তালাবন্ধ রয়েছে মাটি পরীক্ষা কেন্দ্র। ছবি: মোহন দাস।
আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতি এবং কৃষি দফতরের বনিবনা না হওয়ায় আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতি চত্বরে মাটি পরীক্ষা কেন্দ্রটি তালা বন্ধ। দীর্ঘ এগারো বছরেও কাটেনি জটিলতা। চাষিরা ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। জমির মাটিতে কোন উপাদানের ঘাটতি বা আধিক্যে তাঁদের উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে, তা তাঁরা জানতে পারছেন না। ফলে কৃষি দফতরের প্রয়োজনীয় পরামর্শ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
আরামবাগ পঞ্চায়েত অফিস চত্বরে তাঁদেরই উদ্যোগ এবং আর্থিক সহায়তায় ২০০৪ সালের জানুযারি মাসে ঘটা করে উদ্বোধন হয় মাটি পরীক্ষা কেন্দ্রটির। সেটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্লক কৃষি দফতরকে। কেন্দ্র-সংলগ্ন অফিস ঘরও দেওয়া হয় কম ভাড়ায়। কিন্তু দিন কুড়ির মধ্যেই কয়েক লক্ষ টাকার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি-সহ কেন্দ্রটিতে তালা পড়ে। সেই তালা আজও খোলেনি।
উন্নত চাষের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জমির মাটি পরীক্ষা করানো নিয়ে যখন সর্বত্র বিশেষ প্রচারাভিযান চলছে, তখন আরামবাগে সব কিছু থাকা সত্ত্বেও দফতরটির এই হাল। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি থেকে উন্নতমানের ফসল উৎপাদনের জন্য নিয়ম করে মাটি পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। দফতরের বিশেষজ্ঞেরা জানান, গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্যগুলি মাটিতে কী পরিমাণে আছে, তা জানার জন্যই নিয়মিত মাটি পরীক্ষা জরুরি। কোনও খাদ্যের ঘাটতি থাকলে সেই অনুপাতে সার (রাসায়নিক ও জৈব) প্রয়োগ করে ঘাটতি মেটাতে হয়। মাটির চরিত্র অম্ল বা ক্ষারজাতীয় তা নির্ণয়ের জন্যও মাটি পরীক্ষা প্রয়োজন। মাটিতে অম্লতা বেশি থাকলে চুন জাতীয় কিছু প্রয়োগ করে মাটিকে নিরপেক্ষ অবস্থায় আনতে হয়। প্রতিবার বিবিধ চাষের পরে মাটির গুণাগুণে হেরফের হয়। তাই প্রতি মরসুমে মাটি পরীক্ষা করিয়ে সেই মতো সার বা অনুখাদ্য প্রয়োগ করলে মাটির জীবাণুগুলি ঠিক ঠিক কাজ করবে। ফলে উন্নতমানের এবং অধিক পরিমাণে ফসল পাওয়া নিশ্চিত হয়। চাষীদের দাবি, আরামবাগের মাটি পরীক্ষাকেন্দ্রটি চালু করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিক প্রশাসন।
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি?
কেন্দ্রটি সচল রাখতে দু’টি প্রশ্ন উঠে আসে। প্রয়োজনীয় টেকনিসিয়ানের মজুরি কে দেবে এবং মাটি পরীক্ষার কেমিক্যাল কেনার তহবিল কে জোগাবে। কৃষি দফতরের বক্তব্য ছিল, মাটি পরীক্ষা কেন্দ্রটি যেহেতু পঞ্চায়েত সমিতির, তাই তাদেরই আর্থিক দায়ভার নিতে হবে। কৃষি দফতর কেবলমাত্র চাষিদের সচেতন করে মাটি জোগাড় করবে এবং পরীক্ষার ফল অনুযায়ী পরামর্শ দেবে। অন্য দিকে, পঞ্চায়েত সমিতির বক্তব্য ছিল, তারা যন্ত্রপাতি দিয়েছে। ঘর দিয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্র চালাতে হবে কৃষি দফতরকেই। দুই দফতরের এই টানাপোড়েনের সমাধান সূত্র খুঁজতে ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত অন্তত ৬০ বার দুই দফতরের বৈঠক হয়েছে। কিছু সমাধান সূত্র অধরাই থেকে গিয়েছে। ২০১০ সালের পর আর বৈঠকও হয়নি। মাটি পরীক্ষা কেন্দ্রটি চালাতে আর্থিক দায়ভার নিতে হবে পঞ্চায়েত সমিতিকেই এই সিদ্ধান্ত থেকে নড়েনি কৃষি দফতর।
দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, মাটির একটি নমুনা পরীক্ষা করতে খরচ পড়ে ৭০-১০০ টাকা। নমুনা পিছু চাষিদের কাছ থেকে ১০-২০ টাকার বেশি নেওয়া সম্ভব নয়। খরচের বাকি টাকা কে দেবে সেই প্রশ্ন তোলে তারা। ওই ভর্তুকি পঞ্চায়েত সমিতিকেই দেওয়ার কথা বলে তারা। কিন্তু সেই আবেদনে সাড়া মেলেনি। অন্য দিকে, ব্লক প্রশাসনের বক্তব্য, চাষিদের সুবিধার জন্য অনেক প্রত্যাশা নিয়ে মাটি পরীক্ষা কেন্দ্রটি হয়েছিল। পরিচালনার জন্য কৃষি দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। কৃষি দফতর একক ভাবে উদ্যোগী হতে না চাওয়ায় পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কৃষি দফতরের তরফে উচ্চবাচ্য করা হয়নি বলে পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রের দাবি।
মহকুমা কৃষি আধিকারিক অশ্বিনী কুম্ভকার বলেন, “আর্থিক দায়ভার পঞ্চায়েত সমিতিরই নেওয়া উচিত। বিষয়টির সমাধান জরুরি। না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা।” অন্য দিকে, পঞ্চায়েত সমিতির তরফে আরামবাগের বিডিও প্রণব সাঙ্গুইয়ের বক্তব্য, “আমরা যৌথ উদ্যোগের পক্ষে। কিন্তু তাতেও কোনও সমাধান হয়নি। আলোচনার মাধ্যমেই জটিলতা কাটাতে হবে। এ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy