সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
অর্ধেক গ্লাস জলকে কী ভাবে দেখা যায়? মনোবিদের সামনে যদি আপনি বলেন, অর্ধেক খালি তা হলে আপনাকে বলা হবে ‘নৈরাশ্যবাদী’। যদি বলেন, অর্ধেক ভর্তি তা হলে আপনি আশাবাদী। ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনে সিপিএমের শোচনীয় পরাজয়ের পরেও দলের নেতাদের একাংশ যে ভাবে আশার সঞ্চার ঘটাতে চাইছেন, তা দেখে কেউ কেউ বলছেন, এ ভাবেও ভেবে ফেলা যায়!
ধূপগুড়িতে সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায় পেয়েছেন ১৩,৭৫৮ ভোট। তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায় পেয়েছেন ৯৭,৬১৩ ভোট। তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের ব্যবধান ৮৩,৮৫৫ ভোটের। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায় পেয়েছেন ৯৩,৩০৪ ভোট। সবমিলিয়ে কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী ভোট পেয়েছে টেনেটুনে সাড়ে ৬ শতাংশ। কিন্তু সিপিএমের ‘আশাবাদী’ নেতারা অন্য ভাবে দেখতে চাইছেন বিষয়টিকে। তাঁদের বক্তব্য, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে এই ধূপগুড়িতে সিপিএম পেয়েছিল ১৩,১০৭ ভোট। এ বারের উপনির্বাচনে ১৩,৭৫৮ ভোট। অর্থাৎ আড়াই বছরের মধ্যে সিপিএম ৬৫১টি ভোট বাড়াতে পেরেছে।
শুধু এতেই থেমে থাকছেন না সিপিএম নেতারা। দলের নেতাদের একটি অংশ এ-ও বলছেন, ২০২১ সালের তুলনায় বিজেপির ভোট কমেছে প্রায় ১০ হাজার। তৃণমূলের ভোট কমেছে প্রায় ৩,০০০। তখন তাঁদের ভোট বেড়েছে। অল্প হলেও সত্যি!
তবে এ সবই প্রকাশ্যেও গাওনা। সিপিএম নেতাদের বৃহদাংশ এই ফলাফলে হতাশ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য কবীর সুমনের গানের লাইন উদ্ধৃত করে বলেন, ‘‘হিসাব মেলানো ভার, আয় ব্যয় একাকার!’’ তাঁর এমনও বক্তব্য যে, ‘‘উত্তরবঙ্গে তৃণমূল-বিজেপির বাইনারি ভেঙে ফেলার মতো জোর আমাদের নেই। আাগামী দিনে হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছি না।’’ সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মেনে নিয়েছেন সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য। শুক্রবার ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আরও বেশি করে সংগঠনে নজর দিতে হবে।’’
উত্তরবঙ্গে একটা সময়ে সিপিএমের যথেষ্ট শক্তি ছিল। এমনকি, উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার, দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডির মতো আসনে শরিকদল সিপিআই এবং আরএসপির-ও সাংগঠনিক শক্তি ছিল। কিন্তু সে সব এখন অতীত। রক্তক্ষরণ হতে হতে কার্যত রক্তশূন্যতার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে লালঝান্ডা। সাত বছর আগে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও সিপিএম ধূপগুড়িতে ভোট পেয়েছিল ৩৪ শতাংশের মতো। সেটাই এই উপনির্বাচনে এসে দাঁড়িয়েছে ৬.৫২ শতাংশে। যদিও সিপিএমের আশাবাদীরা দেখাতে চাইছেন, ২০২১ সালে তাঁদের ভোট ছিল ৫.৭৫ শতাংশ। সেটা বেড়েছে। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে রাজনীতি করা অনেকেই সিপিএমকে মনে করিয়ে দিতে চাইছেন, ধূপগুড়ির গ্রামীণ এলাকাগুলিতে দু’মাস আগের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএমের ভোট ছিল ১২ শতাংশ। দু’মাসে সেটা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।
ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়েছিল সিপিএম। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরঞ্জন চৌধুরী এবং সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম যৌথ সভাও করেছিলেন গত ১ সেপ্টেম্বর। শুক্রবার ফলঘোষণার পর অধীর বলেছেন, ‘‘ওখানে আমরা জিততে নয়, লড়তে গিয়েছিলাম।’’ বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ আরও বলেছেন, ‘‘ওখানে বাম এবং কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকট। সাগরদিঘিতে যেমন আমরা বলেছিলাম, জেতার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমন কিন্তু এখানে বলা হয়নি।’’
কিন্তু তাতে কী? সিপিএমের অনেকেই ৬৫১টি ভোটের বৃদ্ধিকেই দিনবদলের সঙ্কেত হিসাবে দেখতে চাইছেন। দেখাতেও চাইছেন। ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরে হিসেবনিকেশ নিয়ে বসেন সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বই। নিঃসন্দেহে সিপিএমও বসবে। লোকসভা ভোটের আগে দলের অন্দরে ধুপগুড়ির ফল নিয়ে কাটাছেঁড়া করার সময়েও কি এতটাই ‘আশাবাদী’ থাকবেন রাজ্যের শীর্ষনেতারা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy