—ফাইল চিত্র।
অষ্টমীর রাতে অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ছবি টুইট করে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কিন্তু সে বিষয়ে তাঁর কোনও হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। টুইটারে রাজ্যপালের দেওয়া ওই ছবিগুলিতে পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটের ঘরের বিছানায় শয্যাশায়ী বুদ্ধদেবকে দেখা যাচ্ছে। সেই ছবিতে স্পষ্ট যে, তিনি যথেষ্ট অসুস্থ। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে রাজ্যপালও তাঁর অসুস্থতার কথা বলেছিলেন। পাশাপাশিই, বুদ্ধদেবকে ‘জীবন্ত কিংবদন্তি’ বলে অভিহিত করে রাজ্যপাল দাবি করেছিলেন, রাজ্যের প্রাক্তন শাসকের সঙ্গে তাঁর রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
সেদিন রাজভবনে ফিরে এসে রাতেই বুদ্ধদেবের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের একাধিক ছবি তাঁর টুইটার হ্যান্ডলে প্রকাশ করে দেন রাজ্যপাল। যে ছবিগুলিতে বুদ্ধদেবের অসুস্থতাজনিত অসহায়তা এবং দুর্বলতা স্পষ্ট। তার পর থেকেই রাজ্যপাল সিপিএম এবং নেটাগরিকদের একাংশের প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। সিপিএম সরাসরি রাজ্যপালের ওই কাজকে ‘কুরুচিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছে। নেটাগরিকরাও রাজ্যপালের ‘রুচি এবং ভদ্রতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার পরেও অবশ্য রাজ্যপাল তাঁর টুইটার হ্যান্ডল থেকে ছবিগুলি সরানোর প্রয়োজন বোধ করেননি। সোমবারেও তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে ছবিগুলি যথাবিহিত দেখা গিয়েছে।
শনিবার, অষ্টমীর সন্ধ্যায় রাজ্যপাল সস্ত্রীক দেখা করতে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেবের সঙ্গে। তাঁর সেই সফর পূর্বনির্ধারিতই ছিল। রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, তিনি ভট্টাচার্য পরিবারকে পুজোর শুভেচ্ছা জানাতে এবং বুদ্ধদেবের শারীরিক কুশল কামনা করতে যাচ্ছেন। এর আগেও রাজ্যপাল একবার অসুস্থ বুদ্ধদেবকে দেখতে গিয়েছিলেন। সেবারও তাঁর তরফে সেই সাক্ষাতের ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু গত বারের ছবিতে বুদ্ধদেব তাঁর বিছানায় উঠে বসে রাজ্যপালের নিয়ে যাওয়া পুষ্পস্তবক গ্রহণ করতে পেরেছিলেন। এ বার তিনি তা-ও পারেননি। তাঁকে বিছানায় অসহায় ভাবে শুয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিছানার সামনে দু’টি চেয়ারে মুখোমুখি বসে আছেন রাজ্যপাল এবং তাঁর স্ত্রী। একটি ছবিতে রয়েছেন বুদ্ধদেবের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যও। অন্য একটি ছবিতে রাজ্যপালের হাতে হলদে গোলাপের তোড়া। কোনও ছবিতেই বুদ্ধদেবকে উঠে বিছানায় বসতেও দেখা যায়নি। ছবিগুলিতে পরিষ্কার, বুদ্ধদেবের শারীরিক অবস্থা গতবারের চেয়ে তো ভাল হয়ইনি। বরং নাকে অক্সিজেনের নল লাগানো অবস্থায় যে ভাবে তিনি শুয়ে রয়েছেন, তা তাঁর অসুস্থতা সম্পর্কে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তোলার পক্ষে যথেষ্ট।
আরও পড়ুন: অসুস্থ বুদ্ধদেবকে দেখতে পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে হাজির সস্ত্রীক রাজ্যপাল ধনখড়
আরও পড়ুন: অতিমারির ছায়া পড়ল পুজোর বই বিপণিতেও
প্রত্যাশিত ভাবেই সিপিএম ওই ছবিগুলি জনসমক্ষে প্রকাশ করার কঠোর সমালোচনা করেছে। দলের তরফে টুইট করে বলা হয়েছে, ‘কমরেড ভট্টাচার্যের আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিতি এবং খ্যাতি রয়েছে। তিনি বহু দশক ধরে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে আমাদের রাজ্যের সেবা করেছেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁর ছবি তোলা এবং সেগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা দুনিয়াজুড়ে সিপিএমের শুভানুধ্যায়ী এবং হিতৈষীই শুধু নয়, সাধারণ মানুষকেও গভীর ভাবে আহত করেছে। ওই ছবিগুলি তুলে নেওয়া হলে আমরা খুশি হব’। সিপিএমের ওই টুইটে রাজ্যপালকেও ‘ট্যাগ’ করা হয়েছিল। কিন্তু তার পর বহু সময় কেটে গেলেও রাজ্যপালের তরফে কোনও হেলদোল দেখা যায়নি। বরং তিনি এ দিন টুইট করে রাজ্যবাসীকে তাঁদের ‘প্রথম সেবক’ হিসেবে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। যা থেকে স্পষ্ট যে, রাজ্যপাল সিপিএমের কোনও অনুরোধ-উপরোধ বা সমালোচনার ধার ধারছেন না।
শুধু সিপিএমই নয়, রাজ্যপালের টুইটার হ্যান্ডলে সাধারণ নেটাগরিকরাও ওই বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। যেমন একজন লিখেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় নজর কাড়তে রাজ্যপাল ধনখড় এই সস্তা প্রচারের রাস্তা নিয়েছেন। তাঁর এই ব্যবহার অত্যন্ত নিন্দনীয়। অটলবিহারী বাজপেয়ী অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী থাকাকালীন কি তিনি তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন এবং তার পর তাঁর সেইসব দুর্বল মুহূর্তের ছবি সর্বসমক্ষে প্রকাশ করেছিলেন’?
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে ধনখড়ের যোগদানের পর থেকেই তিনি রাজ্যের বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশে অকৃপণ থেকেছেন। অষ্টমীর সন্ধ্যায় বুদ্ধদেবের বাড়িতে যাওয়ার আগে দুপুরে তিনি বেলুড় মঠেও গিয়েছিলেন। সেখানকার ছবিও তিনি টুইটারে প্রকাশ করেছিলেন। স্বভাবতই তা নিয়ে তাঁর কোনও সমালোচনা হচ্ছে না। কিন্তু অসুস্থ বুদ্ধদেবের ছবি প্রকাশ যে ‘রুচিবিগর্হিত’, তা তাঁকে সিপিএম এবং আমজনতা মনে করিয়ে দিতে ভোলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy