দেবস্মিতা দাশগুপ্ত।
গ্রাফিক নভেল। ছবিওয়ালা উপন্যাস— শব্দবন্ধটা খুব একটা চেনা নয়। কমিক যতটা পরিচিত, ততটা ছবির মাধ্যমে এ ভাবে গল্প-বলা নয়। এই সাহিত্যবর্গে (জঁর) ঢুকে পড়ে একের পর এক গল্প বলে চমকে দিচ্ছেন সিঙ্গাপুর-নিবাসী বাঙালি শিল্পী দেবস্মিতা দাশগুপ্ত।
গ্রাফিক নভেল ঠিক কী? ‘‘গ্রাফিক নভেলের পরিসর অনেক বড়। কয়েকটি নির্দিষ্ট ধারণার মধ্যে বিষয়টিকে বেঁধে ফেলা যাবে না’’— বলছেন দেবস্মিতা। তাঁর ব্যাখ্যায়, কোনও ‘নভেল’ (এ ক্ষেত্রে ছোট উপন্যাস) যাকে ‘গ্রাফিক ফর্ম’ (ছবির মাধ্যমে)-এ তুলে ধরা যায়, তাই-ই গ্রাফিক নভেল। সেটা কল্পনার ভিত্তিতে, কল্পনা-বাস্তব মিশিয়ে বা শুধু বাস্তব ঘটনার উপরে ভিত্তি করে হতে পারে। শব্দ-সহ ‘গ্রাফিক নভেল’ আগেই ছিল। কিছু ‘গ্রাফিক নভেল’ শব্দহীনও হয়, যাকে বলা হয় ‘সাইলেন্ট নভেল।’ ‘‘ছবির সঙ্গে অনেক সময়ে মিশে যায় সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও’’— বলছেন দেবস্মিতা।
ছোটবেলায় আর-পাঁচ জনের মতো টিনটিন-অ্যাসটেরিক্স পড়তে পড়তে ছবির মাধ্যমে গল্প বলায় আগ্রহী হন। উৎসাহ দেন মা-ও। নিজেকে ‘ভিসুয়াল থিঙ্কার’ বলতে পছন্দ করেন চল্লিশ ছুঁতে চলা এই শিল্পী। তাঁর কথায়, ‘‘অন্যদের মতো প্রথমে শব্দেরা আসে না আমার কাছে। কোনও কিছু নিয়ে ভাবতে গেলে ছবিটাই প্রথমে মাথায় আসে।’’
দেবস্মিতা জানাচ্ছেন, ‘গ্রাফিক নভেল’-এর পাঠকের কোনও বাঁধাধরা বয়স নেই, যে কারওই ভাল লাগতে পারে, জানাচ্ছেন তিনি। পাঠভবনের প্রাক্তন এই ছাত্রী অন্তত ১০ জন লেখকের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কাজ করেছেন। তাঁর প্রথম কাজ,
‘ক্লাইমেট কথা’। প্রতিকূল আবহাওয়ার জেরে যাঁরা ভিটেহারা হন, সুন্দরবনের সেই সব মানুষেরা জায়গা পেয়েছিলেন ওই বইয়ে।
এর পরে লন্ডনের এক প্রকাশনা সংস্থার ‘কমিক্স ফর চেঞ্জ’ নামে প্রকল্পে আফ্রিকার নর্দার্ন সেনেগলের এক মহিলা আয়েষা তা-কে নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। যে সব মহিলা পরিবর্তন এনেছেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে, তাঁদের কথা তুলে ধরা হয়েছে এই কাজে। আফ্রিকায় যোনিচ্ছেদ পরিচিত একটি প্রথা। আয়েষা নিজে এই যন্ত্রণাদায়ক প্রথার শিকার। ৪০-৪৫ বছর বয়সে এই প্রথা নির্মূল করতে সক্রিয় হন তিনি। এই সিরিজ তৈরি হয়েছিল ইংরেজি, সোয়াহিলি এবং ফরাসি ভাষায়। পরে তা থেকে ছবিও তৈরি হয়। দেবস্মিতার সংযোজন, ‘‘গ্রাফিক নভেলের ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কতটা, সেটা এ থেকে বোঝা যায়।’’ যোনিচ্ছেদ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে নিউ ইয়র্কের একটি সংস্থার মাধ্যমেও কাজ এগিয়েছেন তিনি। অনেক মহিলার সঙ্গে কথা বলে তাঁদের যন্ত্রণার ছবি তুলে আনার চেষ্টা করেছেন তিনি। দেবস্মিতার কথায়, ‘‘এমন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শুনে দায়িত্বের সঙ্গে সে সব তুলে ধরা, সহজ কাজ নয়।’’
শব্দ ও ছবি দু’টোই এসেছে তাঁর নতুন বই ‘নাদিয়া’য়। এই কাজটি প্রকাশিত হচ্ছে আজ, সোমবার। বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের সময়ে একটি বয়ঃসন্ধির মেয়ের সঙ্কট ও যন্ত্রণার গল্প। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে এশীয় শিশুসাহিত্য উৎসবে দেবস্মিতাকে দু’জন জানান, এই বইয়ে নিজেদের খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। দেবস্মিতার মতে, ‘‘গ্রাফিক নভেল তখনই সার্থক, যখন সেটা এই আদানপ্রদানের জায়গা তৈরি করতে পারে।’’ তাঁর আর একটি সিরিজ ‘মাই ফাদার ইলাস্ট্রেশনস’-এ ছিল সেই সব মেয়ের কথা, যাদের পাশে বাবা থাকায় জীবনযুদ্ধ সহজ হয়েছে। দেবস্মিতা বলেন, ‘‘পিতৃতান্ত্রিক সমাজে
একমাত্র বাবাই পারেন কন্যাসন্তানের জন্ম উদ্যাপন করে সমাজকে অন্য বার্তা দিতে।’’
এর পরে ‘লং ফর্ম গ্রাফিক নভেল’-ও লিখতে-আঁকতে চান তিনি। সুযোগ পেলে বাংলাতেও এমন গ্রাফিক নভেল করতে আগ্রহী দেবস্মিতা। কেউ এই কাজ করতে চাইলে তাঁর জন্য দেবস্মিতার বার্তা, ‘‘তীব্র ভালবাসা না থাকলে এই কাজ করা অসম্ভব। প্রচুর পরিশ্রমও লাগে। সময় দিলে পরে আর পিছনে তাকাতে হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy