Advertisement
E-Paper

ঝঞ্ঝার দাপটেই কি উধাও কালবৈশাখী

গরমে তাপের সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতার (বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ) বাড়াবাড়ি দক্ষিণবঙ্গবাসীর চেনা। সেই আর্দ্রতার ফলেই বিকেলের দিকে কালো মেঘ তৈরি হয়ে ঝড়বৃষ্টি হত।

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৪৪
Share
Save

পশ্চিমী ঝঞ্ঝার হানাদারিতে শীতের দফারফা হতে দেখেছে বাঙালি। এ বার তীব্র গরম এবং কালবৈশাখীর আকালের পিছনেও কি দায়ী সেই পশ্চিমের ‘অতিথি’? প্রশ্নটি ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে আবহবিদ মহলে। শুরু হয়েছে চর্চাও।

এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে না পৌঁছলেও অনেকেই বলছেন, গরমের চেনা কালবৈশাখী যে গোটা এপ্রিলে মিলল না, তার পিছনে অন্যতম কারণ পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসা শুকনো এবং তীব্র গরম হাওয়া। যার সঙ্গে পশ্চিমী ঝঞ্জার সম্পর্ক আছে বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু এই কারণ ব্যাখ্যা করেই থেমে থাকছেন না আবহবিজ্ঞানীরা। গাঙ্গেয় বঙ্গবাসীর যাবতীয় আশায় কার্যত জল ঢেলে বলছেন, এপ্রিল তো বটেই, মে মাসেও কবে ঝড়বৃষ্টি মিলবে তা এখনও অনিশ্চিত।

গরমে তাপের সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতার (বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ) বাড়াবাড়ি দক্ষিণবঙ্গবাসীর চেনা। সেই আর্দ্রতার ফলেই বিকেলের দিকে কালো মেঘ তৈরি হয়ে ঝড়বৃষ্টি হত। আবহবিজ্ঞানের ভাষায়, কালবৈশাখীর কিছু নির্দিষ্ট চরিত্র থাকলেও আমজনতা গরমের ঝড়বৃষ্টিকে ‘কালবৈশাখী’ বলেই চেনে। কিন্তু এ বার সেই চেনা ছবিটাই বদলে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সোমনাথ দত্ত বলছেন, ‘‘গরমকালে দক্ষিণবঙ্গে জলীয় বাষ্পের জোগান দেয় বঙ্গোপসাগরের বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত বা উচ্চচাপ বলয়। এ বার সেই উচ্চচাপ বলয় জমাট বাঁধতে পারছে না। তার ফলেই বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে আর্দ্রতা অনেক কম, ঝড়বৃষ্টির মেঘ তৈরি হতে পারছে না। উল্টে শুকনো, গরম বাতাস ঢুকছে।’’

কেন বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয় জমাট বাঁধতে পারছে না, সে ব্যাপারে চটজলদি কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের শীর্ষ কর্তা। তবে তাঁর ইঙ্গিত, ক্রান্তীয় অঞ্চলের বায়ুর যে ঘূর্ণন, তার প্রভাবের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম থেকে বয়ে আসা গরম বাতাসের সম্পর্ক আছে। প্রবীণ এই আবহবিদের কথায়, ‘‘উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে শীতকালে দক্ষিণবঙ্গে বাতাস ঢোকে। কিন্তু এ বার গ্রীষ্মেও তা ঢুকছে।’’

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ অবশ্য কার্যত সরাসরি ঝঞ্ঝাকেই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন। তাঁর ব্যাখ্যা, এ বার একের পর এক শক্তিশালী ঝঞ্ঝা ঢুকছে। তার প্রভাবেই উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসা বায়ু শক্তিশালী হয়েছে। তার ধাক্কায় বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয় উপকূলের ধারেকাছেও আসতে পারছে না। উপকূলের কাছে উচ্চচাপ বলয় না এলে জলীয় বাষ্প ঢুকবে না, কালবৈশাখীও মিলবে না। সার্বিক ভাবে যে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু বদলের কথা বলা হচ্ছে তার সঙ্গে ঝঞ্ঝার চরিত্র বদলের সম্পর্ক থাকতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। গোকুলচন্দ্রের কথায়, ‘‘এত বছরের অভিজ্ঞতায়, দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে এমন লম্বা তাপপ্রবাহ এবং শুকনো গরম তো দেখিনি!’’

প্রসঙ্গত, এই শুকনো, গরম বাতাসের দাপটেই বৃহস্পতিবারও দক্ষিণবঙ্গ, গৌড়বঙ্গে তাপপ্রবাহ হয়। কিছু এলাকায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়েছে। কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ দিন উঠেছে ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা স্বাভাবিকের থেকে ৬ ডিগ্রি বেশি। একই তাপমাত্রা ছিল সল্টলেকেও। দমদম সামান্য পিছিয়ে ৪১ ডিগ্রিতে থিতু হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর কার্যত ছুঁয়ে ফেলেছে পুরুলিয়াকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুন্ডার তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। পিছিয়ে নেই পশ্চিম বর্ধমান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের এলাকাগুলিও। গৌড়বঙ্গের মালদহ এবং বালুরঘাটেও এ দিন তাপপ্রবাহের দাপট ছিল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Weather News Weather Update West Bengal Kolkata

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}