—প্রতীকী ছবি।
গাদাগাদি অবস্থা হাসপাতালগুলিতে। কোথাও একই শয্যায় চার জন রোগী রয়েছেন, কোথাও আবার মেঝেতে রেখেই রোগীদের চিকিৎসা চলছে!
নদিয়া জেলা জুড়ে ডেঙ্গি পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আকার নিয়েছে, তা সরকারি পরিসংখ্যানেও স্পষ্ট। পরিসংখ্যান বলছে, জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮০০-র কাছাকাছি। বেসরকারি হিসাবে সংখ্যাটা দেড় হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে বলেই দাবি। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যের মধ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি নদিয়াতেই। জেলার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমও।
এ বছর রানাঘাট শহর এবং গ্রামীণ এলাকা জেলার মধ্যে ডেঙ্গির ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে দাবি, কম-বেশি সব পরিবারেই কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত। রানাঘাট পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১০৩। পুর চেয়ারম্যান কুশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা মেনে ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজ করা হচ্ছে। এলাইজা পদ্ধতিতে ডেঙ্গি পরীক্ষার উপর জোর দিচ্ছে পুরসভা। এলাকায় কোথাও যাতে জল না জমে, সে দিকে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, রানাঘাট-১ এবং ২ ব্লক মিলিয়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২৩৮। এ ছাড়া শান্তিপুর ব্লকে ৩৮, হরিণঘাটা এবং চাকদহে ৫৮, হাঁসখালিতে ৬৩ জন ছাড়াও কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর পুরএলাকাকেও লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শহর এলাকায় ডেঙ্গির উপসর্গ থাকা প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৩৫ শতাংশই ‘পজ়িটিভ’। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফণীভূষণ সরকার বলছেন, ‘‘জ্বর হলেই ডেঙ্গি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। রিপোর্ট পজ়িটিভ এলেও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ একদমই খাওয়া যাবে না। প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। মশারি টাঙানো বাধ্যতামূলক।’’
ডেঙ্গি পরিস্থিতি জটিল আকার নিলেও, কোনও সরকারি হাসপাতালেই ডেঙ্গি বা জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড খোলা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে জেলা জুড়ে। বহু জায়গায় রোগীর পরিবারের লোকেরা অভিযোগ তুলছেন, সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই পাশেই ডেঙ্গি আক্রান্তদের রাখা হচ্ছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালগুলিতে আলাদা করে ফিভার ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলেই সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’ কিন্তু সব জায়গায় যে ফিভার ক্লিনিক চালু করা সম্ভব হচ্ছে, তা-ও নয়। রানাঘাট হাসপাতালে ডেঙ্গির চিকিৎসা নিয়ে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন খোদ সুপার প্রহ্লাদ অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, হাসপাতালের নার্স ও অন্য কর্মীরা অনেকেরই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ায় ভাল করে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সুপারের কথায়, ‘‘কর্মীর অভাব থাকায় ফিভার ক্লিনিক চালু করা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই অসুস্থ। কী ভাবে পরিষেবা চালু করা সম্ভব!’’
চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীদের মশারির ভিতরে থাকাটা বাধ্যতামূলক। কারণ, ডেঙ্গি আক্রান্ত কোনও রোগীকে কামড়ানোর পর সেই মশা যদি অন্য কোনও রোগীকে কামড়ায়, তা হলে তাঁরও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই মতো হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের জন্য মশারি বাধ্যতামূলক করেছে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল। হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত সরকার বলেন, ‘‘প্রতি দিন ৬০ জনের ডেঙ্গি পরীক্ষা করা হচ্ছে। তার মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জন করে পজ়িটিভ ধরা পড়ছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রত্যেক রোগীর জন্য মশারি বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ কিন্তু সব জায়গায় পরিস্থিতি এক রকম নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলিতে রোগী ভর্তির সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাই মশারির ব্যবহার তো দূর অস্ত্, রোগীদের জায়গা দেওয়াটাই কঠিন হয়ে উঠছে অনেক হাসপাতালেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy