প্রাথমিক ভাবে উৎকন্ঠা ছিলই। আরামবাগে তৃণমূল প্রার্থীকে কতটা গ্রহণ করবেন দলীয় কর্মী-সমর্থক এবং স্থানীয় নেতৃত্ব। কারণ হুগলি জেলায় গোষ্ঠী রাজনীতির জটিলতার নিরিখে আরামবাগ এক কথায় শীর্ষে। তাই প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে রাজ্য থেকে জেলা সব স্তরের নেতাদের মনে সংশয় ছিল। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতেই মহকুমার বাইরে থেকে কাউকে প্রার্থী করা হয়েছে। আপাতত প্রচারে ভালই গা ঘামাচ্ছেন রিষড়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান আফরিন আলি অপরূপা পোদ্দার। উৎসবের মেজাজে চলছে প্রচার। দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে তিনি পাশে পাচ্ছেন বলেই জানিয়েছেন হুগলি তৃণমূল নেতৃত্ব।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জীর্ণ জেলা নেতৃত্ব তা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। বীরভূমেও অনুব্রত মণ্ডল গোষ্ঠীর দাপটে প্রার্থী বাছাই নিয়ে চাপে ছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও আপাতত পরিস্থিতি অনুকূলে। মালদহে রাজ্যের দুই মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র এবং কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর বিবাদও সুবিদিত। কর্মিসভায় তা প্রকাশ্যে আসায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও হস্তক্ষেপ করতে হয়। ভাঙড়েও তৃণমূলের আরাবুল ও কাইজার গোষ্ঠীর বিবাদ প্রচারেও ঢাকা থাকেনি।
আরামবাগের পরিস্থিতি নিয়ে বাস্তবিকই আশঙ্কায় ছিল দলের নেতৃত্ব। বস্তুত, গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই হুগলির এই মহকুমা বার বার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়েছে। দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী মারপিটও হয়েছে বহু বার। ফলে একদা ‘বামদুর্গ’ বলে পরিচিত আরামবাগে প্রার্থী বাছাই নিয়ে সতর্ক পদক্ষেপ করতে হয়েছে তৃণমূলকে।
তবে রাজ্য নেতৃত্ব মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন, সরাসরি আরামবাগের বাসিন্দা কোনও প্রার্থীকে টিকিট দিলে বহুদা বিভক্ত গোষ্ঠী রাজনীতির মৌচাকে ঢিল পড়বে। তা এড়াতে বাইরের কোনও প্রার্থী দিলে সমস্যা অনেকটাই এড়ানো যাবে। তার উপরে একেবারে আনকোরা কোনও প্রার্থী হলে তিনি উদ্ভূত সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় নেবেন। আবার খুব পোড় খাওয়া মুখ হলে তাঁর অতীত অবস্থান নিয়ে নানা বিশ্লেষণে জটিলতা সামনে আসবে স্থানীয় রাজনৈতিক স্তরে।
দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ সব ভেবেচিন্তেই রাজনীতিতে খুব নতুন না হলেও আরামবাগে অপরিচিত মুখ হিসাবে আনা হয়েছে আফরিনকে। আরামবাগে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলের সর্বোচ্চ স্তর অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুকুল রায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন। দলীয় নানা পর্যায়ে সেই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এবার এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে উদ্বেগের নির্দিষ্ট কোনও কারণ নেই। তৃণমূল শিবিরকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে এই অঞ্চলে বামেদের ক্ষয়িষ্ণু গণভিত্তি।
এই সে দিন পর্যন্ত আরামবাগে শেষ কথা বলতেন, সেখানকার সাত বারের সাংসদ সিপিএমের অনিল বসু। সংরক্ষণের ঠেলায় গত লোকসভা নির্বাচনে তিনি সেখানে প্রার্থী হতে পারেননি। তার জায়গায় সিপিএম প্রার্থী করেছিল শক্তিমোহন মালিককে। তাতেই কিছুটা হলেও খর্ব হয়েছিল অনিলবাবুর একাধিপত্য। তার উপরে দল বিরোধী কাজের জন্য তাঁকে বহিষ্কার করেছে রাজ্য নেতৃত্ব। গত লোকসভা ভোটে শক্তিমোহনবাবু জয়ী হয়েছিলেন। এ বারেও প্রার্থী তিনি। কিন্তু রাজ্য জুড়ে পরিবর্তনের হাওয়ায় আরামবাগ মহকুমায় ক্রমশ পিছনের সারিতে সরেছে বামেরা। গোঘাটের এক দাপুটে সিপিএম নেতা অভয় ঘোষ গ্রেফতার হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সংগঠনের হাল ধরার মতো নেতৃত্বের অভাব তীব্র আরামবাগে।
আরামবাগ পুরসভার ক্ষমতাও কিছু দিন আগে খুইয়েছে সিপিএম। সেখানকার অধিকাংশ কাউন্সিলর দল ছেড়ে তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন। দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান গোপাল কচের বদলে এখন ক্ষমতা এসেছে তৃণমূলের স্বপন নন্দীর হাতে। আরামবাগ পুরসভার ক্ষমতা দল হারানোয় বেজায় চটে যান সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব। তারপর আরামবাগ পুরসভার দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান গোপল কচকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয় কিছুদিন আগে।
আরামবাগে বিজেপি-র ভাল ভোট আছে। সিপিএমের দাপটেরও সময়েও আরামবাগে বিশিষ্ট চিকিৎসক চুনীলাল চক্রবর্তী ভোটে দাঁড়িয়ে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। এ বার আরামবাগে বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন মধুসূদন বাগ। প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের দীর্ঘ টানাপোড়েনে আরামবাগের প্রার্থিপদ ঘোষণা ঝুলে ছিল। শেষমেশ শম্ভুনাথ মালিকের নামই ঘোষণা করে কংগ্রেস। গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূলের জোটপ্রার্থী হিসেব শম্ভুবাবু সিপিএম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিকের কাছে হেরে যান।
আরামবাগ
শম্ভুনাথ মালিক
(কংগ্রেস)
আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে আমিই জিতব।
নিঃশব্দ বিপ্লব হয়ে যাবে। সন্ত্রাসের চাপা স্রোত বইছে।
শক্তিমোহন মালিক
(সিপিএম)
এই কেন্দ্রে আমরাই জিতব। প্রচারে বেরিয়েই আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে
৪৭টি মামলা করেছে পুলিশ। এই সন্ত্রাসের আবহ থেকে মানুষ পরিত্রাণ চাইছে।
মধুসূদন বাগ
(বিজেপি)
সারা দেশ জুড়েই মোদী-হাওয়া বইছে। আরামবাগও সেই হাওয়ারই সঙ্গী।
তবে শাসক দল কতটা গণতন্ত্র রক্ষা করতে দেবে,
তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে।
আফরিন আলি
(তৃণমূল)
সঙ্গে দল আর মাথার উপরে দিদি আছেন। গ্রাম বাংলায় উন্নয়নের
যে জোয়ার এসেছে, সারা পশ্চিমবঙ্গের মতো এ বার সেই
জোয়ারেই ভাসতে চাইছে আরামবাগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy