ফাইল চিত্র।
এক ফোনেই মুশকিল আসান কারও। কেউ আবার বিধায়ককে সামনে পেয়ে সমস্যার সুরাহা করেছেন। তবে অনেকেই বলছেন, নালিশটুকু শুধু জানিয়েছি। সমস্যা সেই তিমিরে।
লোকসভা ভোটে ধাক্কার পরে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের হাত ধরেছে তৃণমূল। এক মাস হতে চলল, চালু হয়েছে তৃণমূলের নয়া জনসংযোগ ‘দিদিকে বলো’। উত্তর থেকে দক্ষিণ কর্মসূচির বিস্তর প্রচার। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে ফোনে কিংবা ওয়েবসাইটে নালিশ জানানোর সুযোগের কথা জেনে গোড়ায় হাসি ফুটেছিল আমজনতারও। তার পর?
বীরভূমের পাড়ুই থানার নিতুরি গ্রামের শেখ নজু যেমন ‘দিদিকে বলো’র টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে আবাস যোজনার টাকা পেয়েছেন, পাড়ুইয়েরই ভোলাগড়িয়ার শেখ বাদরও মায়ের বার্ধক্যভাতার ব্যবস্থা করতে পেরেছেন। উত্তরপাড়া মাখলার বাসিন্দা পেশায় ঠিকাদারি সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষী সুশান্ত ঘোষও বকেয়া বেতন পেয়েছেন, ‘দিদিকে বলো’য় জানিয়েই।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় আবার বেহাল রাস্তা নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে সুরাহা হয়েছে। পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওই রাস্তা নিয়ে অভিযোগ জানাতেই পুরপ্রধান নন্দকুমার মিশ্রের কাছে ফোন আসে। পুরপ্রধান বলছেন, ‘‘ভীমতলা থেকে মুড়িপুকুর হাট পর্যন্ত রাস্তার বিষয়টি দেখতে ‘দিদিকে বলো’-র অফিস থেকে ফোন আসে। ঠিকাদারকে ডেকে দ্রুত কাজ শুরু করতে বলি।’’
‘দিদিকে বলো’র দু’টি দিক। এক দিকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ফোনে বা ওয়েবসাইটে দরবার। অন্য দিকটি হল কর্মসূচির প্রচারে তৃণমূল নেতাদের, বিশেষ করে বিধায়কদের এলাকায় চরকি পাক কাটা। দ্বিতীয় ধাপে সাড়া পড়েছে কিছুটা বেশি। পাহাড় থেকে জঙ্গলমহল, তৃণমূল বিধায়কেরা জল-কাদা ভেঙে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন, অভাব-অভিযোগ শুনছেন। বিক্ষোভের মুখেও পড়ছেন কেউ কেউ। আর তাঁদের নালিশ জানিয়েই সমস্যা মিটছে অনেকের। মুখ্যমন্ত্রীও জেলা সফরে গিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন গাঁ-গঞ্জে।
পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের মৌসুমি মণ্ডল যেমন শ্বশুরবাড়িতে স্টোভ ফেটে প্রায় ৬০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিলেন। অর্থাভাবে চিকিৎসায় সমস্যা হচ্ছিল। বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে এলাকায় গিয়ে সমস্যা শোনেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৌসুমির নিখরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকার। জলপাইগুড়ির এক প্রসূতির পরিজনেরাও ‘দিদিকে বলো’য় ফোন করে ১৫ মিনিটে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে পেরেছেন।
কিন্তু ফালাকাটা, মাদারিহাটে কর্মসূচি শুরুই হয়নি এখনও। আলিপুরদুয়ার, কুমারগ্রামের বহু বাসিন্দা ফোনে পানীয় জল, কালভার্টের সমস্যা জানিয়েও সুরাহা করতে পারেননি। কোচবিহারে তোর্সার সেতুর আশ্বাস মেলেনি। জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি শহরেও সে ভাবে প্রচার নেই। অনেকের অভিজ্ঞতা, হয় ফোন ঢুকছে না বা রিং হলেও কেউ ধরছে না। উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের সুশান্ত ঘোষ মজুমদার, হিঙ্গলগঞ্জের কাজল মুখোপাধ্যায়, স্বরূপনগরের ঋজু দাসরাও বলছেন, ‘‘বারবার ফোন করেছি। হয় ব্যস্ত, নয় রিং বেজে গিয়েছে।’’
ঘাটালের মনোহরপুরের শপথ চক্রবর্তী কিন্তু প্রথমে ফোনে নাম নথিভুক্তির দু’দিনের মাথায় ফিরতি ফোন পেয়েছেন। শপথ বলছিলেন, ‘‘ওই ফোনে সমস্যা জানতে চাওয়া হয়েছিল। জানিয়েছি।’’ কাজ এখনও হয়নি। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির খয়রামারির তৃণমূলের উপপ্রধান মনোজ হালদারের অভিজ্ঞতাও ভাল নয়। জুলাইয়ের শেষে ফোনে কাটমানির অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এখনও সুরাহা হয়নি। জানা গিয়েছে, ফোনে বা ওয়েবসাইটে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান (কোনও দলের কর্মী বা সমর্থক কি না) জানাতে হচ্ছে। তাই ভয়ে পিছিয়ে আসছেন অনেকে।
একটা কথা অবশ্য তৃণমূলের অন্দরেরই একাংশ মানছেন, লোকসভায় ধাক্কার পরে সহায়ক হয়েছে এই কর্মসূচি। ‘দিদিকে বলো’র ফলে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া জনসংযোগ কিছুটা হলেও চাঙ্গা হয়েছে। ভোট মিটলে যে নেতাদের আর দেখাই যেত না, তাঁরা মাটি কামড়ে পড়ে থাকছেন। কর্মসূচি ঠিকঠাক চলছে কি না, সে নজরদারি চালাচ্ছে প্রশান্তের সংস্থার দলও। ‘ভুল’ করলে ধমকও খেতে হচ্ছে। যেমন ভর্ৎসিত হয়েছেন গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো। জঙ্গলমহলের এক বিধায়ক মানছেন, ‘‘প্রায় রোজই এলাকায় যেতে হচ্ছে। ছবি তুলে পাঠাতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে দিতে হচ্ছে লাইভ। গতিবিধির সব খবরই তো রাখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy