মনোনয়ন জমা দিয়ে ফেরার পথে সস্ত্রীক তারকা প্রার্থী। —নিজস্ব চিত্র।
ফাঁকায় ফাঁকায় কাজ সেরে দ্রুত বেরিয়ে যাবেন। সে জন্য পৌনে ১০টার মধ্যেই শ্রীরামপুরের বিজেপি প্রার্থী বাপ্পি লাহিড়ী মনোনয়ন জমা দিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন চুঁচুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) আয়েশা রানির অফিসে। কিন্তু ১০টায় অফিস শুরু। তখনও আসেননি আধিকারিক। কর্মীরাও পৌঁছননি। দোতলা অফিসের নীচের ঘরে সপার্ষদ গিয়ে বসেন বাপ্পি। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী চিত্রাণী।
কিছু ক্ষণের মধ্যেই কর্মীরা আসতে শুরু করেন একে একে। বাপ্পিবাবুকে দেখতে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। হাসিমুখে অটোগ্রাফ বিলোতে থাকেন তারকা প্রার্থী। বাপ্পির সঙ্গে স্ত্রী ছাড়াও এ দিন এসেছিলেন ছেলে বাপ্পা, মেয়ে রেমা বনশল, জামাই গোবিন্দ বনশল, পুত্রবধূ তনু লাহিড়ী, ছেলের ঘরের নাতি স্বস্তিক। চিত্রাণী ছাড়া অবশ্য বাকিরা অফিসের বাইরে গাড়িতেই অপেক্ষা করছিলেন।
১০টা নাগাদ অফিসে ঢোকার আগে আয়েশা খোঁজখবর করে যান বাপ্পির। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মোতাবেক, বেলা ১১টা থেকে ৩টে মনোনয়ন জমা নেওয়ার কথা। কাজেই বাপ্পিকে ঘণ্টাখানেক আরও অপেক্ষা করতেই হত। তত ক্ষণ বেশ খোসমেজাজেই কাটিয়ে দেন বাপ্পি। গল্পগুজব করছিলেন স্ত্রী, দলের কর্মীদের সঙ্গে। একবার গিয়েছিলেন অফিসের পিছন দিকে। ফিরে এসে স্ত্রীকে বললেন, “যাও, কেমন সুন্দর জায়গা একবার দেখে এসো। চমৎকার আমবাগান। দেখলেও চোখ জুড়িয়ে যায়। মুম্বইতে তো এ সব দেখাই যায় না।” দলের কর্মীরা একবার চা-ঠান্ডা পানীয়ের জন্য সাধাসাধি করেছিলেন। কিন্তু সে সব কিছু নেননি বাপ্পি-চিত্রাণী।
মনোনয়ন দিলেন আফরিন আলিও। —নিজস্ব চিত্র।
বেলা ১১টার কিছু ক্ষণ আগে কাঠের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় অতিরিক্ত জেলাশাসকের ঘরে পৌঁছন সস্ত্রীক বাপ্পি। কিন্তু সিঁড়ি ভাঙতে বেশ কষ্ট হয়। পুরনো দিনের বাড়ির বড় বড় কাঠের সিঁড়ি হলে যেমন হয় আর কি। তবু মুখের হাসিটুকু অম্লান রেখে বাপ্পি বলেন, “বৃটিশ আমলের বাড়ি। এ সব কাঠামো আর এখন কোথায়। কষ্ট হচ্ছে ঠিকই। তবে ও ঠিক আছে।”
মনোনয়ন জমা দিয়ে বেরোনোর মুখে তত ক্ষণে দফতরের সামনে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এসে পড়েছেন শ্রীরামপুরেরই তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাপ্পিবাবু তখন ভিতরে, কল্যাণবাবু গুন গুন করে গাইছিলেন, “বাপি যা যা যা...।” সেই সুরে-তালে খানিক কোমর দুলিয়েও নিলেন। পরে যখন মনোনয়ন জমা দিতে ঢুকছেন অফিসে, বাপ্পিবাবু তখন গাড়িতে বসে। দু’জনের চোখাচুখি হল। হাতও নাড়লেন একে অন্যকে দেখে। মুখে হালকা হাসি। এ দিন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ের চাপে অফিস থেকে বেরোতে সামান্য অসুবিধা হয় বাপ্পি লাহিড়ীর। পরে পুলিশ গিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে তাঁকে বের করে আনে।
কেমন বুঝছেন ভোটের হাওয়া? বাপ্পি বলেন, “শ্রীরামপুরের মানুষ আমাকে ইতিমধ্যেই যে ভালবাসা দিয়েছেন, তাতে আমি অভিভূত। ভোটে জিতে এখানে অনেক কাজ করতে চাই।” চিত্রাণীও আশাবাদী। বললেন, “মানুষ ওঁকে বহু বছর ধরেই ভালবাসে। জয়ী হলে উনি শ্রীরামপুরের জন্য অবশ্যই কাজ করবেন।”
এ দিন সকালে দক্ষিণেশ্বর, কোন্নগর, শ্রীরামপুর, ভদ্রেশ্বরের নানা মন্দিরে পুজো দিতে দিতে মনোনয়ন জমার কাজ সারতে এসে পৌঁছন কল্যাণ। গতবারের জয়ী প্রার্থীর কথায়, “মানুষ বাপ্পিকে চেনে ঠিকই। কিন্তু উড়ে এসে জুড়ে বসে উনি ভোটে জিততে পারবেন না। আমিই জিতব।’’
এ দিন আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী আফরিন আলিও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন চুঁচুড়ায়। ধামসা-মাদল বাজিয়ে তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন বহু কর্মী-সমর্থক।
জয়-পরাজয়ের হিসেব হতে বাকি বেশ কয়েকটা দিন। তার আগে জমে উঠছে শ্রীরামপুরের ভোট-তরজা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy