এ ভাবেই যাত্রা। নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্য শিকেয়। ছবি: দিলীপ নস্কর।
ছিল অটো। হয়ে গেল ডিলাক্স-অটো। যাত্রীর আসন হয়ে গেল চার থেকে এক লাফে ১৮। বসে জনা-বারো। দাঁড়িয়ে আরও ছয়। যদি কেউ চড়ে বসে অটোর মাথার কেরিয়ারে, তাহলে আরও দু-এক জন এঁটে যায়।
পরিবহণ আইনকে এ ভাবেই বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার অটোচালকরা। গ্রিল কারখানায় ভোল বদলাচ্ছে কলকাতার বাতিল-হওয়া অটো। বাড়ানো হচ্ছে চালকের আসনের দু’পাশে বসার আসন। পিছনের আসনের পিঠোপিঠি, রাস্তার দিকে মুখ করে লাগানো হচ্ছে আর একটি আসন। পিছনে, দু’পাশে দাঁড়ানোর জন্য জায়গাও রাখা হচ্ছে।
উস্তি, মগরাহাট, মন্দিরবাজার, বারুইপুর, ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে এখন এই ‘ডিলাক্স-অটো’র রমরমা। বিষয়টি পরিবহণ দফতরের নজরে নেই, এমনটা নয়। তা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? জেলা পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “ওই অটো চলাচল বেআইনি তা আমরা জানি। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় মানবিক কারণেই ওই অটো চলাচল বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”
জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “বছর খানেক আগে ওই অটো ধরার অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ ওই অভিযানের প্রতিবাদ শুরু করায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে আসি। নির্বাচনের পর প্রশাসনে সঙ্গে ফের আলোচনা করা হবে।” তাঁর আন্দাজ, এখন গোটা জেলায় প্রায় ৭০০ ডিলাক্স-অটো চলছে।
কলকাতা থেকে কয়েক বছর আগেই নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে কাটা-তেলে চলা অটো। সেই জায়গায় এসেছে এলপিজি চালিত অটো। বাতিল অটো কম দামে কিনে নিচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার অটো-চালক এবং অটো-ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ইঞ্জিনের অবস্থা কিছুটা ভাল এমন অটোই হাজার কুড়ি টাকায় কেনা হচ্ছে। তারপর সেই অটো যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন গ্রিল কারখানায়। সাধারণ অটোতে যাত্রী তোলা হয় চার জন। কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে অটোতে যাতে বেশি যাত্রী উঠতে পারেন, তার জন্য গ্রিলের কারখানায় তার চেহারা বদলানো হচ্ছে। ইঞ্জিনটি রেখে মিস্ত্রিদের কেরামতিতে বদলানো হচ্ছে অটোর লোহার কাঠামো। ভিতরে এবং পিছন দিকে যাত্রী বসার বাড়তি আয়োজন করা হচ্ছে। তার পরে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসছে রং করা ‘ডিলাক্স অটো’।
উস্তি-ডায়মন্ড হারবার রুটে ‘ডিলাক্স অটো’ চালান সইদুল ঢালি। তিনিই মালিক। বছর তিনেক আগে মগরাহাট এলাকার একটি গ্রিল কারখানা থেকে ৭০ হাজার টাকায় গাড়িটি কিনেছিলেন। নিজের পাশে চার জন, ভিতরে চার জন, তাঁদের পিছনের দিকে মুখ করে আরও চার জনের বসার ব্যবস্থা তো রয়েছেই। দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেন আরও কয়েক জন। তাদের মধ্যে স্কুল পড়ুয়ারাও রয়েছেন। এ ভাবে যাতায়াতে যে ঝুঁকি রয়েছে, অস্বীকার করেন না সইদুল। তাঁর কথায়, “তিন বছরে টাকা অনেকটাই উঠে এসেছে। জানি, ঝুঁকি নিয়ে চালাতে হয়। কিন্তু এখানে যানবাহনের যা অবস্থা তাতে মানুষ এই অটোর উপরেই ভরসা করেন।” ভাড়া পাঁচ টাকা থেকে ২০ টাকা। তাই পকেটেও টান পড়ে না।
প্রায় একই বক্তব্য বারুইপুর এলাকার এক ‘ডিলাক্স-অটো’ চালকেরও। তিনি বলেন, “বছর খানেক আগে এলাকার একটি গ্রিল কারখানা থেকে অটোটি কিনেছি। অটো চালিয়েই সংসার চালাই। বাসের সংখ্যা যথেষ্ট নয়। তাই মানুষ আমাদের গাড়িতে ওঠেন।’’
সাধারণ যাত্রীরা অবশ্য ‘ডিলাক্স-অটো’র রমরমার জন্য দায়ী করেছেন সরকারি-বেসরকারি বাস-মিনিবাসের অভাবকে। তাঁদের মতে, এই জেলার নানা প্রান্তে যাতায়াত সহজ নয়। মূল ভরসা অটো এবং ট্রেকার। তাই ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয় বাসিন্দাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy