বর একটা থেকেই গিয়েছে এলাকায়। বিশেষত আদিবাসী জনজাতির বাসিন্দাদের মধ্যে। খনি-বিরোধী সভাও হচ্ছে ইতিউতি।
যদিও নিজের অফিসে বসে হিংলো গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান, তৃণমূল নেতা শিবদাস ঘোষ বললেন, ‘‘যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের মধ্যে প্রস্তাবিত খনি এলাকার লোকজনের সংখ্যা কম। আন্দোলনের নামে বহিরাগত বা ঝাড়খণ্ডের কিছু লোকের উস্কানিও রয়েছে।’’
জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদেরও দাবি তেমনটাই। আড়ালে তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রস্তাবিত কয়লা খনি এলাকায় (ডেউচা) তো বটেই, পাথর খাদান রয়েছে তার আশপাশে এবং লাগোয়া ঝাড়খণ্ডেও। যেখান থেকে পাথর উত্তোলিত হওয়ার পরে সেগুলি ভাঙার জন্য, পরিবহণের জন্য এবং শ্রমিকের জন্য মহম্মদবাজার ব্লকের উপরে নির্ভর করতে হয় খাদান ও ক্রাশার মালিকদের। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘ডেউচায় কয়লা খনি হলে নিজেদের ব্যবসা ধাক্কা খাবে জেনে ঝাড়খণ্ড থেকে খনি-বিরোধী আন্দোলন টিকিয়ে রাখার জন্য অর্থ ও লোকবল জোগানো হচ্ছে। এ ছাড়াও আন্দোলনের নেপথ্যে রয়েছেন কিছু গণসংগঠনের লোকজন, যাঁদের ওই তল্লাটের অধিবাসীদের মধ্যে কিছুটা প্রভাব ও পরিচিতি রয়েছে।’’ কয়লা খনি বিরোধী মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টারও পড়েছে এলাকায়।
সব মিলিয়ে, এক চাপা উত্তেজনা বহাল ডেউচায়। (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy