রাজনৈতিক চাপান-উতোরও অব্যাহত। প্রতীকী ছবি।
জেলায় জেলায় ‘দিদির দূত’দের দিকে ধেয়ে আসছে প্রশ্নবাণ। শুধু পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ নয়, তাঁদের শুনতে হচ্ছে রাজ্যে চাকরি কোথায়, দলের লোকের বিরুদ্ধে নালিশ, এমন নানা কিছু। তাতে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও অব্যাহত।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হচ্ছে না কেন, শনিবার ‘দিদির দূত’ রাজ্য আদিবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বুলু চিক বরাইকের কাছে প্রশ্ন করেন স্নাতক এক যুবক। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া নাওয়াপাড়ার মাঠে। সেখানে ছিলেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি রাজেশ লাকড়াও। রাকেশ রায় নামে ওই যুবকের প্রশ্ন শুনে প্রতিমন্ত্রী কিছু বলতে যান। রাজেশ লাকড়া দাবি করেন, “কিছু নিয়োগ হচ্ছে, কিছু হচ্ছে না। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাঙ্ক, রেল সব বিক্রি করে দিচ্ছে।” পরে, রাকেশ বলেন, “আমি স্নাতক, তবু চাকরি পাচ্ছি না। নিয়োগ-পরীক্ষা হচ্ছে না। তাই প্রশ্ন করেছিলাম। চাকরি পাইনি, চাষ করছি।” বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর টিপ্পনী, ‘‘নিয়োগে এত দুর্নীতি করেছে তৃণমূল, সরকারি চাকরি সাধারণ মানুষ পাবেন কোথায়?’’
দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরে এ দিন ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে গিয়ে পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যদের নামে নালিশ শোনেন ‘দিদির দূত’ জেলা সভাধিপতি লিপিকা রায়। মালদহের অমৃতিতে আবার লক্ষ্মীর ভান্ডার, দুয়ারে সরকারে আবেদন করেও স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড না মেলার অভিযোগ শুনেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সী।
উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে বিশপুর শিবমন্দিরে পুজো দিয়ে এ দিন সকালে শুরু হয়েছিল ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি। তবে মন্দিরের বাইরে বেরোতেই একের পরে এক প্রশ্নবাণ ধেয়ে আসে তৃণমূল নেতাদের দিকে। মূলত গ্রামের বেহাল পথঘাট নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন বাসিন্দারা। ‘দিদির দূত’ হিসাবে স্থানীয় বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল কেন গরহাজির, ওঠে সে প্রশ্নও। কর্মসূচিতে হাজির বসিরহাট উত্তরের বিধায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, “বিধায়ক দলের নির্দেশেই ভবানীপুর ১ পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়েছেন। আমি এখানে এসেছি।’’ ‘দিদির দূত’ হিসেবে পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন বল্লভপুর পঞ্চায়েতের বক্তারনগরে গিয়ে বিভিন্ন কাজ নিয়ে প্রশ্ন ও দাবির মুখে পড়েছেন। নদিয়ার রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের দেবগ্রামে গিয়ে রাজ্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সুদীপ রাহা গাংনাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এলাকাবাসী স্বাস্থ্যকেন্দ্র রোজ খোলার দাবি জানান। না হলে তাঁদের ১৮ কিলোমিটার দূরে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ছুটতে হয়। সুদীপের আশ্বাস, ‘‘প্রতিদিন যাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা থাকে, সেই চেষ্টা করব।’’
মুর্শিদাবাদের ভরতপুর ২ ব্লকে আবার এই কর্মসূচিতে তৃণমূল নেতৃত্বকে শুনতে হয়েছে আবাসে দুর্নীতির নালিশ। স্থানীয়দের অনেকেই বিধায়ক ও দলের জেলা সভাপতির হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে মাটির বাড়ির হাল দেখিয়েছেন। দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি শাওনি সিংহ রায় বলছেন, “আবাসে নাম বাদ দেওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ রয়েছে। এ নিয়ে আমরা জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেছি।”
বিজেপি অবশ্য এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এটাই তো হওয়া উচিত। মানুষের প্রতি বঞ্চনা হয়েছে, লুট হয়েছে। তাই আজ ভয় কাটিয়ে রাস্তায় নেমে চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করছেন মানুষ। এটাই পরিবর্তনের ইঙ্গিত।’’ দুর্গাপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘উন্নয়ন কুন্তলের ফ্ল্যাটে পৌঁছেছে। তৃণমূলের নেতাদের বাড়িতে পৌঁছেছে। আর কোথাও পৌঁছয়নি। তাই ‘দিদির দূত’ হল মানুষকে বোকা বানানোর কৌশল।’’ নদিয়ার শান্তিপুরে সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের আবার কটাক্ষ, ‘‘ভূত যাচ্ছে আর ভূত তাড়াচ্ছে লোকজন।’’
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পাল্টা বলছেন, ‘‘যা বিক্ষোভ বলে বিরোধীরা লাফাচ্ছেন, তা আসলে মানুষের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা। কাজ হয়েছে বলে আস্থা, প্রত্যাশা বেড়েছে। তা শুনতেই মমতাদির দূত পথে বেরনোয় হতাশা গ্রাস করেছে বিরোধীদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy