Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

ঠান্ডা মেজাজের বৈশাখে চাহিদা কম বিদ্যুতের

শিল্প তো অনেক দিন হল বাংলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা তাই এখন মূলত গৃহস্থের উপরেই নির্ভরশীল। কিন্তু কয়েক দিন ধরে রোজই বিকেলে বা সন্ধেয় কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টি ধাক্কা দিয়েছে এবং দিয়ে চলেছে সেখানেও। কালবৈশাখীর দাপটে গৃহস্থের ঘরে বাতানুকূল যন্ত্র বা পাখা চালানোর তাগিদ আপাতত কম। তাই কমে গিয়েছে বিদ্যুতের চাহিদাও। কয়েক দিন ধরে গড়ে রোজ ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

শিল্প তো অনেক দিন হল বাংলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা তাই এখন মূলত গৃহস্থের উপরেই নির্ভরশীল। কিন্তু কয়েক দিন ধরে রোজই বিকেলে বা সন্ধেয় কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টি ধাক্কা দিয়েছে এবং দিয়ে চলেছে সেখানেও। কালবৈশাখীর দাপটে গৃহস্থের ঘরে বাতানুকূল যন্ত্র বা পাখা চালানোর তাগিদ আপাতত কম। তাই কমে গিয়েছে বিদ্যুতের চাহিদাও। কয়েক দিন ধরে গড়ে রোজ ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি।

কালবৈশাখীর প্রভাবে কয়েক দিন ধরে রাজ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকছে গড়ে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। ভোরের দিকে বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। মাঝ-বৈশাখে এমন অভিজ্ঞতা বেশ দুর্লভ। রাজ্যের বিদ্যুৎকর্তারা বলছেন, ‘‘এপ্রিল শেষ হতে চলল। কিন্তু এ বছর গ্রীষ্মে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা কতটা হতে পারে, তা আন্দাজ করা যাচ্ছে না।’’ আন্দাজ করতে না-পারার মূলে আছে আবহাওয়ার তুঘলকি মর্জি। গরমের মেজাজ যে-মাত্রায় চড়লে একটানা পাখা এবং এসি বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালাতে হয়, এ বার এখনও পর্যন্ত গ্রীষ্মের সেই রুদ্ররূপ বিশেষ দেখা যায়নি। বাংলায় সাধারণত চৈত্রের শুরু থেকেই গরমের মেজাজ সপ্তমে চড়ে থাকে। কিন্তু এ বার বৈশাখেও তার ভৈরবমূর্তি অনেকটাই ভস্মের আড়ালে চাপা পড়ে রয়েছে। বরং মাঝেমধ্যে ঝড়বৃষ্টির কল্যাণে ১৪২২-এর বৈশাখ যেন বেশ প্রসন্নই।

বিদ্যুতের জন্য কাড়াকাড়ি বা হাহাকার তাই এ বার তেমন নেই। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম সূত্রের খবর, যখন গলদ্‌ঘর্ম পরিস্থিতি চলার কথা, সেই সময়েও আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা থাকায় সোম ও মঙ্গলবার রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি গড়ে মাত্র ১৯০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। এত দিন উত্তপ্ত বৈশাখে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২৭০০-২৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হত। কিন্তু গত তিন-চার দিন সিইএসসি এলাকা বাদ দিয়ে সারা পশ্চিমবঙ্গেই বিদ্যুতের চাহিদা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫০০ থেকে ৪৬০০ মেগাওয়াট। যা বছরের এই সময়ের চাহিদার তুলনায় ৫০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট কম।

সিইএসসি এলাকাতেও পরিস্থিতি প্রায় একই রকম। কয়েক দিন ধরে কলকাতা-হাওড়া এবং এই দুই যমজ শহর সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে বিদ্যুতের চাহিদা কমে ১৬০০ মেগাওয়াটের ঘরে পৌঁছে গিয়েছে। অথচ গত বছরও এই সময় প্রতিদিন কমপক্ষে ১৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জোগান দিতে হয়েছে। এ বার চাহিদা কমে যাওয়ায় সিইএসসি এখন বাজার থেকে কম বিদ্যুৎ কিনছে। এপ্রিল জুড়ে গরম কম থাকায় সিইএসসি এবং বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকায় নতুন এসি লাগানোর আবেদনও কম।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম এবং সিইএসসি-র কর্তারা বলছেন, এপ্রিলের গোড়ায় কয়েক দিন বেশ গরম ছিল। ওই সময় মনে করা হয়েছিল, গত বছরের মতো এ বারেও গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েই চলবে। সেই অনুযায়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে বেশি করে কয়লা মজুত করা হচ্ছিল। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম সূত্রের খবর, এপ্রিলের শুরুতে সব ক’টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র মিলিয়ে মোট কয়লা মজুত ছিল ন’লক্ষ টন। চাহিদা থাকলে ওই কয়লার অর্ধেক এ মাসেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু উৎপাদন কম হচ্ছে বলে কমেছে কয়লার চাহিদাও। গ্রীষ্মে কয়লা সংগ্রহ করতে কালঘাম ছোটানো অফিসারেরা অবশ্য এতে খুশি। যদিও রাজ্যের শিল্প ও বিদ্যুৎ শিল্পের পক্ষে এটা শুভ লক্ষণ নয় বলেই মনে করছেন অনেকে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy