Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bridge

ভুল ছিল নকশায়, দাবি মৃতের বাবার

নির্মাণকারী সংস্থার কোনও আধিকারিক এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

মৃত: কে এস শ্রীনিবাসন রাও এবং সচিন প্রতাপ। ফাইল চিত্র

মৃত: কে এস শ্রীনিবাসন রাও এবং সচিন প্রতাপ। ফাইল চিত্র

জয়ন্ত সেন 
মালদহ শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:২৬
Share: Save:

ইচ্ছা ছিল, চাকরির প্রথম মাসের বেতন পেয়ে ছেলেকে নামী স্কুলে ভর্তি করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সচিন প্রতাপের (২৬)। রবিবার সন্ধ্যায় নির্মীয়মাণ দ্বিতীয় ফারাক্কা সেতুর একাংশ ভেঙে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

সোমবার এমনই জানালেন তাঁর বাবা উদয়বীর সিংহ। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, লোহার গার্ডারের যে অংশ ভেঙে প্রাণহানি হল, সেটির নকশা নিয়ে সন্দেহ ছিল অনেকেরই। উদয়বীরের দাবি, গত বছর জুলাই মাসেই এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সেতুর ডিজ়াইনারের নজরে আনা হয়েছিল। সেই কারণে তিন মাস সেতুর কাজ বন্ধও ছিল। প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘কিন্তু নকশা না-বদলেই কাজ ফের শুরু করা হয়। তখন ঠিকমতো পদক্ষেপ করা হলে হয়তো ছেলেকে এ ভাবে হারাতে হত না।’’ এ নিয়ে তদন্তের দাবিও তুলেছেন তিনি। একই অভিযোগ উঠেছে নির্মাণস্থলে হাজির কর্মীদের একাংশের মধ্যেও।

নির্মাণকারী সংস্থার কোনও আধিকারিক এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের মালদহ-রায়গঞ্জ বিভাগের প্রকল্প ডিরেক্টর দীনেশ হানসারিয়া বলেন, ‘‘কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

উদয়বীর জানান, এ বছর জানুয়ারিতে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দক্ষিণ ভারতের একটি নির্মাণকারী সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন সচিন। উদয়বীরও ওই সংস্থায় প্রায় দু’দশক ধরে ‘সিনিয়র ফোরম্যান’ হিসেবে কর্মরত। তাঁদের আদিবাড়ি উত্তরপ্রদেশের আগরায়। এখন সপরিবার থাকেন দিল্লির মোহন গার্ডেনে। তিনি জানান, ২০১৬ সালে বিয়ে হয় সচিনের। তিন বছরের এক ছেলে রয়েছে তাঁর। এ বছরই স্কুলে ভর্তির কথা তার।

‘‘ছেলে বলেছিল, প্রথম বেতন পেয়ে নাতিকে দিল্লির নামী স্কুলে ভর্তি করবে। কী যে হয়ে গেল,’’— মালদহ মেডিক্যালের মর্গের বাইরে দাঁড়িয়ে এ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রৌঢ়। তিনি বলেন, ‘‘শনিবারই ছেলের সঙ্গে বেতন নিয়ে কথা হচ্ছিল।’’

রবিবার রাতে দ্বিতীয় ফরাক্কা সেতুর অংশ ভেঙে মৃত্যু হয়েছে ঠিকাদার সংস্থার প্রকল্প ম্যানেজার কে এস শ্রীনিবাসন রাওয়েরও (৪৮)। তাঁর বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের রাজমুন্দ্রিতে। তাঁর সহকর্মীরা জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে ওই সংস্থায় কাজ করেন শ্রীনিবাসন। মালদহের কালিয়াচকে একটি ভাড়াবাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলের সঙ্গে থাকতেন তিনি।

ওই নির্মাণ সংস্থার এক কর্মী বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার আধঘণ্টা আগেই উনি ফোনে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, কাজ প্রায় শেষের মুখে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবেন।’’

পরে বারবার ফোন করলেও শ্রীনিবাসন ফোন না ধরায়, উদ্বেগে রাতেই নির্মাণস্থলে পৌঁছন তাঁর স্ত্রী। ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। মৃতদেহ মালদহ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠিয়ে সংস্থার কর্মীরা তাঁকে রাতেই বাড়ি পাঠানোর

ব্যবস্থা করেন। মৃতের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সোমবার অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে

মালদহে রওনা হয়েছেন শ্রীনিবাসনের আত্মীয়েরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy