দাবিপত্র নিতে নবান্নে থাকবেন না রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) জিএমপি রাজশেখর রেড্ডি। আর কংগ্রেস নবান্নে গিয়ে দাবিপত্র দেবেই। এই টানাপোড়েনের আবহেই আজ, মঙ্গলবার কংগ্রেসের ‘নবান্ন চলো’ অভিযান ঘিরে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আগাম ঘোষণা করেছিলেন, সবংয়ে ছাত্র হত্যা, কেতুগ্রামে সংখ্যালঘু ছাত্রী খুনের ঘটনা-সহ রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি এবং সন্ত্রাসের প্রতিবাদ জানাতে আজ তাঁরা নবান্নে ডিজি-র দফতরে যাবেন। কিন্তু ডিজি ইতিমধ্যেই অধীরবাবুকে জানিয়ে দিয়েছেন, আজ তিনি ‘জরুরি কাজে’ নবান্নের বাইরে থাকবেন। এখানেই শেষ নয়। ডিজি সোমবার অধীরবাবুকে ফোন করে জানিয়েছেন, নবান্ন নয়, তাঁর দফতর আলিপুরের ভবানী ভবনে গিয়ে কংগ্রেসকে দাবিদাওয়া পেশ করতে হবে। ডিজি তো থাকবেনই না, এমনকী তাঁর প্রতিনিধি হয়ে অন্য কেউও নবান্নে কংগ্রেসের দাবিপত্র নিতে পারবেন না বলে পুলিশ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। কিন্তু অধীরবাবুর দাবি, পুলিশের ওয়েবসাইটে নবান্নতেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ডাইরেক্টরেটের ঠিকানা রয়েছে এবং সেখানেই তাঁরা তাঁদের দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দিতে যাবেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমরা ডিজি-র কাছে স্মারকলিপি দেব বলে কয়েক দিন আগে লিখিত ভাবে তাঁর কাছে সময় চেয়েছিলাম। ওঁর দফতর আমাদের চিঠির প্রাপ্তিস্বীকারও করেছে। এমনকী, রবিবার ডিজির সঙ্গে ফোনে আমার কথাও হয়েছিল। কিন্তু তার পরে সরকার তথা তৃণমূল নেত্রীকে খুশি করতেই ডিজি এখন বলছেন, নবান্নে কোনও স্মারকলিপি নেওয়া হবে না।’’
কংগ্রেসের নবান্ন অভিযানের জন্য আজ দুপুর ১টায় হাওড়া স্টেশন, সাঁতরাগাছি এবং কলকাতার রানি রাসমণি অ্যাভেনিউয়ে দলের নেতা-কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা জমায়েত হবেন বলে অধীর ঘোষণা করেছেন। কিন্তু নবান্নের সামনে ১৪৪ ধারা জারি আছে। সুতরাং পুলিশ তাঁদের আটকাবেই। কংগ্রেস তখন কী করবে? এই প্রশ্নের জবাবে অধীর বলেন, ‘‘রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন যদি আমাদের দাবিকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করে, তা হলে কংগ্রেস চুপ করে বসে থাকবে না। আর তার ফলে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার জন্য কংগ্রেস দায়ী থাকবে না।’’
কংগ্রেসের নবান্ন অভিযানকে গুরুত্ব না দিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন পাল্টা কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘অধীরবাবু প্রতিদিন প্রতিনিয়ত মুর্শিদাবাদে যে ধ্বংসাত্মক কাজকর্ম করেন, তার জন্য নিজেকে দায়ী না করে সরকারকে দায়ী করেন। এটা নতুন কিছু নয়।’’ গত ১৮ অগস্ট কংগ্রেসের বাংলা বন্ধের দিন অধীরবাবুর জামা খোলাকে কটাক্ষ করে পার্থবাবু এ দিন বলেন, ‘‘কাল উনি তিন জায়গায় সভা করবেন, শুনছি। উনি যেন তিনটে জামা সঙ্গে নিয়ে যান।’’ আজ নবান্ন অভিযান ‘সফল করতে’ কংগ্রেস রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে, বিশেষত মুর্শিদাবাদ থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের শহরে আনার ব্যবস্থা করেছে। এ দিনের কর্মসূচিকে সামনে রেখে ভাঙন বিধ্বস্ত ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার দলকে ‘আন্দোলনমুখী’ করার চেষ্টা করছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। পরিস্থিতি আঁচ করেই কি সরকার ভয় পেয়েছে এবং সে জন্যই কি নবান্নে পুলিশ কর্তারা তাঁদের স্মারকলিপি নেবেন না? অধীরবাবু বলেন, ‘‘আরে মমতাদেবীকে ‘বীরাঙ্গনা’, ‘অগ্নিকন্যা’ বলা হয়। তিনি আমাদের ভয় পাবেন কেন?’’
এর আগে গত ২৭ অগস্ট বামেদের নবান্ন অভিযান নিয়ে কলকাতা ও হাওড়ায় গোলমাল হয়েছিল। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পুলিশ-প্রশাসন অবশ্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এ দিন লালবাজারে প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর সঙ্গে বৈঠক করেন পুলিশ আধিকারিকরা। অমিতাভবাবু জানিয়েছেন, কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার রাজীব মিশ্র, হাওড়ার পুলিশ কমিশনার-সহ পদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা বৈঠকে ছিলেন। সমস্যা মেটাতে তাঁরাও রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের তরফে তাঁদেরও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, নবান্নে তারা স্মারকলিপি নেবে না।
আজকের কর্মসূচির কথা দিল্লির দলীয় নেতৃত্বকেও অধীরবাবু জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ও সরকার বাংলায় যে রাজনৈতিক নৃশংসতা চালাচ্ছেন, তা আমরা দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাই। তাই দিল্লিতে আমরা অবস্থান কর্মসূচি নেওয়ার কথা চিন্তা করছি।’’ তবে দিল্লি যাওয়ার দিন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অধীরবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘যেখানে যেখানে হাট পাব, সেখানেই দিদির হাঁড়ি ভাঙব।’
অধীরবাবুর এই বক্তব্যে পার্থবাবুর তির্যক মন্তব্য, ‘‘হাট করতে গেলে জনশক্তি দরকার। অধীরবাবুর সঙ্গে তো জনশক্তি নেই। শুধু ভাঙার প্রতিষ্ঠা করেই রাজনীতি করবেন অধীরবাবু! গড়বেন কবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy