কৃষি-ঋণ বিলির জন্য গত চার দিনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে মিলেছে ৭৭ কোটি টাকা। কিন্তু তার সামান্যই রাজ্যের চাষিদের হাতে পৌঁছেছে। নবান্নের খবর, ঋণের সিংহভাগ টাকা পড়ে রয়েছে সমবায় ব্যাঙ্কগুলোয়।
রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের অবশ্য দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কিছু বিধি-নিষেধের কারণে টাকা পেয়েও ঋণ বিলি পুরোদমে শুরু করা যায়নি। তবে শিগগিরই চাষিদের হাতে আরও বেশি পরিমাণে টাকা তুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সমবায় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘ঋণ ও গ্রাহক চাহিদা মেটাতে আমাদের প্রয়োজন তিন হাজার কোটি টাকা। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে সব মিলিয়ে পাওয়া গিয়েছে ১৩২ কোটি। কিন্তু টাকা খরচ নিয়ে নানা বিধি-নিষেধ। ফলে চাষিদের টাকা দিতে একটু সময় লাগছে। আশা করব, দু’-এক দিনের মধ্যেই ঋণের টাকা তৃণমূলস্তরে বিলি করা যাবে।’’
কেন্দ্রীয় সরকার পুরনো পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিল করায় পশ্চিমবঙ্গে চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোড়া থেকে অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। একই কারণে রাজ্যে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে এ দিন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সমবায়মন্ত্রী। এই অবস্থাতেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া কৃষি-ঋণের টাকা কেন ঠিকঠাক বিলি করা যাচ্ছে না, তার সদুত্তর মন্ত্রীর কাছে পাওয়া যায়নি।
কেন যাচ্ছে না, তার একটা ব্যাখ্যা অবশ্য সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন। সেখানে আঙুল উঠছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘কড়াকড়ি’র দিকেই। কী রকম?
ওঁদের দাবি: কৃষি-ঋণ বণ্টন হয় প্রাথমিক কৃষি উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে। এ দিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে তৃণমূলস্তরের সমবায় সমিতিগুলো কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে সপ্তাহে ৫০ হাজার ও সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে ২৪ হাজারের বেশি তুলতে পারছে না। তাই ভাঁড়ারে টাকা থাকলেও চাষিদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণে পৌঁছাচ্ছে না। কর্তাদের আরও বক্তব্য— এখন তাঁদের রোজকার কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে তা জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে পাঠানো। সেখান থেকে অন্যান্য শাখা মারফত টাকা সমবায় সমিতিগুলোর কাছে যাওয়ার কথা। ‘‘প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হওয়ার কারণেও চাষিদের হাতে ঋণের টাকা পৌঁছতে দেরি হচ্ছে।’’— যুক্তি দিচ্ছেন সমবায় ব্যাঙ্কের এক কর্তা। পাশাপাশি জেলা সমবায় আধিকারিকদের অনেকের পর্যবেক্ষণ, বোরো চাষের ঋণ নিতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ চাষিরা আসতে শুরু করেন। ঋণদান চলে অগস্ট পর্যন্ত। ফলে এখন অধিকাংশ জেলায় চাষিদের তেমন ঋণের প্রয়োজন নেই।
কিন্তু আলু ফলনের জন্য এই সময়ে ঋণের আবেদন আসে হুগলি, বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে। সেখানে নভেম্বরেই সবচেয়ে বেশি ঋণ বিলি হওয়ার কথা। হুগলি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক আলুচাষিদের ১৯৫ কোটি টাকা দিতে পারে। তবে এ বার সেই প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হতে আরও কয়েক দিন লাগবে বলে জানান সমবায় ব্যাঙ্কের কর্তারা। ওই জেলায় গত ক’দিনে কৃষি-ঋণ মঞ্জুর হয়েছে সাকুল্যে সাত কোটি টাকার।
সমবায়মন্ত্রী জানিয়েছেন, অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত রবি মরসুমে ১২ লক্ষ চাষিকে দাদন দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তাতে দু’হাজার কোটির বেশি টাকা লাগবে। নভেম্বরেই লাগবে সাতশো কোটি। অথচ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন নোট দিতে না-পারায় পুরো উদ্যোগই ভেস্তে যেতে বসেছে বলে মন্ত্রীর আক্ষেপ। তাঁর কথায়, ‘‘রবিচাষে দাদন না-পেলে সামনের মরসুমে আলু, সব্জি, সর্ষে, ডাল ও বোরো ধানের ফলনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এমনকী, মাস তিনেকের মধ্যে কৃষি পণ্যের দাম আমজনতার নাগালের বাইরে চলে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।’’
এ দিন সমবায়মন্ত্রীর পেশ করা তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ১৭টি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক রয়েছে। তারা মোট তিনশো শাখা মারফত পাঁচ হাজার প্রাথমিক সমবায় সমিতিকে ঋণ বণ্টন করে। ওই পাঁচ হাজার সক্রিয় সমবায় সমিতির ২৬১২টি আমানত সংগ্রহও করতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy