Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2024

এ বার ‘পিতৃপক্ষে পুজো উদ্বোধন করি না’ বললেও অতীতে করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, শাস্ত্রানুযায়ী কি তা শুভ?

পিতৃপক্ষে পুজোর উদ্বোধন নিয়ে এ বার সতর্ক মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার শ্রীভূমির মণ্ডপে গিয়ে উৎসবের কথা বলেছেন তিনি। তবে মহালয়ার আগে পুজো উদ্বোধনের নজিরও তিনিই রেখেছেন অতীতে।

Debate over inauguration of Durga Puja before Mahalaya

২০২৩ সালে পিতৃপক্ষেই পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:২৪
Share: Save:

আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে দ্রোহের বাংলায় ‘উৎসবে ফেরার’ ডাক দিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার ‘পিতৃপক্ষে পুজো উদ্বোধন করি না’ বলা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে। ওয়াকিবহালেরা বলছেন, অন্তত গত দু’বছরের কথা মনে করা গেলে দেখা যাবে, পিতৃপক্ষে পুজোর উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, প্রতিমার উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্যও দিয়েছেন। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল। সম্ভবত সেই কারণেই মঙ্গলবার মন্ত্রী সুজিত বসুর পুজো শ্রীভূমিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আজ উৎসব উৎসারিত হল। এর পর অনেকেই বলতে পারেন, ‘পিতৃপক্ষে পুজোর উদ্বোধন করে দিলেন’! কিন্তু আমি তেমন নই। ধর্ম সম্পর্কে আমার যথেষ্ট জ্ঞান আছে। আমার বাবা নিয়মিত চণ্ডীপাঠ করতেন।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কথায়, ‘‘এটাও ডিভিসি না জানিয়ে জল ছেড়ে দিয়েছে বলার মতোই অসত্য। তিনি তো গত বার বাড়িতে বসে পিতৃপক্ষের মধ্যেই শয়ে শয়ে পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেছিলেন। যেখানে প্রতিমা আসেনি, মণ্ডপ তৈরি হয়নি, সেখানেও উদ্বোধন হয়ে গিয়েছিল।’’

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে ২০ অক্টোবর থেকে পুজো শুরু হয়েছিল। মহালয়া ছিল ১৪ অক্টোবর। তার দু’দিন আগে ১২ অক্টোবর কালীঘাটের বাড়ি থেকে রাজ্যের ৭৮৮টি পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন মমতা। পায়ে চোটের কারণে গত বার পুজোর সময়ে তাঁকে বাড়িতেই থাকতে হয়েছিল। মহালয়ার দিন ভার্চুয়াল মাধ্যমে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের পুজো চেতলা অগ্রণীর দুর্গা প্রতিমার ‘চক্ষুদান’ করেছিলেন মমতা ।

২০২২ সালে মহালয়া ছিল ২৫ সেপ্টেম্বর। মমতা পুজোর উদ্বোধন শুরু করেছিলেন ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে। শ্রীভূমির পুজোর উদ্বোধন করে তিনি জানিয়েছিলেন, পুজো শুরু হয়ে গেল। বলেছিলেন, ‘‘এখনও মা গয়নাগুলো পরেনি। মা ক্ষমা করো। চণ্ডীপুজো-সহ অনেক ধরনের ব্যাপার আছে। তাই মাকে আমরা ফুল দিয়ে, মোম দিয়ে, মন দিয়ে অর্পণ করে ডেকে গেলাম।’’

তার পরেই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর তরফে পিতৃপক্ষে পুজোর সূচনামূলক ঘোষণা নিয়ে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘‘পিতৃপক্ষে দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী! পিতৃপক্ষে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করা হয়, প্রেতদোষ মুক্ত করতে উত্তরপুরুষ ব্রতী হন। এখন কোনও শুভকাজ হয় না। বাঙালির সবটাই একা শেষ করে দেওয়ার সঙ্কল্প নিয়েছেন উনি!’’

তিথির ওই ব্যাখ্যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বৈদিক আকাদেমির সচিব নবকুমার ভট্টাচার্য কাব্য ব্যাকরণতীর্থ বুধবার বলেন, ‘‘শাস্ত্র অনুযায়ী ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বোধন। সায়ং সন্ধ্যাষুকারয়েৎ। বোধন আর উদ্বোধনের ফারাক তৈরি করলে কিছু বলার নেই। তবে সেটা মহালয়ায় বা তার আগে হলে সেটা অশাস্ত্রীয়।’’

হিন্দু রীতি মতে ভাদ্র পূর্ণিমার পর দিন থেকে শুরু হয় পিতৃপক্ষ। অর্থাৎ, মহালয়া থেকে অমাবস‍্যা পর্যন্ত যে কৃষ্ণপক্ষ সেটি পিতৃপক্ষ। এই সময়ে দেবযানমার্গ অবলম্বনে মনুষ্যলোকের কাছে এক মহালয়ে সমবেত হন পূর্বপুরুষেরা। সারা বছর তর্পণ করা গেলেও এই পক্ষে তর্পণের সঙ্গে পিণ্ডদানও করা যায়। তাই পিতৃপক্ষের তর্পণে তিল ও যব যুক্ত হয়। মনে করা হয়, পিতা-মাতা তো বটেই, সকল পূর্বপুরুষ এই সময়ে মর্ত্যে আসেন। তাঁরা ফিরে যান দীপান্বিতা অমাবস্যায়। তাঁদের আলো দেখাতেই বাড়ির দরজায় প্রদীপ জ্বালানো হয়। শাস্ত্রে উল্কাদর্শনের কথাও রয়েছে। তাই অতীতে মশাল জ্বালা হত দীপাবলিতে। নবকুমারের কথায়, ‘‘পিতৃপক্ষে পার্বণ শ্রাদ্ধ চলে। মহালয়ার দিনও সেই পার্বণের মধ্যে পড়ে। এই সময়ে বা এই দিনে তাই উদ্বোধনের মতো কোনও শুভকাজ করা যায় না। মহালয়া তিথিকেও তাই ‘শুভ’ বলা উচিত নয়। কারণ, এটা পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধের দিন। আমরা কখনও ‘শুভ শ্রাদ্ধ’ বলি না।’’ হিন্দু পঞ্জিকা মতে, মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদ থেকে দেবীপক্ষের সূচনা। শেষ লক্ষ্মীপুজোর দিন।

ফি-বছরের বিতর্কের জবাবেই বোধন-উদ্বোধনের ফারাক তৈরি করে প্রতিযুক্তি দেওয়া হয়। এ বার নানা বিতর্কে নাজেহাল রাজ্যে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করতে চান না বলেই সম্ভবত সতর্ক ভাবে মহালয়ার আগের উদ্বোধনকে ‘উৎসব উৎসারিত’ বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে নবকুমার দাবি করেন, ‘‘পুজো যে হেতু ধর্মীয় ও শাস্ত্রীয় রীতি মেনেই হচ্ছে, পঞ্জিকার তিথি মেনেই সব আয়োজন হচ্ছে, তাই উৎসবের অজুহাতে রীতি না ভাঙাই ভাল।’’ পাশাপাশিই তিনি রসিকতার সুরে সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবির কথা মনে করিয়েছেন। রাজার মূর্তি উন্মোচনের সময় জানতে চেয়েছিলেন হীরকরাজ। শুনে রাজজ্যোতিষী জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘লগ্ন তো সম্রাটের হাতে, পঞ্জিকা কী বলে, কী এসে-যায় তাতে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2024 Durga Puja Mamata Banerjee pujo inauguration Mahalaya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy