দালালচক্রের কারসাজিতেই জমির দলিলে মালিকের নামবদল হয়েছে বলে অভিযোগ শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী চরণ সরকারের। —নিজস্ব চিত্র।
এ যেন ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল! সুকুমার রায়ের ‘হ য ব র ল’-র মতোই বাস্তুজমির দলিলে রাতারাতি আসল মালিকের নাম ‘ভ্যানিশ’ হয়ে গিয়েছে। তাতে বসেছে, অন্য দুই ব্যক্তির নাম। মালদহের কালিয়াচকের এক প্রতিবন্ধী যুবকের দাবি, ভূমি এবং ভূমি সংস্কার দফতর (বিএলআরও)-এর বাইরে বসে থাকা দালালচক্রের সহায়তায় তাঁদের বাস্তুভিটের জমির দলিলের রেকর্ডে ঠাকুরদার নাম কেটে অন্যদের নাম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বার নাম বদলের জন্য দফতরের অফিস থেকে প্রশাসনিক কর্তাদের দোরে দোরে ঘুরলেও সুরাহা হয়নি। দালালরাজের অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এ নিয়ে তদন্তের আশ্বাসও দিয়েছেন। তবে গোটা ঘটনায় জেলা বিজেপির দাবি, তৃণমূল সরকারের আমলেও দালালরাজের রমরমা বেড়েছে।
শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী ওই যুবক, চরণ সরকার কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের রথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাগলপুর গ্রামের বাসিন্দা। প্রতিবন্ধকতার জন্য কাজকারবার করতে অপারগ। সম্বল বলতে, প্রয়াত ঠাকুরদা ঘিসু মাঝি সরকারের নামে থাকা তাঁদের বাস্তুজমি। সম্প্রতি ওই জমির দলিল দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর তৈরি করেছেন চরণ। তার পরই আজব কাণ্ড! অভিযোগ, রাতারাতি ওই জমির দলিলের রেকর্ড থেকে কাটা গিয়েছে প্রয়াত ঘিসু মাঝি সরকারের নাম। তার বদলে রনি সরকার এবং দীপ সরকারের নামে জমির মালিকানা পাল্টে গিয়েছে। তা জানতে পেরে প্রশাসনিক কর্তাদের দরজায় হত্যে দিয়েছেন চরণ। তাঁর দাবি, ‘‘আমার দাদুর নামে জমিজায়গার দলিল ছিল। তার রেকর্ডও ছিল। তবে আমি জানতে পারলাম যে, দলিলে নামবদল হয়ে গিয়েছে। বিএলআরও অফিসের বাইরে দালালেরা বসেন। তাঁরাই এ কাজ করেছেন। বিএলআরও অফিসে গেলেও কাজ হয়নি। নামবদলের জন্য এখন দালালেরা প্রচুর টাকা চাইছেন।’’
গোটা বিষয়টি কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের বিডিওর কাছে অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন চরণ। তবে তাঁর আরও দাবি, তাতে সুরাহা না হওয়ায় এ বার সরাসরি মালদহ জেলাশাসক নীতিন সিংহনিয়ার দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।
চরণের অভিযোগের পর বিষয়টি জেনে হতবাক মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহনিয়া। তবে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন তিনি। যদিও ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় রথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বাবু সরকার। তিনি বলেন, ‘‘এই প্রতিবন্ধী যুবকটি দীর্ঘ দিন ধরে এখানে বসবাস করছেন। আবাস যোজনার ঘরও পেয়েছেন। সে জমির উপরেই তাঁর ঘর। তা হলে রাতারাতি এই জমির দলিলে নাম পরিবর্তন হয় কী করে?’’
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে যে দালালরাজ চলছে, তা একপ্রকার স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র শুভময় বসু। তবে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা শাসকদলকে কালিমালিপ্ত করার জন্য কিছু সরকারি আধিকারিক এমন কাজ করছেন। বিশেষ করে বিএলআরও অফিসের আধিকারিকদের একাংশ কোথাও বর্গা কেটে নেওয়া থেকে শুরু করে জমির চরিত্র বদল করে দেওয়া বা একের জমি অন্যের নামে রেকর্ড করিয়ে দেওয়ার কাজ করছেন। এর উপযুক্ত তদন্ত হবে। যাঁরা এমন কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
এ নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতারা। বিজেপির দক্ষিণ মালদহর সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ির দাবি, ‘‘তৃণমূল সরকারের আমলে সমস্ত বিএলআরও অফিসগুলি দালালচক্রে পরিণত হয়েছে। তাই প্রতিবন্ধী যুবকের দলিলের রেকর্ড থেকে গায়েব তাঁর নাম। এটা সমস্ত জেলা জুড়ে চলছে। এঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ-সহ অভিযোগ জানিয়েও কিছু করা করা যাচ্ছে না।’’ এ ক্ষেত্রে বিজেপির সঙ্গে একমত সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘এই জেলায় দালালচক্র কাজ করছে। আর তাতে সরাসরি সহযোগিতা করছে বিএলআরও। শাসকদল মদত দিচ্ছে বলেই এ কাজ হচ্ছে। না হলে এ কাজ করা অসম্ভব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy