Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

তৃণমূলকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে বদলা দীপার

লোকসভা ভোটে তাঁরই ঘরের মানুষকে তাঁর বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেসের ঘর ভেঙে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। এ বার পুরভোটে তৃণমূলকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়ে কালিয়াগঞ্জের মাটিতে তারই যেন মধুর প্রতিশোধ নিলেন রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। দীপার খাসতালুক কালিয়াগঞ্জ পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি ও সিপিএম একটি করে ওয়ার্ড দখল করেছে। একটি করে ওয়ার্ড দখল করেছে বিজেপি ও সিপিএম। জেলার ইসলামপুর পুরসভাটিও দখলে রেখেছে কংগ্রেস।

কালিয়াগঞ্জ পুরসভায় জয়ের পরে কংগ্রেসের বিদায়ী চেয়ারম্যান অরুণ দে সরকারকে শুভেচ্ছা দীপা দাশমুন্সির। মঙ্গলবার শ্রীকলোনিতে দীপাদেবীর বাড়িতে। — নিজস্ব চিত্র।

কালিয়াগঞ্জ পুরসভায় জয়ের পরে কংগ্রেসের বিদায়ী চেয়ারম্যান অরুণ দে সরকারকে শুভেচ্ছা দীপা দাশমুন্সির। মঙ্গলবার শ্রীকলোনিতে দীপাদেবীর বাড়িতে। — নিজস্ব চিত্র।

গৌর আচার্য
কালিয়াগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৫৬
Share: Save:

লোকসভা ভোটে তাঁরই ঘরের মানুষকে তাঁর বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেসের ঘর ভেঙে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। এ বার পুরভোটে তৃণমূলকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়ে কালিয়াগঞ্জের মাটিতে তারই যেন মধুর প্রতিশোধ নিলেন রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ দীপা দাশমুন্সি।

দীপার খাসতালুক কালিয়াগঞ্জ পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি ও সিপিএম একটি করে ওয়ার্ড দখল করেছে। একটি করে ওয়ার্ড দখল করেছে বিজেপি ও সিপিএম। জেলার ইসলামপুর পুরসভাটিও দখলে রেখেছে কংগ্রেস। গত লোকসভা ভোটে রায়গ়ঞ্জ আসনে দীপাদেবীর দেওর পবিত্ররঞ্জন দাশমুন্সিকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। সে যাত্রায় ভোট কাটাকুটিতে সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের কাছে মাত্র ১৬৩৪ ভোটে হারতে হয়েছিল কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্ত্রী দীপাকে।

মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পরেই তাই তড়িঘড়ি দিল্লি থেকে কালিয়াগঞ্জ চলে আসেন দীপা। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে দুধসাদা স্করপিওতে রওনা হন উত্তর দিনাজপুরের দুই পুরসভায়। বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ ইসলামপুরে পৌঁছন। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পার্টি অফিসে তাঁকে স্বাগত জানান ইসলামপুরের বিদায়ী চেয়ারম্যান কানাইয়ালাল অগ্রবাল সহ চার জয়ী কাউন্সিলর। ছিলেন দলের কর্মীরাও। কর্মীদের মধ্যে বাড়তি মনোবল দেখা গেলেও জয়ের উৎসবের চেনা ছবি কিন্তু তেমন নজরে আসেনি। আকাশেরও মুখ ভার ছিল। তখন পার্টি অফিসে বসে হাল্কা মেজাজে দলের ফলাফলের খোঁজখবর নেন দীপা। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আমাদের ভোট দিয়েছেন মানুষ। এলাকার ধারাবাহিক উন্নয়ন বজায় রাখতেও মানুষের এই সিদ্ধান্ত।’’

মিনিট ২০ এখানে কাটিয়ে রওনা দেন কালিয়াগঞ্জের দিকে। সেখানে অবশ্য বিকেল থেকেই ভিড় জমিয়ে ছিলেন দলের নেতা কর্মীরা। কিন্তু সন্ধ্যার মুখে ব্যাপক বৃষ্টিতে আটকে পড়ায় রাত আটটা নাগাদ শ্রীকলোনিতে নিজের বাড়িতে পৌঁছন দীপা। তুমুল বৃষ্টিতে তত ক্ষণে উৎসাহী কর্মী সমর্থকদের সিংহভাগই ঘরমুখী। কালিয়াগঞ্জের বিদায়ী চেয়ারম্যান অরুণ দে সরকার, কয়েকজন জয়ী কাউন্সিলর সহ মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতা কর্মী হাজির ছিলেন বাড়িতে। তাই জয়ী কাউন্সিলরদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও এদিন তা স্থগিত রাখা হয়। আজ, বুধবার সকালে এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। দীপা বলেন, ‘‘রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় বামই হোক বা কংগ্রেস, যাঁরা জিতেছেন তাঁরা তৃণমূলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মাটি কামড়ে পড়ে থেকেই জিতেছেন।’’ এখনই দলীয় কর্মীদের কোনও বিজয় মিছিল না করার জন্যেও নির্দেশ দেন তিনি।

দীপা নিজেও মাটি কামড়েই পড়েছিলেন কালিয়াগঞ্জে। এই পুরসভা এলাকার মানুষকে তিনি নানা ভাবে সাহায্য করারও চেষ্টা করেছেন বারবার। দিল্লিতে চিকিৎসার ব্যাপারেও অনেকের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেসের স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য, দীপার এই ভাবমূর্তির জন্যই পুরনির্বাচনে তাঁরা মানুষের সমর্থন ধরে রাখতে পেরেছেন।

উল্টো দিকে, পরাজয়ের পরেই কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আঁচ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। কালিয়াগঞ্জ জয় শক্ত জেনেও অমলবাবু এই পুরসভায় প্রচারে বাড়তি জোর দেননি বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীদের। তাতেই দল মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী মনে করে। দলের জেলা নেতাদের একাংশ প্রদেশ দফতরে সে কথা জানিয়েও দিয়েছেন বলে অন্দরের খবর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE