ডিপ্লোমা ডাক্তার তৈরি করা যায় কি না খতিয়ে দেখতে চিকিৎসকদের নিয়ে কমিটি তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। ফাইল চিত্র।
গ্রামাঞ্চলে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াই রাজ্য সরকারের লক্ষ্য। প্রথাগত চিকিৎসকদের মর্যাদায় এর ফলে কোনও রকম ভাবেই প্রভাব পড়বে না। ডিপ্লোমা ডাক্তার চালু করা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার প্রেক্ষিতে তৈরি হওয়া বিতর্কের মুখে এমন ব্যাখ্যাই দিচ্ছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধীরা অবশ্য অভিযোগ করছে, ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পাশ্ব-র্শিক্ষক, সিভিক পুলিশের মতো ‘সস্তায় ডাক্তারে’র একটা শ্রেণি তৈরি করা হবে। তাতে স্বাস্থ্য পরিষেবায় লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশি।
তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করিয়ে চিকিৎসক তৈরি করে তাঁদের গ্রামের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানো যায় কি না, এই পরিকল্পনা খতিয়ে দেখতে চিকিৎসকদের নিয়ে কমিটি তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মুখে ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের কথা বললেও সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে ‘ডাক্তার’ উল্লেখ করা হয়নি। তাঁদের বলা হচ্ছে ‘হেল্থকেয়ার প্রফেশনাল্স’। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। নানা মহল থেকেই এই ব্যাপারে সংশয় ও আপত্তি প্রকাশ করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ শুক্রবার বলেছেন, ‘‘পূর্ণ সময়ের ডাক্তারদের মর্যাদা তো কেউ কেড়ে নিচ্ছে না। জেলায় প্রত্যন্ত এলাকায় মানুষের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রয়োজন। সরকারি কলেজে সরকারি ভর্তুকিতে ডাক্তারি পড়ে যাঁরা চিকিৎসক হচ্ছেন, তাঁদের যদি জেলার হাসপাতালে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়, তখন আবার অন্য আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে। কাজেই বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে ভাল।’’ এমন ভাবনা একেবারে নতুন নয় বলে উল্লেখ করে বাম জমানার ‘খালি পায়ে ডাক্তার’দের উদাহরণও টেনেছেন কুণাল।
প্রয়াত প্রমোদ দাশগুপ্তের পরিকল্পনার কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতার ডিপ্লোমা ডাক্তার সংক্রান্ত ঘোষণায় প্রাথমিক ভাবে আপত্তি করেনি সিপিএম। কিন্তু দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এ দিন বলেছেন, ‘‘ব্যাপারটা শুধু ডাক্তার নিয়ে নয়। রাজ্য সরকার চাইছে যেখানে শূন্য পদ আছে, খরচ কমানোর জন্য সেখানে পূর্ণ সময়ের স্থায়ী নিয়োগ না করে শর্ট কাটে কাজ সারতে। মুখ্যমন্ত্রী অল্প প্রশিক্ষণে পুলিশ, ১৫ দিনে নার্স, তিন বছরে ডাক্তার চাইছেন! রাজ্যে সিভিক পুলিশ, সিভিক শিক্ষক হয়েছে, এ বার চিকিৎসক! ঠিক যে ভাবে মোদী সরকার সিভিক সেনা নিয়োগের জন্য প্রকল্প করেছে!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও এ দিন বলেছেন, ‘‘গ্রামীণ পরিষেবার জন্য ডিপ্লোমা ডাক্তারের ভাবনায় যুক্তি আছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব হল সস্তায় সব ক্ষেত্রে কাজ সেরে নেওয়া।’’ এমনকি, সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘চিকিৎসকের ঘাটতি ও রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কঙ্কালসার অবস্থা আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে এই ঘোষণার মাধ্যমে। তৃণমূল সরকার চায় সস্তায় স্বাস্থ্য শ্রমিক তৈরি করতে, এই সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য পরিষেবাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার আর এক ধাপ’। সরকারি ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবি তুলে এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্যও বলেছেন, ‘‘সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত চিকিৎসকের চেয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি। এই প্রেক্ষিতে ডিপ্লোমা ডাক্তার তৈরি করে তাঁদের দিয়ে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালানোর পরিকল্পনা জনসাধারণের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে ছেলেখেলার নামান্তর।’’
তৃণমূলের কুণাল যদিও বলেছেন, ‘‘বাম জমানাতেই তো এই ব্যবস্থা ছিল! ডিপ্লোমা করা সেই চিকিৎসকেরা পরেও চাকরি করেছেন। আর স্থায়ী নিয়োগ থেকে চুক্তিভিত্তিক পথে যাওয়া বাম আমলেই শুরু, তাদের এই কথা মানায় না!’’
আপত্তি বহাল রেখে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ দিনও বলেছেন, ‘‘শেষ কয়েক বছরে সরকারি ক্ষেত্রে ডাক্তার নিয়োগ দেখুন। কেউ সরকারি চিকিৎসক হতে চাইছেন না। হলেই তো নির্মল মাজির দাসত্ব করতে হবে! তাই মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করেছেন তিন মাসে ডাক্তার বানাবেন। ওঁর যা প্রতিভা, তাতে তিন দিনেও বানাতে পারেন! এর মধ্যে দিয়ে আবার একটা দুর্নীতি, তছরুপ সামনে আসবে।’’ বিশেষজ্ঞ কমিটিকেও কটাক্ষ করেছেন সুকান্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy