রাহুল গান্ধী এবং সত্যপাল মালিক। ছবি: পিটিআই।
পুলওয়ামাকাণ্ড এবং দুর্নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করার পরেই সিবিআই নোটিস পেয়েছিলেন তিনি। মোদী জমানায় জম্মু ও কাশ্মীর-সহ একাধিক রাজ্যের রাজ্যপালের পদে থাকা সেই সত্যপাল মালিকের সাক্ষাৎকার নিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
সামাজিক মাধ্যমে দু’জনেই বৈঠকের কথা জানিয়েছেন। রাহুল বুধবার সত্যপালের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের ভিডিয়ো পোস্ট করে জানিয়েছেন, পুলওয়ামাকাণ্ড থেকে আদানি প্রসঙ্গ-সহ নানা বিষয়েই তাঁদের কথা হয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারে রাহুলের নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সত্যপাল। ছাত্রজীবন থেকে তাঁর রাজনীতির যাত্রা শুরুর কথা, ১৯৭৪ সালে প্রথম বার বিধানসভা ভোটে দাঁড়িয়ে জেতার কাহিনি থেকে মোদী জমানায় জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল পদে থাকার অভিজ্ঞতা-সহ নানা প্রসঙ্গ রয়েছে ওই সাক্ষাৎকারে।
সত্যপাল সাক্ষাৎকারে রাহুলকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘‘সেনা দিয়ে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হবে না। অবিলম্বে জম্মু ও কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া উচিত।’’ ২০১৯ সালের এপ্রিলে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গি হানায় ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যুর সময় জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল পদে থাকা সত্যপাল চলতি বছরের এপ্রিলে এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ তুলেছিলেন, হামলার পর খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গাফিলতি, নিরাপত্তায় ফাঁক থাকার ফলেই কনভয়ে হামলা হয়েছে। কিন্তু সত্যপালের দাবি, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন, এটা অন্য বিষয়। সত্যপাল যেন মুখ বন্ধ রাখেন।
রাহুলকে তিনি বলেন, ‘‘আমি বলছি না, যে ওঁরা (মোদী সরকার) পুলওয়ামা ঘটিয়েছেন। কিন্তু এটা স্পষ্ট, ওঁদের গাফিলতিতেই এমনটা হয়েছে। ওঁরা বিষয়টি রাজনৈতিক প্রচারের কাজে লাগিয়েছেন।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চার মাস ধরে জওয়ানদের উপত্যকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহারের আবেদন ফেলে রেখে শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করেছিল বলে দাবি করেন সত্যপাল। তিনি বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত হেলিকপ্টার না মেলায় ওই স্পর্শকাতর এলাকা নিয়ে জওয়ানদের নিতে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন সিআরপিএফ কর্তৃপক্ষ।’’ তিনি জানান, জওয়ানদের কনভয় যাওয়ার আগে নিরাপত্তাবিধি মেনে রাস্তা ‘স্যানিটাইজ়’ করার কাজও হয়নি।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে ক্ষমতায় এসে মোদী ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ স্লোগান তুলেছিলেন। কিন্তু আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগ ওঠার পরে বিরোধী শিবির প্রধানমন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’ শিল্পপতি গৌতম আদানি কী কী সুবিধা পেয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মোদী এ নিয়ে নীরবই রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কয়েক মাস আগে সত্যপাল জানিয়েছিলেন, তিনি জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকার সময় প্রধানমন্ত্রীকে কিছু অনিয়মের বিষয়ে জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ থেকে আরএসএস নেতা রাম মাধবের কাজকারবার সম্পর্কেও সরকারকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। গোয়ার রাজ্যপাল থাকার সময়ও সেখানকার বিজেপি সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। তার পরেই তড়িঘড়ি তাঁকে মেঘালয়ে বদলি করে দেওয়া হয়।
রাহুলের সঙ্গে আলাপচারিতায় সত্যপালের অভিযোগ, কিছু বিশেষ শিল্পগোষ্ঠীর দুর্নীতি নিয়ে খবর প্রকাশ না করার জন্য সরকারের তরফে নিয়মিত সংবাদমাধ্যমগুলিকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়! সে কারণে, সংবাদমাধ্যমের প্রতি দেশের আমজনতার ভরসা কমছে বলেও দাবি করেন তিনি। মোদী সরকারের ‘কৃষকবিরোধী পদক্ষেপ’, অগ্নিবীর প্রকল্পের মাধ্যমে সেনাকে দুর্বল করার পদক্ষেপ এমনকি, সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠদের বেছে বেছে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে বসানো নিয়েও অভিযোগ তোলেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা সত্যপাল। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, গোয়ায় বিজেপি সরকারের দুর্নীতি নিয়ে সরব হওয়ার কারণেই মেঘালয়ের রাজ্যপাল পদে তাঁর ‘শাস্তিমূলক বদলি’ হয়েছিল।
মহিলা বিলেও দেশের কোনও উপকার হবে না বলে দাবি করে সত্যপাল রাহুলকে বলেছেন, ‘‘অথচ এমন ভান করছে, যে মহিলারা বিরাট উপকৃত হবেন।’’ মণিপুরে শান্তি ফেরাতে সেখানকার বিজেপি সরকার এবং কেন্দ্র ব্যর্থ বলে অভিযোগ করে রাহুলকে সত্যপাল বলেন, ‘‘উত্তর-পূর্বাঞ্চল সুস্থিত ছিল, ওরাই (বিজেপি) অশান্ত করেছে। তবে আর মাত্র ছ’মাস। লিখে রাখুন, ওরা আর ক্ষমতায় ফিরবে না।’’ তবে সেই সঙ্গেই তাঁর আশঙ্কা গান্ধীবাদী বহুত্ববাদ যদি আরএসএসের উগ্র হিন্দুত্ববাদকে পরাজিত করতে না পারে, তবে দেশ টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy