Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে নতুন করে, কলকাতা-সহ সব জেলায় সতর্কতা, চার জেলায় বেশ কিছু ‘হটস্পট’ চিহ্নিত

রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণে থাবা বসিয়েছে ডেঙ্গি। শুধু শহরে নয়, গ্রামেও বেড়েছে প্রকোপ, যা চিন্তা বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন।

image of dengue

শহরের সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গি থাবা বসিয়েছে গ্রামেও। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:০৮
Share: Save:

কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও। সব থেকে বেশি উদ্বেগ গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধি। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলার বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলকে ডেঙ্গির ‘হটস্পট’ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। ডেঙ্গি থাবা বসিয়েছে উত্তরেও। মালদহেও ডেঙ্গির গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। মশাবাহিত এই রোগের প্রসার রুখতে কড়া পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। শহর এবং জেলায় জারি করেছে নতুন সতর্কতা। যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই ডেঙ্গির এত বাড়বাড়ন্ত।

শহরের হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগীর ভিড়। জেলাতেও একই ছবি। পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে, জেলার হাসপাতালগুলির রোগীকে ‘রেফার’ করার প্রবণতা। অনেক সময়ই জেলার হাসপাতাল দায় নিতে চাইছে না। তারা রোগীদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন শহরে। কিছু সময় তা এতটাই দেরিতে হচ্ছে, যে শহরে এসে ভর্তি হতে হতে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। তাঁদের সঙ্গে অনলাইন মাধ্যমে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতে পারবেন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। জেলাতেই যাতে ডেঙ্গির চিকিৎসা করানো যায়, রোগীকে শহরে পাঠানোর প্রবণতা যাতে কমে, তা নিশ্চিত করতে চাইছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা ডেঙ্গি সংক্রান্ত যে কোনও প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং তাঁর পরামর্শে ‘রেফার’ করবেন। কোনও কোনও জেলার সঙ্গে একাধিক বিশেষজ্ঞকেও যুক্ত করা হতে পারে।

জেলা হাসপাতালগুলির ‘রেফার’-এর প্রবণতার পাশাপাশি প্রশাসনের উদ্বেগ বাড়িয়েছে গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গির প্রসার। দফায় দফায় বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে রাস্তায় জল জমে থাকছে। সেই জমা জলেই জন্ম নিচ্ছে ডেঙ্গিবাহী মশা। সে কারণে গ্রামেও ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি। সেখানে চিকিৎসা পরিষেবার অভাবের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। হুগলি জেলার গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গির প্রকোপ এতটাই বেড়েছে যে, সেখানকার বলাগড়, পাণ্ডুয়া, চণ্ডীতলাকে ‘রেড জোন’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনায় আটটি ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদের সুতি, লালগোলা, ভগবানগোলা ব্লক, নদিয়ার রানাঘাট, হরিণঘাটা ব্লক এবং উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণ দমদম, বনগাঁ এবং বিধাননগরে ডেঙ্গি তুলনায় অনেক বেশি। এই তিন জেলার পর চিন্তা বাড়িয়েছে উত্তরের জেলা মালদহ। জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত ওই জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১,০৩২ জন। গত এক মাসে মালদহে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৮৭ জন। নজরদারি বাড়িয়েছে প্রশাসন। যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ, যতটা প্রয়োজন, আদৌ ততটা তৎপর নয় প্রশাসন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে সতর্কতার কাজেও রয়েছে ঢিলেমি। সে কারণেই ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি।

জেলার পাশাপাশি কলকাতাতেও ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মোকাবিলায় আরও তৎপর পুরসভা। শহরে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের কারণে এ বার কলকাতা পুরসভার সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র রাত পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। শনিবার এক বি়জ্ঞপ্তি জারি করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত খোলা থাকবে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আর সপ্তাহে দু’দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা রাখা হবে এগুলি।

জেলায় বিশেষজ্ঞ

গোটা রাজ্যেই ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতিতে সক্রিয় হল রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জেলায় জেলায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের জন্য এক বা একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়োগ করা হয়েছে। ডেঙ্গি সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা এই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। অনলাইন মাধ্যমে বা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও থাবা বসিয়েছে ডেঙ্গি। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামাঞ্চলের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কারণ মূলত দু’টি। এক, ডেঙ্গিমৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। চিকিৎসার পর যত ক্ষণে রোগীকে শহরে ‘রেফার’ করা হচ্ছে, তত ক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। দুই, কোনও কোনও হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অযথা ডেঙ্গি রোগী কলকাতা বা অন্য বড় শহরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় নিতে চাইছেন না। এই দুই ‘রোগ’ সারাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। জেলাতেই যাতে ডেঙ্গির চিকিৎসা করানো যায়, রোগীকে শহরে পাঠানোর প্রবণতা যাতে কমে, তা নিশ্চিত করতে চাইছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা ডেঙ্গি সংক্রান্ত যে কোনও প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং তাঁর পরামর্শে ‘রেফার’ করবেন। কোনও কোনও জেলার সঙ্গে একাধিক বিশেষজ্ঞকেও যুক্ত করা হতে পারে। ডেঙ্গি রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে, তাঁর অন্য রোগ থাকলে কী ভাবে তা সারিয়ে তোলা যাবে, সেই বিষয়ে পরামর্শ দেবেন বিশেষজ্ঞেরা।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ম বদল

শহরে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের কারণে এ বার কলকাতা পুরসভার সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র রাত পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। শনিবার এক বি়জ্ঞপ্তি জারি করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত খোলা থাকবে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আর সপ্তাহে দু’দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা রাখা হবে এগুলি। সোম, বুধ ও বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত মিলবে পরিষেবা। মঙ্গল এবং শুক্রবার সকাল ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা থাকবে। আর শনিবার স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা থাকবে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, গত সপ্তাহেই স্বাস্থ্য দফতর এক নির্দেশিকা জারি করেছে। যেখানে সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখার সময়সীমা বা়ড়ানোর কথা বলা হয়েছে। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সোম, বুধ, বৃহস্পতি ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টো কিংবা শেষ রোগী থাকা পর্যন্ত বহির্বিভাগ খোলা রাখতে হবে। আবার মঙ্গল ও শুক্রবার দুপুর ২টো থেকে সন্ধ্যা ৭টা কিংবা শেষ রোগী থাকা পর্যন্ত বহির্বিভাগ খোলা রাখতে হবে। রাজ্যে ডেঙ্গি বৃদ্ধি পাওয়ার পর গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রসচিব বি পি গোপালিকা ও স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জেলাশাসক ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তার পরেই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়।

মালদহের পরিস্থিত

ডেঙ্গি জ্বরে কাবু মালদহ। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ জেলার কালিয়াচকের ১,২ এবং ৩ নম্বর ব্লক, রতুয়া ২ নম্বর ব্লকে ডেঙ্গির প্রকোপ সব থেকে বেশি। পাশাপাশি, ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকাতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলির উপর চলছে নজরদারি। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে মালদহের যে সব এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, সেখানে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। শহরের কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও গ্রামীণ এলাকার বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে জেলার স্বাস্থ্য কর্মীদের ডেঙ্গির চিকিৎসার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।

মালদহ জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত ওই জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১,০৩২ জন। গত এক মাসে মালদহে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৮৭ জন। গত সপ্তাহে শুধু ইংরেজবাজার শহরেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ জন। তা ছাড়াও মালদহের কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকে গত সপ্তাহে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ জন। মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১০০ জন।

মালদহ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ি জানান, ডেঙ্গি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন রয়েছে প্রশাসন। পৌরকর্মীদের বৈঠকেও ডাকা হয়েছে। ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘ডেঙ্গি মোকাবিলায় পৌর কর্মীদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করা হয়েছে। আমাদের পৌরকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করছেন।’’ রাজ্য সরকারের দিকে এই নিয়ে আঙুল তুলেছে বিরোধী বিজেপি। ইংরেজবাজার পৌরসভার বিরোধী দলনেতা অম্লান ভাদুড়ির কটাক্ষ, ডেঙ্গি মোকাবিলায় ব্যর্থ পৌরসভা। ডেঙ্গি আক্রান্তের সঠিক পরিসংখ্যান গোপন করছে তারা।

মুর্শিদাবাদে উন্নতি

স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র বলছে, গত তিন দিনের তুলনায় মুর্শিদাবাদে ডেঙ্গি পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। সরকারি হিসেবে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০০০ ছাড়িয়েছে। তবে নতুন করে আক্রান্তের গ্রাফ নিম্নমুখী। জেলার অন্যতম ডেঙ্গি ‘হটস্পট’ লালগোলা, ভগবানগোলা এবং সুতি ব্লকে চলতি সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম বলে জানা গিয়েছে। হটস্পট এলাকার হাসপাতালগুলিতে ভর্তি রোগীদের ‘মশারি’ বাধ্যতামূলক করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নদিয়ায় ‘হটস্পট’

সরকারি হিসাব বলছে, নদিয়ায় চলতি বছরে আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই গত দু’বছরের থেকে বেশি। জেলার ১৮টি ব্লক ও ১০টি পৌরসভা এলাকায় দু’হাজারেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। ইতিমধ্যে নদিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলকে ডেঙ্গির ‘হটস্পট’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে রকমই ‘হটস্পট’ রানাঘাট এবং হরিণঘাটা ব্লকে ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে ঘুরে ঘুরে চলছে প্রচার। সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদেরও ডেঙ্গি চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

উদ্বেগে হুগলি

ডেঙ্গি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে হুগলিতে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সেখানে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার ছাড়িয়েছে। সরকারি হাসপাতালে ১৫০ জনেরও বেশি ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী ভর্তি। বেসকারি হাসপাতালেও ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৭০ জন ভর্তি রয়েছেন। শহরের থেকে গ্রামাঞ্চলে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। এই বিষয়টিই চিন্তা বাড়িয়েছে প্রশাসনের। বলাগড়, পাণ্ডুয়া, চণ্ডীতলাকে ‘রেড জোন’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়াকে ‘রেড জোন’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় ডেঙ্গি মোকাবিলায় বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও থাবা

দক্ষিণ ২৪ পরগনাতে থাবা বসিয়েছে ডেঙ্গি। তবে তার পাশাপাশি উদ্বেগ বাড়িয়েছে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া ওষুধ। অভিযোগ, হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে না গিয়ে অনেক রোগীই হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। হাতুড়েদের পরামর্শে তাঁরা নিষিদ্ধ ওষুধ খাচ্ছেন, যা বিপদ ডেকে আনছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ৩৭তম সপ্তাহে বারুইপুর মহকুমায় ইতিমধ্যেই ডেঙ্গি আক্রান্ত ৬৫৩। এর মধ্যে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভায় ১৪৫ জন আক্রান্ত, বারুইপুর পুরসভায় ২৪ জন আক্রান্ত, জয়নগর-মজিলপুর পুরসভায় ৪ জন আক্রান্ত। পাশাপাশি, বারুইপুর ব্লকে ১১৯ জন, জয়নগর ১ ব্লকে ১০৩ জন, জয়নগর ২ ব্লকে ৮৯ জন, কুলতলি ব্লকে ৫১ জন, সোনারপুর ব্লকে ২৮ জন, ভাঙড় ১ ব্লকে ৪১ জন, ভাঙড় ২ ব্লকে ৪৯ জন আক্রান্ত। অন্যদিকে, ক্যানিং মহকুমায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ১২১ জন। ক্যানিং ১ ব্লকে ৫৮ জন, ক্যানিং ২ ব্লকে ২৫ জন, বাসন্তীতে ২৫ জন, গোসাবায় ১৩ জন আক্রান্ত।

উত্তর ২৪ পরগনাতেও সঙ্কট

উত্তর ২৪ পরগনাতেও ডেঙ্গি নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা, বাদুড়িয়া, দক্ষিণ দমদম, বিধান নগর, হাবড়ায় লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, যে পরিমাণে প্রচার বা সচেতনতা শিবির প্রয়োজন ছিল, তা করছে না প্রশাসন। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে তেমন সক্রিয়ও হয়নি প্রশাসন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা এই জেলায় প্রায় সাত হাজার। প্রশাসনের আশা, খুব শীঘ্রই নিয়ন্ত্রণে আসবে ডেঙ্গি। চরিত্রগত ভাবে ডেঙ্গি ভাইরাস অক্টোবর মাস পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। সেই হিসাবে পুজোর সময় ডেঙ্গি কমবে বলে আশা প্রশাসনের। উত্তর ২৪ পরগনার চিফ মেডিক্যাল অফিসার যদিও এই নিয়ে মুখ খোলেননি।

বাঁকুড়াতেও ঊর্ধ্বমুখী

বাঁকুড়া জেলাতেও ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ইতিমধ্যেই জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ৩৬৩ জন। বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে পৃথক একটি ডেঙ্গি ওয়ার্ড খুলে চলছে চিকিৎসা। সব থেকে বেশি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বাঁকুড়া পুরসভা এলাকায়। স্বাস্থ্য দফতরের হিসাব অনুযায়ী, বাঁকুড়া পুর এলাকাতে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ৮০ জন। এ ছাড়াও রানিবাঁধ ব্লকে ৪৪ জন, খাতড়া ব্লকে ৩৮ জন এবং ওন্দা ব্লকে ৩২ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে গ্রামে গ্রামে সচেতনতার কাজ চলছে। যে গ্রামে জ্বরের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে, সেখানে রক্তপরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে।

বৈঠকে হাওড়া পুরসভা

ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগামী মঙ্গলবার জরুরি বৈঠক ডেকেছে হাওড়া পুরসভা। সকল বিধায়ক, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং পুরসভার বোর্ড সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন বৈঠকে। জানুয়ারি থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত হাওড়া পুর এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭১১ জন। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড। শুধুমাত্র এই ওয়ার্ডে ২১০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী জানান, এ বছর ডেঙ্গিতে কেউ মারা যাননি। তবে গত বছরের তুলনায় এবছর আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য বেশি।

পরীক্ষা কোচবিহার

উত্তরেও কিন্তু ডেঙ্গি নিয়ে পড়ছে আশঙ্কার ছায়া। রবিবার পর্যন্ত কোচবিহারের এমজেএন মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে কোনও ডেঙ্গি রোগী ভর্তি হননি। তবে জ্বর থাকায় ৩০ থেকে ৪০ জনের রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছে। রিপোর্ট আসেনি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আশঙ্কা, বৃষ্টির ফলে বিভিন্ন জায়গায় জল জমতে শুরু করেছে। সেখানে জন্মাতে পারে ডেঙ্গির মশা। এ বিষয়ে মেডিকেল কলেজের সুপার রাজীব প্রসাদ বলেন, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে ইতিমধ্যেই চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কোনও রোগীর ডেঙ্গি ধরা পড়লে সরকারি নির্দেশিকা মেনে তাঁর চিকিৎসা করাচ্ছি। প্রয়োজনে দিনে দু’বার করে প্লেটলেট টেস্ট করানো হচ্ছে।’’

সতর্ক দার্জিলিং

দার্জিলিংয়ে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ডেঙ্গি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসি প্রামাণিক বলেন, ‘‘গত বছর জানুয়ারি মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ বছর জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত গোটা জেলায় প্রায় ২০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সক্রিয় রোগীর সংখ্যা এখন নয় থেকে ১০।’’ পুরনিগমের ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪, ৫, ৪২, ৪৬, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা অন্যান্য ওয়ার্ডের তুলনায় যথেষ্ট বেশি। পুরনিগমের দাবি, মরসুমের শুরু থেকেই অতীতের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সে কারণে আক্রান্তের সংখ্যা এত কম৷ মৃতের সংখ্যা শূন্য। বাড়ানো হয়েছে পুরনিগমের স্বাস্থ্য কর্মীদের সংখ্যা৷

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Death HotSpot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE