প্রতীকী ছবি।
ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে পিছিয়ে জুন। শীত-বসন্ত পেরিয়ে একেবারে বর্ষা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক তিন, সাড়ে তিন মাস পিছিয়ে যাওয়ায় পড়ুয়াদের একই সঙ্গে সুবিধা আর অসুবিধা দু’টিই হতে পারে বলে শিক্ষা শিবিরের ধারণা। সুবিধা হবে অনেকটা বাড়তি সময় পেয়ে যাওয়ায়। তবে অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর অসুবিধাই বেশি হবে বলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বড় অংশের আশঙ্কা। কারণ, জুনের প্রথম সপ্তাহে বর্ষা চলে আসে রাজ্যে। রাস্তাঘাট থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র— দু’টিই বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে জলে-কাদায়।
এই অবস্থায় অধিকাংশ শিক্ষকের বক্তব্য, করোনার জন্য যে-টেস্ট বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে, বাড়তি সময় হাতে আসায় সেই বাছাই-যাচাইয়ের টেস্ট বাধ্যতামূলক করা দরকার। একই ভাবে জুনে পরীক্ষা চলাকালীন ঝড়বৃষ্টির মোকাবিলা করতে সব পরীক্ষা কেন্দ্রে যথাযথ পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত করা হোক।
গ্রাম ও গঞ্জের শিক্ষকেরা জানান, ঘূর্ণিঝড় আমপান থেকে অতিমারি করোনা— জোড়া উৎপাতে গ্রামীণ পড়ুয়াদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে সব চেয়ে বেশি। ওই সব এলাকায় অনলাইন ক্লাস হয়েছে নামমাত্র। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি কতটা হয়েছে, তা নিয়ে শিক্ষকেরা চিন্তিত। তাই টেস্ট আবশ্যিক বলে মনে করছেন তাঁরা। এ বার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের টেস্ট দিতে হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করার পরে পরেই টেস্টের বিকল্প একটি যাচাই-পরীক্ষার দাবি উঠেছিল। অনেক স্কুল তার ব্যবস্থাও করছে। যেমন, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে ঘোষডিহা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক কিঙ্কর অধিকারী জানাচ্ছেন, টেস্ট কী ভাবে নেওয়া যায়, তার পরিকল্পনা চলছে তাঁদের স্কুলে। আশপাশের কয়েকটি স্কুলেও টেস্ট নেওয়া হবে বলে জানতে পেরেছেন তাঁরা। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেস্ট বাধ্যতামূলক করার দাবি উঠছে। “আমরা শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষা দফতরের কাছে দাবি জানাচ্ছি, চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে পরিবর্তিত পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে সব স্কুল যাতে টেস্ট নিতে পারে, নির্দেশিকা জারি করে তার ব্যবস্থা করা হোক,” বলেন কিঙ্করবাবু।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিক্ষক অনিমেষ হালদার জানান, জানুয়ারিতে সব বিষয়ে ২৫ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়ার আয়োজন ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন তাঁরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওই পরীক্ষা সফল হলে পরিবর্তিত পাঠ্যক্রম অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়ের পূর্ণ মানের পূর্ণ সময়ের টেস্ট নেওয়া হবে।
জুনে পরীক্ষার সময় আবহাওয়া কেমন থাকবে, সেটাও বহু শিক্ষকের চিন্তার কারণ। মথুরাপুরের কষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি জানান, বঙ্গে সাধারণ ভাবে বর্ষা আসে ৮ জুন। সময়সূচি মানলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যে রাজ্যে মৌসুমি বায়ুর চলে আসার কথা। গ্রামাঞ্চলের বহু পরীক্ষার্থী ওই সময় পরীক্ষা দিতে গিয়ে খুব সমস্যায় পড়তে পারেন। “গ্রামীণ এলাকার বহু স্কুলে দরজা-জানলা নেই। আমপানের দাপটে অনেক স্কুলের জানলা-দরজা ভেঙে গিয়েছে। সেই সব ঘরে বৃষ্টির ছাট এসে পরীক্ষার্থীদের অসুবিধায় ফেলতে পারে। অনেক স্কুলে ফাটা ছাদ দিয়ে জল পড়ে। মেঘ করলে বহু গ্রামীণ স্কুলের ঘর অন্ধকার হয়ে যায়। অনেক স্কুলে বৈদ্যুতিক আলোর যথাযথ ব্যবস্থা নেই। পরীক্ষার সময় সেই সব ক্ষেত্রে জেনারেটর রাখা দরকার,” বলেন চন্দনবাবু। করোনা আবহে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বাড়তি ঘরের দরকার। কিন্তু অধিকাংশ স্কুলেই ব্যবস্থা নেই। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সম্পাদক নবকুমার কর্মকারের দাবি, যে-সব স্কুলে বিদ্যুৎ নেই বা অন্যান্য পরিকাঠামো ভাল নয়, সেগুলিকে চিহ্নিত করে পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য টাকা দিতে হবে সরকারকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy