ইছামতী পেরিয়ে প্রায় শ’খানেক বেশি বাংলাদেশি দুষ্কৃতী এ পারে এসে ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুন করল আরপিএফের শিয়ালদহ শাখার এক কনস্টেবলকে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার সীমান্ত ঘেঁষা আংড়াইল-ঘোষপাড়ার ঘটনা। মৃতের নাম নির্মল ঘোষ (৪০)। তাঁর দাদা পরাণ ঘোষ বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকেও ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে দুষ্কৃতীরা। তাঁর মাথায় চারটি সেলাই পড়েছে। বনগাঁর এসডিপিও মীর শাহিদুল আলি বলেন, “দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।”
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার রাতে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় প্রতি দিনই সন্ধ্যার পরে ইছামতী পেরিয়ে ওপারের পুটখালি থেকে এ পারের আংড়াইলে পাচারের উদ্দেশে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা। গ্রামবাসীদের বাড়ির উপর দিয়েই যাতায়াত করে তারা। বুধবার রাতে ওই গ্রামের বাসিন্দা নির্মলবাবুর বাড়ির উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে তারা তাঁর মোবাইল ফোন চুরি করে বলে অভিযোগ। এ দিন হাসপাতালে পরাণ ঘোষ পুলিশকে জানান, তাঁর সঙ্গে এলাকার কিছু বাংলাদেশি পাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। ফোন চুরি হওয়ার পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে তিনি তাঁদের কাছে চুরি যাওয়া ফোনটা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তারা তাঁকে জানায়, বাংলাদেশের ওই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
বুধবারই রাত দশটা নাগাদ পরাণবাবুর বাড়ির সামনে লাঠি নিয়ে তাঁর উপর চড়াও হয় দু’জন। পরাণবাবুর চিৎকারে আশপাশের কয়েক জন ছুটে আসেন। এক জনকে ধরে ফেলে সবাই, অন্য জন পালায়। ধৃত ব্যক্তির ফোন থেকে ফের বাংলাদেশি পাচারকারীদের ফোন করে সিম কার্ড ফেরত দিতে বলেন পরাণবাবু। তাঁরা তাকে জানায়, তারা সিম ফেরত দিতে যাচ্ছে। পাশাপাশি, তাঁকে এ-ও জিজ্ঞাসা করে, যাকে ধরে রাখা হয়েছে, সে কোথায়। পরাণবাবুর দাবি, অন্য যে দুষ্কৃতী পালিয়েছিল, সে-ই বাংলাদেশে গিয়ে পাচারকারীদের খবর দিয়েছিল।
এর পরে রাত ১১টা নাগাদ ইছামতী পেরিয়ে প্রায় শ’খানেক সশস্ত্র দুষ্কৃতী এ পারে আসে। ততক্ষণে নির্মলবাবুও ঘটনাস্থলে চলে এসেছিলেন। অন্ধকারের মধ্যে দুষ্কৃতীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পরাণবাবুর মাথায় ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ও লাঠি দিয়ে তাঁকে মারতে থাকে তাঁরা। তিনি কোনও রকমে পালান। নির্মলবাবুকে তখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় আংড়াইল বিএসএফ ক্যাম্পে। কিন্তু বিএসএফ জওয়ানেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই পালায় দুষ্কৃতীরা। নির্মলবাবুকে খুঁজতে শুরু করেন তাঁর দাদা ও এলাকার বাসিন্দারা। একটি গর্তের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাঁকে। এলাকার মানুষ দু’জনকেই বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা নির্মলবাবুকে মৃত ঘোষণা করে বলেন, মাথায় ধারাল অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
রাতেই গাইঘাটা থানার ওসি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় এলাকায় তদন্ত করতে যান। নির্মলবাবুর স্ত্রী, আট বছরের মেয়ে ও পাঁচ মাসের ছেলে আছে। পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাঁদের দাবি, এলাকারই কেউ নির্মলবাবুকে চিনিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীদের।
খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা স্থানীয় রামনগর রোড অবরোধ করেন বাসিন্দারা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে অবরোধ ওঠে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি দিন সন্ধ্যেবেলা নদী পেরিয়ে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা চলে আসে এ পারে। অতীতে বিএসএফের সঙ্গে পাচারকারীদের সংঘাত হয়েছে। মেয়েদের উপরেও অত্যাচার করেছে তারা। বাসিন্দাদের দাবি, গুলি চালানো নিয়ে বিএসএফের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরেই দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ২১ মে স্থানীয় পুলিশ ও বিএসএফকে নিয়ে একটি সভা ডেকেছেন বাসিন্দারা।
গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, “ওই এলাকায় সীমান্তে কাঁটাতার না দেওয়া পর্যন্ত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy