Advertisement
E-Paper

কেষ্টর কারাগারের দিনগুলি, তিহাড় ভায়া দুবরাজপুর! গ্রেফতার আর মুক্তির মাঝে রয়েছে শক্তিগড়ের ল্যাংচাও

২০২২ সালের ১১ অগস্ট গরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। পরে ২০২৩ সালে ওই মামলাতেই তাঁর কন্যা সুকন্যাকেও গ্রেফতার করে ইডি। তার পর তিহাড় জেলে ঠাঁই হয়েছিল বাবা ও কন্যার।

তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল।

তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২
Share
Save

দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট থেকে গরু পাচার মামলায় জামিন পেয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। ১০ লক্ষ টাকার বন্ডে তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়েছে। এর আগে গত ৩০ জুলাই সিবিআইয়ের মামলায় জামিন পেয়েছিলেন অনুব্রত। এ বার ইডির মামলাতেও জামিন মঞ্জুর হল তাঁর। দু’বছর পর অবশেষে তিহাড় থেকে মুক্তি পেতে চলেছেন তিনি। কী কী ঘটেছে এই দু’বছরে? বীরভূমের তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ?

২০২২ সালের ১১ অগস্ট গরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে গ্রেফতার করে সিবিআই। বীরভূমের নিচুপট্টি এলাকায় নিজের বাড়ি থেকেই গ্রেফতার হন অনুব্রত। কিছু দিন সিবিআই হেফাজতে থাকার পর প্রথমে তাঁকে আসানসোল সংশোধনাগারে রাখা হয়েছিল। এরই মধ্যে আবার গরু পাচার মামলায় আর্থিক তছরুপের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের ভিত্তিতে ইডি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তদন্ত শুরু করে। তার পর হেফাজতে থাকাকালীনই ওই বছরের নভেম্বর মাসে অনুব্রতকে গ্রেফতার করে ইডিও। প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি ছিল, গরু পাচার মামলায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন কেষ্ট। সেই বাজেয়াপ্ত করা ১১ কোটির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউয়ে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে জমা দেয় তারা। পাশাপাশি, পেশ করা হয় কেষ্টর প্রাক্তন দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন এবং অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর বয়ানের প্রতিলিপিও। এর পর ইডিও তদন্তে নেমে ৭৭ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার সম্পত্তির খোঁজ পায়। রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট অনুমতি দেয় আসানসোল থেকে তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

২০২৩ সালের ৭ মার্চ কেষ্টকে আসানসোল থেকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পথে আবার আর এক গোল বাধে! জেল থেকে অনুব্রতকে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিল আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ। কলকাতায় আনার পথে মাঝে শক্তিগড়ের একটি ল্যাংচার দোকানে প্রাতরাশের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় অনুব্রতকে। কিন্তু কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেও সেই দোকানে তিন ব্যক্তিকে প্রায় আধঘণ্টা ধরে নিভৃতে তৃণমূলের বীরভূমের জেলা সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। পুলিশি নিরাপত্তা সত্ত্বেও কী করে এমন ঘটল, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় নানা মহলে। দফায় দফায় জেরার পর ২১ মার্চ তাঁকে তিহাড় জেলে পাঠানো হয়।

অনুব্রত ও তাঁর কন্যা সুকন্যার নামে ইডির দায়ের করা চার্জশিটে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, অনুব্রতের নগদ রয়েছে ১২ কোটি ৮০লক্ষ ৯৮ হাজার ২৩৭ টাকা, সংস্থার সম্পত্তির পরিমাণ ২০ কোটি ৭৭ লক্ষ ২০ হাজার ৯০৮ টাকা, সংস্থা এবং ফার্মের মোট রোজগার ৫ কোটি ৭০ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯৮৪ টাকা, বেনামি অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৫ কোটি ৯৪ লক্ষ ২৯ হাজার ৯১৮ টাকা, মোট বেনামি সম্পত্তির পরিমাণ ৫৫ লক্ষ টাকা এবং লটারি জিতেছেন ২ কোটি টাকা। এর পর ২০২৩ সালের ২৬ এপ্রিল ওই মামলাতেই গ্রেফতার হন অনুব্রত-কন্যা সুকন্যাও। দিল্লিতে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। একাধিক বার ডেকে পাঠানো সত্ত্বেও হাজিরা এড়াচ্ছিলেন সুকন্যা। জিজ্ঞাসাবাদের সময়েও অসহযোগিতা করেন। এর পরই তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। তিহাড় জেলেই ঠাঁই হয় বাবা-মেয়ের।

বাবা-মেয়েকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল। এ ভাবেই কেটে যায় আরও এক বছর। মাঝে একাধিক বার শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে জামিনের আবেদন করেছেন কেষ্ট। তাঁর আইনজীবী সওয়াল করার সময় বার বার জানান, গরু পাচার মামলায় অন্য অভিযুক্তেরা ছাড়া পেলেও তাঁর মক্কেলকে আটকে রাখা হচ্ছে। কিন্তু লাভ হয়নি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে বার বারই অনুব্রতের জামিনের বিরোধিতা করা হয়েছে। সওয়ালে তারা জানায়, এই মামলায় অনুব্রতই মূল অভিযুক্ত। জামিন পেলে তিনি সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে পারেন। সেই যুক্তিতে প্রতি বারই অনুব্রতের জামিন খারিজ হয় আদালতে।

অবশেষে চলতি বছরের ৩০ জুলাই সিবিআইয়ের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান অনুব্রত। জামিন মঞ্জুর করে বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ। তার পরেও ইডির মামলায় তিহাড়েই ছিলেন কেষ্ট। কিন্তু এর মাঝেই অনুব্রত-কন্যার জামিন মঞ্জুর হয়ে যায়। সেই খবর পাওয়ার পর থেকেই কেষ্টর ফেরার আশায় দিন গুনছিলেন নিচুপট্টির অনুব্রত-ঘনিষ্ঠেরা। অবশেষে শুক্রবার বিকেলে এল সেই ‘মাহেন্দ্র ক্ষণ’! সিবিআই এবং ইডি, দুই মামলাতেই জামিন মঞ্জুর হল কেষ্টর।

বীরভূমের জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদে ছিলেন অনুব্রত। গ্রেফতারির পর তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি দল। বরং অনুব্রতের গ্রেফতারির তিন দিনের মাথায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘মুক্তি পেলে বীরের সংবর্ধনা দেওয়া হবে কেষ্টকে।’’ আপাতত জেলমুক্তি হচ্ছে কেষ্টর। সম্ভবত পুজোর আগেই বীরভূমে ফিরবেন তিনি। ফিরবেন কন্যা সুকন্যাও। সেই খবরেই এখন মুখে হাসি ফুটেছে দলের বীরভূমের কর্মীদের!

Anubrata Mondal Sukanya Mondal Cow Smuggle Case ED Bail

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।