ডেরেক ও’ব্রায়েন। —ফাইল চিত্র।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম— দেশের আইনশৃঙ্খলার খোলনলচে বদলে দেওয়ার তিনটি বিল নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তৎপরতা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার সেই বিলের খসড়া নিয়েই একঝাঁক প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ব্রিজলালকে চিঠি দিলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। সেই চিঠিতে বিল নিয়ে তাদের বিস্তর আপত্তির কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
জাতীয় রাজনীতির কারবারিদের একাংশের ধারণা, আগামী শীতকালীন অধিবেশনে এই তিনটি বিল পাশ করাতে পারে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। তাই বিরোধী দলগুলিও নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়ে এখন থেকেই সরব হতে শুরু করেছে। সংসদ সূত্রে খবর, গত ২০ অক্টোবর সব রাজনৈতিক দলের সাংসদদের কাছে বিলের খসড়া পাঠানো হয়েছে। সঙ্গে ২৭ অক্টোবরের মধ্যেই তাদের মতামত জানাতে বলা হয়েছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্য সাংসদদের কম সময় দেওয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলে চিঠিটি পাঠিয়েছেন ডেরেক। মূলত তিনটি বিষয় তুলে ধরে এই চিঠিটি পাঠিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা লিখেছেন, ২১ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার সময় বিলের খসড়াটি পেয়েছেন তিনি। সে অর্থে তাঁকে মাত্র পাঁচদিন সময় দেওয়া হয়েছে বিলটি পড়ে নিজের মতামত জানানোর জন্য। ইতিমধ্যে সাংসদ পি চিদম্বরম ও এনআর এলাঙ্গো বিলে একাধিক ত্রুটির কথা তুলে ধরেছেন।
এ ক্ষেত্রে ডেরেক সাংসদদের পাশাপাশি, এমন কিছু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, যাদের পরামর্শ ও সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ নেওয়া হলে, তা ভারতের ১৪০ কোটি জনতার জন্য ভাল হবে বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি। সঙ্গে বাংলার সাংসদদের অংশগ্রহণের বিষয় নিয়েও সরব হয়েছেন ডেরেক। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বাংলায় এখন উৎসব। ইউনেস্কো কলকাতার শারদোৎসবকে আবহমান ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। আর ২৭ অক্টোবর কলকাতায় কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ তারিখে লক্ষ্মীপুজো। এমন পরিস্থিতিতে বাংলার সাংসদরা বিল নিয়ে নিজেদের মতামত জানানোর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির কাছে কেন অতিরিক্ত সময় পাবে না?
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর সমাজমাধ্যমে নতুন বিল নিয়ে বিষোদ্গার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি দণ্ডবিধি এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইন প্রতিস্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তৈরি খসড়াগুলি পড়েছি। স্তম্ভিত হয়েছি যে, এই প্রচেষ্টার মধ্যে চুপিসারে অত্যন্ত কড়া এবং কঠোর নাগরিক বিরোধী বিধি প্রবর্তনের একটি গুরুতর প্রচেষ্টা রয়েছে।’’ এর পরেই তাঁর অভিযোগ, ‘‘আগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ছিল। তা প্রত্যাহারের নাম করে, তারা (কেন্দ্রীয় সরকার) প্রস্তাবিত ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় আরও কঠোর এবং স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে, যা নাগরিকদের আরও মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।’’
তিনি লিখেছেন, ‘‘নতুন আইনগুলি কেবল নামে নয়, কার্যক্ষেত্রেও ঔপনিবেশিক প্রভাবমুক্ত হওয়া উচিত। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বদল আনার এই প্রচেষ্টা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হওয়া উচিত।’’ মমতা আরও লিখেছিলেন, ‘‘এই খসড়াগুলি গুরুত্ব সহকারে অধ্যয়ন করার জন্য দেশের আইন বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিকদের অনুরোধ করুন। সংসদে স্থায়ী কমিটিতে যখন আলোচনা হবে আমার সহকর্মীরা বিষয়গুলি উত্থাপন করবেন। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আইনের উন্নতি করা দরকার, কিন্তু ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ববাদকে পিছনের দরজা দিয়ে দিল্লিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।’’ ডেরেকও নেত্রীর ভাষাতেই সংসদীয় কমিটির চিঠি দিয়ে বিলের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১১ অগস্ট সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করে জানিয়েছিলেন, ১৮৬০ সালে তৈরি ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (ভারতীয় দণ্ডবিধি) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ দিয়ে। ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ (ফৌজদারি দণ্ডবিধি) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ দ্বারা এবং ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য বিল’ দিয়ে। তার পরেই বিল তিনটি সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারপরেই মমতা-সহ জোট ইন্ডিয়ার দলগুলি এই বিলের বিরুদ্ধে সরব হয়। তাই মনে করা হচ্ছে আগামী শীতকালীন অধিবেশন এই তিনটি বিল নিয়ে উত্তাল হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy