শচিন শী। ক্ষতিপূরণের আশায়।--নিজস্ব চিত্র।
নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারেনি রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। তাই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিযুক্ত ওম্বুডসম্যানের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন হাওড়ার জয়পুরের বাসিন্দা শচিন শী। অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে ২২ জুনের মধ্যে শচিনবাবুকে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ওম্বুডসম্যান। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ এসে যাওয়ার পরে, শচিনবাবুর এটা আলাদা প্রাপ্তি।
পেশায় কৃষিজীবী শচীনবাবু অবশ্য বলছেন, ‘ক্ষতিপূরণ আদায় নয়, সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়াটাই ছিল উদ্দেশ্য। তা না পাওয়াতেই বণ্টন সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাই।’’
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ গ্রাহক পরিষেবা আইন ২০১০ অনুযায়ী, কোনও বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা গ্রাহককে সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমা না মানলে দেরির জন্য গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। এ হেন অভিযোগের বিচারের জন্যই রয়েছেন ওম্বুডসম্যান।
শচিনবাবু তাঁর বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য বণ্টন সংস্থার জয়পুরের অমড়াগড়ি কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে ২০১১-র ১৯ জুলাই আবেদন করেন। ওই অফিস থেকে তাঁকে ২০১২-র ১৪ মে ‘কোটেশন’ (বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য আনুষঙ্গিক খরচ হিসাবে যে টাকা গ্রাহককে জমা দিতে হয়, তার হিসেব) দেওয়া হয়। তিন দিন পরে ১৭ মে শচীনবাবু ‘কোটেশন’-এ নির্ধারিত টাকা বণ্টন সংস্থায় জমা দেন। নিয়ম হল, টাকা জমা দেওয়ার তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে। কিন্তু শচিনবাবুর ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। তিনি বিদ্যুৎ সংযোগ পান ২০১৩-র ৩০ অগস্ট। শচিনবাবুর অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য বার বার বণ্টন সংস্থার কাছে আবেদন করেও ফল হয়নি। সংযোগ পেতে দেরির জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ‘গ্রিভান্স রিড্রেসাল সেল’-এর কাছেও অভিযোগ জানানো যায়। ২০১৩-র ২২ ফেব্রুয়ারি তা করেও ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার পরে তিনি সল্টলেকে ওম্বুডসম্যান আনন্দগোপাল ঘোষের কাছে বণ্টন সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান।
বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সূত্রের খবর, ওম্বুডসম্যানের কাছে বণ্টন সংস্থার তরফে জানানো হয়, শচিনবাবুকে বলা হয়েছিল, বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় খুঁটি বা সরঞ্জাম মজুত নেই। তিনি যেন খুঁটি এবং সরঞ্জাম ঠিকাদারদের কাছ থেকে নিয়ে নেন। তা হলে তাঁকে নির্দিষ্ট সময়ে সংযোগ দেওয়া যাবে। কিন্তু এই বক্তব্যের স্বপক্ষে বণ্টন সংস্থার প্রতিনিধিরা ওম্বুডসম্যানকে প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ওম্বুডসম্যান হিসাব করে দেখেন, ‘কোটেশন’-এর টাকা জমা দেওয়ার তারিখ থেকে শচীনবাবুকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে ৪৪০ দিন পরে। নিয়ম হল, দেরির জন্য (নির্ধারিত এক মাস বাদ দিয়ে) দিনপ্রতি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ৫০০ টাকা করে। সেই হিসাবে ওম্বুডসম্যান ২ লক্ষ ২২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করেন এবং গত ২৩ মে ওই রায় দেওয়ার এক মাসের মধ্যে শচীনবাবুকে ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য বণ্টন সংস্থাকে নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার হাওড়ার আঞ্চলিক ‘গ্রিভান্স রিড্রেসাল সেল’-এর তরফে জানানো হয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে দেরি হওয়া নিয়ে অভিযোগ পেয়ে ‘অমরাগড়ি কাস্টমার কেয়ার ইউনিট’কে লিখিত ভাবে শচিনবাবুকে যত দ্রুত সম্ভব সংযোগ দিতে লিখিত জানানো হয়। ‘গ্রিভান্স রিড্রেসাল সেল’-এর এক পদস্থ আধিকারিক জানান, ওম্বুডসম্যানের এই রায়ের প্রেক্ষিতে কী করণীয় তা ঠিক করতে হবে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ‘অমরাগড়ি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার’-এর স্টেশন ম্যানেজার এবং হাওড়া-২ ডিভিশন্যাল ম্যানেজারকে। প্রয়োজনে তাঁরা ওম্বুডসম্যানের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। আবার ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার সুপারিশও করতে পারেন। এ বিষয়ে ‘অমরাগড়ি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার’-এর স্টেশন ম্যানেজার সৌমেন প্রামাণিক কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বণ্টন সংস্থার হাওড়া ২-এর ডিভিশনাল অফিস সূত্রের দাবি, ম্যানেজার ছুটিতে আছেন, তাই কিছু বলা যাবে না।
শচিনবাবুর অভিযোগের তদারকি করা মোকলেসুর রহমান জানান, উপযুক্ত কারণ না দেখিয়ে ওম্বুডসম্যানের নির্দেশ অমান্য করার জন্যও বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অভিযোগ জানানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওম্বুডসম্যানের নির্দেশ না মানায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাকে আর্থিক জরিমানা করার আইনি সংস্থানও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘গ্রাহক-হয়রানি বন্ধ করতে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থাই ওই আইন করেছে। আশা করব, বণ্টন সংস্থা ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দেবে। না হলে আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে বণ্টন সংস্থার বিরুদ্ধে ফের অভিযোগ জানাবো।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy