মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
বারাণসীর দশাশ্বমেধ ঘাটের ঘাটের মতো এ বার কলকাতাতেও আয়োজিত হতে চলেছে দেব দীপাবলি উৎসব। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, আগামী ২৫ এবং ২৬ নভেম্বর বাজে কদমতলা ঘাটে সরকারি উদ্যোগে পালিত হবে দেব দীপাবলি। ওই উৎসবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। কলকাতা পুরসভার তরফে নবান্নে সেই আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হবে।
মুখ্যমন্ত্রী যাতে তাঁর সুবিধামতো যাতে ওই দেব দীপাবলি উৎসবে যোগদান করতে পারেন, সেই চেষ্টাও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি শুরু হয়েছে আয়োজনও। প্রায় ১০ হাজার প্রদীপ দিয়ে সাজানো হবে গঙ্গার ঘাট। দেব দীপাবলি উৎসব উপলক্ষে কার্তিক পূর্ণিমায় বাড়তি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির চত্বর-সহ দশাশ্বমেধ ঘাট। কয়েক লক্ষ প্রদীপ জ্বালিয়ে পালিত হয় সেই উৎসব। যা দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ বারাণসীতে আসেন। প্রসঙ্গত, বারাণসী হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা নির্বাচনী কেন্দ্র। তিনি নিজেও ওই উৎসব নিয়ে ‘উৎসাহী’। এক বার জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে নিয়ে গিয়েছিলেন।
বারাণসীর আদলেই কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে খাস কলকাতায় দেব দীপাবলির আয়োজন করা হচ্ছে। পুরসভার অন্দরে গুঞ্জন, নতুন এই উদ্যোগের মাধ্যমে কলকাতায় আরও একটি বাৎসরিক নতুন উৎসবের শুরু হতে চলেছে কলকাতায়।
এমনিতে কলকাতায় কখনওই গঙ্গার ঘাটে দেব দীপাবলির চল নেই। মূলত উত্তর ভারতে এই উৎসবের রমরমা। কিন্তু কলকাতাতে এই ধরনের আয়োজন প্রথমবার হচ্ছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, এই পূর্ণিমার দিন বিষ্ণু নিজের নিদ্রা ভঙ্গ করেন। তাই দেবলোকে সে দিন দেব দীপাবলি উৎসব পালিত হয়। আবার পাশাপাশিই কথিত, এই তিথিতে মহাদেব অর্ধনারীশ্বর রূপে বধ করেছিলেন ত্রিপুরাসুরকে। তাই এই পূর্ণিমা তিথি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছেও পবিত্র। যে কারণে গোটা উত্তর ভারত জুড়ে দেব দীপাবলি উৎসব পালিত হয়। ঘটনাচক্রে, পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি এলাকায় আবার এই দিনটিকে রাস উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। নবদ্বীপ, শান্তিপুর, দাঁইহাটের মতো জায়গায় আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয় সেই উৎসব। কিন্তু দেব দীপাবলির আয়োজন কলকাতায় এই প্রথম।
‘সর্বভারতীয় প্রাচ্যবিদ্যা আকাদেমি’র অধ্যক্ষ জয়ন্ত কুশরীর কথায়, ‘‘কলকাতা বা বাংলায় কখনও কোথাও দেব দীপাবলি পালন হয়েছে বলে শুনিনি বা দেখিনি। এখন হয়ত এ সব উৎসব আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু সনাতন হিন্দু ধর্মে ওইদিনটিকে বৈকুণ্ঠ চতুর্দশী বলা হয়। তবে যেহেতু সনাতন হিন্দু ধর্মে এই উৎসবের উল্লেখ রয়েছে, তাই কলকাতায় কেউ যদি এই দিনটি পালন করে, তাতে কোথাও কোনও সমস্যা বা বাধা নেই।"
প্রসঙ্গত, যে বাজে কদমতলা ঘাটে এই উৎসবের আয়োজন করা হবে, সেখানে এমনিতে প্রতিদিন গঙ্গা আরতি হয়। চলতি বছরেই মুখ্যমন্ত্রী ওই গঙ্গা আরতির সূচনা করেছেন। কলকাতা পুরসভা তরফে এই গঙ্গা আরতি আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে ‘দেবোত্তর জয়চণ্ডী ঠাকুরানি ট্রাস্ট’কে। দেব দীপাবলি উৎসবেরও আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছেন তারাই। ইতিমধ্যেই তারা প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে। তাদের যাবতীয় সহায়তা করছে কলকাতা পুরসভা।
তবে কলকাতা পুরসভার তরফে এই দেব দীপাবলির আয়োজনের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ দেখছেন অনেকে। আগামী বছর ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই কর্মসূচি ঘিরে হিন্দুত্বের ভোট ব্যাঙ্কে শান দিচ্ছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গেও সেই উদ্যোগ শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। অনেকে বলছেন, তার ‘রাজনৈতিক মোকাবিলা’ করতেই বাংলার শাসক তৃণমূল কলকাতায় দেব দীপাবলির আয়োজন করছে। যে ভাবে অযোধ্যার মন্দির তৈরির বিষয়টি একটি ট্রাষ্ট্রের হাতে রয়েছে, সে ভাবেই এই দেব দীপাবলির আয়োজনও করছে একটি ট্রাস্ট। তা ছাড়া আগামী বছরের শুরুতে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনও করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই মন্দির তৈরির দায়িত্বে রয়েছে ‘হিডকো’। মন্দির তৈরি করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy