বিজেপি কর্মীদের দেহ নিয়ে আসা মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। রবিবার মালঞ্চতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
ঘটনার রাতেই বিজেপি নেতাদের দাবি ছিল, তাঁদের পাঁচ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে সন্দেশখালিতে। নিহতদের নামও বলে দিয়েছিলেন তাঁরা। এক জনের ‘দেহ লোপাট’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। ঘটনার পর দিন সন্দেশখালি ঘুরে বিজেপি নেতাদের সেই দাবির সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে পাওয়া গেল না। বিজেপি নেতারা বসিরহাটের হাসপাতাল থেকে দু’জনের দেহ নিয়ে কলকাতার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। নিখোঁজ হিসেবেও পাওয়া গেল এক জনেরই নাম।
খাতায়-কলমে সন্দেশখালির ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এখনও তিন। তার মধ্যে দু’জন বিজেপির— প্রদীপ মণ্ডল ও সুকান্ত মণ্ডল। অপর নিহত কায়ুম মোল্লা তৃণমূলের। নিখোঁজ এক জন— ভাঙ্গিপাড়ার দেবদাস মণ্ডল। বিজেপির দাবি, তিনি তাদের সদস্য। পুলিশের হিসেবও তিন জনের মৃত্যুর কথাই বলছে। তা হলে কীসের ভিত্তিতে পাঁচ জনের মৃত্যুর কথা বলে তড়িঘড়ি আসরে নামলে বিজেপি নেতারা? হিসেব না মেলাতে পেরে রবিবার তাঁরা হতাহতদের লোপাটের তত্ত্বই খাড়া করার চেষ্টা করেছেন। আবার তৃণমূলেরও পাল্টা দাবি, তাদের অন্তত ৬ জন নিখোঁজ।
নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিজেপির তৈরি করা ‘বিভ্রান্তি’র অভিযোগকে সামনে রেখেই সরব হচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষ দেখুন, কাদের তাঁরা নিয়ে এসেছেন! যাঁরা হিংসা-গণ্ডগোল বাধিয়ে মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করে। যে কোনও ভাবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি দেখিয়ে ক্ষমতায়নের পথে যাওয়া এদের উদ্দেশ্য।’’
মিনাখাঁ থানার সামনের রাস্তায় কাঠ সাজিয়ে নিহত বিজেপি কর্মীর সৎকারে উদ্যোগী হয়েছিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। তবে শেষ পর্যন্ত সেখানে অন্ত্যেষ্টি হয়নি। নিজস্ব চিত্র
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘শনিবার তৃণমূলের ‘অ্যাকশন’ হয়ে যাওয়ার পরে গ্রামের লোক দু’জনের দেহ ঘিরে ফেলেছিল। তাই পুলিশ তা গায়েব করতে পারেনি। আমাদের বেশ কিছু সমর্থক এখনও নিখোঁজ।’’
নিহতের সংখ্যা ঘিরে ‘বিভ্রান্তি’র পাশাপাশি ঘটনার দায় নিয়ে দু’তরফে চপানউতোরও বহাল থেকেছে এ দিন। তৃণমূলের দাবি, গুলি ছুড়েছে বিজেপি। তাদের পাল্টা দাবি, এলাকায় বিজেপি ‘লিড’ পেয়েছে বলে গণ্ডগোল বাধিয়েছিল তৃণমূলই।
কায়ুমের বাড়িতে এ দিন দুপুরে পৌঁছয় তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কদের একটি দল। সেই দলে ছিলেন তাপস রায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, সুজিত বসু, মদন মিত্রেরা। এবং সঙ্গে ছিলেন সন্দেশখালিতে শাসক দলের ব্লক সভাপতি শেখ শাজাহান। কায়ুমের বাবা লিয়াকত আলি মোল্লাকে পাশে নিয়ে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে তাপসবাবুর দাবি, প্রথম গুলি ছুড়েছিল বিজেপি। তাতেই গুলিবিদ্ধ হন কায়ুম। এর পরে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করেন বিজেপি সমর্থকেরা। তৃণমূল কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
বসিরহাট হাসপাতালে নিহতদের দেহ নিতে উপস্থিত হয়েছিলেন বিজেপির সাংসদ তথা রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসু, রাহুল সিংহেরা। দিলীপবাবুর দাবি, ওই এলাকায় তৃণমূল হেরেছে বলেই ‘সন্দেশখালির ত্রাস’ শাজাহানের নির্দেশে পরিকল্পিত ভাবে ঘটনাস্থলে যান কয়েকশো তৃণমূল সমর্থক। বিজেপির পতাকা খুলতে খুলতে তাঁরা গ্রামে ঢোকেন এবং বিজেপির কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘গোটা ঘটনায় দর্শকের ভূমিকায় ছিল পুলিশ। আর শাজাহান যে দুষ্কৃতী, তা আজও প্রমাণিত হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয়বাবুদের সঙ্গে দেখা করার সময়েও তার কোমরে রিভলভার গোঁজা ছিল!’’
তাঁর দফতরে বসে শাজাহান অবশ্য বলেছেন, ‘‘এলাকায় বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছে বিজেপি। অরাজকতা চালাচ্ছে। তারই জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা শান্তিপ্রিয়।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy