বাকিবুর রহমান (বাঁ দিকে)-এর ছবির পরিচালক খাদ্য দফতরের কর্মী। — ফাইল চিত্র।
রেশন বণ্টন ‘দু্র্নীতি’র টাকা বিনিয়োগ করে ছবি তৈরি করেছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ‘ঘনিষ্ঠ’ বাকিবুর রহমান। এমনটাই জানিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর একটি সূত্র। সেই ছবির পরিচালক সৌরভ মুখোপাধ্যায় কাজ করেন রাজ্য খাদ্য দফতরে। এমনকি যাঁর লেখা গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘ম্যানগ্রোভ’ নামে সেই ছবি, তিনিও ছিলেন রাজ্যের খাদ্য দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিক। পরিচালক জানিয়েছেন, সেই উচ্চপদস্থ আধিকারিকের মাধ্যমেই যোগাযোগ হয়েছিল বাকিবুরের সঙ্গে। যদিও এই নিয়ে কোনও ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুগছেন না সৌরভ। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এত কিছু দেখে কি ছবি করা সম্ভব?’’
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘ম্যানগ্রোভ’। তাতেই ‘দুর্নীতি’র টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বাকিবুর, যাঁকে গ্রেফতার করেছে ইডি। বাকিবুরকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের সল্টলেকের দু’টি বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। তার পর তাঁকে গ্রেফতার করে। এ বার দেখা গেল, বাকিবুর প্রযোজিত ছবির পরিচালক এবং গল্পকার দু’জনেই খাদ্য দফতরের কর্মী। পরিচালক সৌরভ জানিয়েছেন, খাদ্য দফতরের তৎকালীন অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর পার্থসারথি গায়েনের লেখা ‘ম্যানগ্রোভ’ পড়ে খুব ভাল লেগে যায় তাঁর। ছবি তৈরি করা তাঁর শখ। এই গল্প নিয়েও ছবি করতে আগ্রহী হন। তাঁর আগের ছবির প্রযোজকের সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। বিষয়টি পার্থসারথিকে জানান। পার্থসারথি এর পর বাকিবুরের কথা বলেন। সৌরভের কথায়, ‘‘পার্থসারথি বলেন, এক জন ছবি প্রযোজনা করতে পারবেন বলেছেন। তাঁর চালকল রয়েছে।’’
সৌরভ জানিয়েছেন, প্রথমে ছবির বাজেট ছিল ৭০ লক্ষ টাকা। ছবি তৈরি করার সময় বাজেট আরও ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। মুক্তির জন্য আরও খরচ হয়েছিল। তবে ওই বিষয়টি বাকিবুরের দফতর দেখত বলে জানিয়েছেন সৌরভ। ছবির খরচ, শিল্পীদের পারিশ্রমিক, সবটাই কি নগদে হয়েছিল? সৌরভের জবাব, ‘‘নগদে হয়েছিল কি না জানি না! লাকি আজিজ ছিলেন প্রোডাকশন ম্যানেজার। তিনিই বলতে পারবেন, কত টাকা নগদে খরচ করা হয়েছে।’’ টাকার বিষয়টি কখনওই তাঁরা দেখতেন না। ছবির ‘ক্রিয়েটিভ’ দিক দেখতেন বলে জানিয়েছেন সৌরভ।
এই ছবির নায়িকা ছিলেন নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। যিনি নিজেও এখন জেলে। তাঁকে কি বাকিবুরের সুপারিশে নেওয়া হয়েছিল? সৌরভ জানিয়েছেন, বাকিবুর এ সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেন না। ক্রিয়েটিভ দলই সিদ্ধান্ত নিত। সৌরভের কথায়, ‘‘আমরা অর্পিতাকে যে নেব, প্রথমে ঠিক করিনি। অন্য এক জনকে চেয়েছিলাম।’’ তা হলে শেষ পর্যন্ত কেন অর্পিতাকে নেওয়া হল? সৌরভ জানান, প্রথমে অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়কে ছবিতে নেওয়ার কথা হয়েছিল। কিন্তু বাজেটে পোষায়নি। তাঁর সময়ের সঙ্গে বাকিদের সময় মেলেনি। সৌরভের কথায়, ‘‘নায়ক নাইজেল আকারার সঙ্গে মানানোরও বিষয় ছিল। খুঁজতে খুঁজতে অর্পিতাকে পাওয়া গেল। তিনি ওড়িশায় কাজ করেছিলেন। প্রসেনজিৎ, জিতের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হল। তিনি এলেন। বৈঠক হল। তার পরেই স্থির হল, নায়িকা তিনি।’’
ছবির আর এক অভিনেত্রী দোলন রায় আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, প্রিমিয়ারে তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থকে দেখেছিলেন। তাতে বেশ অবাক হয়েছিলেন। প্রিমিয়ারে পার্থকে দেখার কথা যদিও মানেননি পরিচালক সৌরভ। তিনি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম বলছে। তবে পার্থ ভিভিআইপি ছিলেন। তিনি কোথাও গেলে অনেক প্রোটোকল মেনে চলতে হয়। আমি প্রিমিয়ারে তাঁকে দেখতে পাইনি। সাধারণ মানুষের মতো এসে ঢুকে গিয়েছেন হয়তো। প্রেক্ষাগৃহের সিসি ক্যামেরা দেখা দরকার। আমি বলতে পারব না।’’
নিয়োগ দু্র্নীতিকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পার্থ এবং অর্পিতা জেলে। রেশন দু্র্নীতিকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলে গিয়েছেন সৌরভের ছবির প্রযোজক বাকিবুর রহমান। এ সব থেকে কী ভাবছেন ছবির পরিচালক? এই কাণ্ডে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কি তৈরি হচ্ছে? সৌরভ জানিয়েছেন, সে রকম কিছু মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘বাকিবুরের যে এত সম্পত্তি, এত বাড়ি, এখন দেখে অবাক হচ্ছি। পার্থসারথি আলাপ করিয়েছিলেন। যখন মাঝেমধ্যে খাদ্য দফতরে আসতেন, দেখা হলে সৌজন্য বিনিময় হত। এক বার একটি শপিং মলে দেখা হয়েছিল। নিয়মিত যোগাযোগ ছিল না।’’ তিনি নিশ্চিত, ছবির গল্পকার পার্থসারথিও এ সবের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তিনি যখন চাকরি করতেন, ছাতার মতোই আগলে রাখতেন তাঁদের। এখন অবসর নিয়েছেন।
পরবর্তী কালে ছবি করার বিষয়ে সৌরভ কি আর কথা বলেছিলেন বাকিবুরের সঙ্গে? সৌরভ বলেন, ‘‘বাকিবুর নিজেই জানিয়েছিলেন, ছবির বিজনেস ‘ঠিক’ নয়। আমি বিনিয়োগ করতে চাই না। খুবই ঝুঁকির।’’ তবে অতীতে বাকিবুরের প্রযোজনায় ছবি করেছেন বলে ‘নিরাপত্তাহীনতা’ নেই তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘একটা ভাল কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরে মানুষটার বিষয়ে অনেক কিছু জানা যাচ্ছে। আমি তো জানতাম না এত কিছু।’’ জ্যোতিপ্রিয়ের কাছে আসতেন কি না, তা-ও জানেন না তিনি। সৌরভ জানিয়েছেন, খাদ্য দফতরে মন্ত্রীদের বসার জায়গা আলাদা। তাঁদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। ছবি করা তাঁর শখ। সেই শখ পূরণের জন্য এত কিছু দেখাও সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা ছবি করি, এত কিছু দেখে কি করা সম্ভব? বায়োডেটা দেখে কি কাজ করা সম্ভব? এখন সব সংবাদমাধ্যম থেকে জানছি। ২০১৪-এর পর ২০২৩। ন’বছরের খবর কে রাখে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy