গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
বিধানসভার পথ মাড়ানো তো দূরের কথা, ১৪ অগস্টের পর থেকে জনসমক্ষেই আসতে চাইছিলেন না তিনি। কিন্তু বিজেপিতে যোগ দেওয়া যে আপাতত সম্ভব হচ্ছে, তা এখন বেশ খানিকটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়কের কাছে। তার পরেই বুধবার বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়ে চমকে দিলেন দেবশ্রী রায়। তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে গল্পগুজব করতেও দেখা গেল তাঁকে। তৃণমূলেই থেকে যাওয়ার চেষ্টা যে করছেন, সে ইঙ্গিত বেশ স্পষ্ট। কিন্তু সে বিষয়ে মন্তব্য এড়াতে সংবাদমাধ্যমকে এ দিন নিজের ধারেপাশে প্রায় ঘেঁষতেই দিলেন না তৃণমূল বিধায়ক।
দেবশ্রী রায় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার দু’টি স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য— তথ্য ও সংস্কৃতি এবং স্বাধিকার। বুধবার স্বাধিকার সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক ছিল। অনেককেই চমকে দিয়ে সেই বৈঠকে যোগ দিতে বিধানসভায় হাজির হন দেবশ্রী রায়।
শুক্রবার অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে বিধানসভার অধিবেশন। শুরু হয়েছিল ২৬ অগস্ট। সদ্যসমাপ্ত এই অধিবেশনে এক দিনের জন্যও বিধানসভায় দেখা যায়নি রায়দিঘির বিধায়ককে। ১৪ অগস্ট নয়াদিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সদর দফতরে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। বিজেপিতে যোগ দিতেই সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি ঠিকই। কিন্তু বিজেপির সদর দফতরে হাজির হয়ে খবরের শিরোনামে আসার পরে বাংলায় ফিরে বিধানসভায় হাজির হয়ে আবার তৃণমূলের বেঞ্চে বসা দেবশ্রীর পক্ষে কতটা অস্বস্তিকর হতে পারত, তা বুঝতে রাজনৈতিক শিবিরের অসুবিধা হয়নি। তাই বিধানসভায় তাঁর অনুপস্থিতিকে স্বাভাবিকই মনে করছিলেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টে রাজীব মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে শুক্রবার
১৪ অগস্ট ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে যে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা দেবশ্রী রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন, এমন কিন্তু নয়। কখনও রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাড়িতে হাজির হয়ে গিয়েছেন। সেখানে দেখা না পেয়ে পরে অন্য কোথাও দেখা করেছেন। কখনও আবার বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কখনও শোনা গিয়েছে যে, দিলীপ ঘোষের কাছে তৃণমূলেরই কোনও মহিলা সাংসদ দরবার করেছেন দেবশ্রীকে দলে নেওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন: বৈশাখীকে সঙ্গে নিয়ে সিবিআই দফতরে শোভন, দিলেন ভয়েস স্যাম্পল
দেবশ্রীর সব চেষ্টাই কিন্তু বিফল হয়ে যায়। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও জানিয়ে দেন যে, দেবশ্রী রায়কে নেওয়ার বিষয়ে দলের সকলে এখনও একমত নন। দিলীপের সেই বিবৃতির কয়েক দিন পরেই দেবশ্রী রায় জনসমক্ষে এলেন এবং বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিলেন। যতক্ষণ বিধানসভায় থাকলেন, তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গেই সময় কাটালেন।
বিজেপিতে যাওয়া আপাতত যে হচ্ছে না, তা বুঝেই দেবশ্রী রায় আবার তৃণমূলে নিজের পরিস্থিতি সহজ করে নেওয়ার চেষ্টা করলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ও কিন্তু স্ট্যান্ডিং কমিটিতে ছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর থেকে তিনি কমিটির কোনও বৈঠকে যাননি, বিধানসভায় পা রাখেননি। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ফোন করে কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে বলার পরে শোভন কমিটির সদস্য পদে ইস্তফা দিয়ে দেন। স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, তৃণমূলের সংস্রব এড়িয়ে চলতে চাইছেন। দেবশ্রী রায় কিন্তু সে পথে হাঁটলেন না। বেশ কিছু দিন জনচক্ষের আড়ালে থাকার পরে আচমকা বেরিয়ে এলেন তিনি। স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে যোগদানের মাধ্যমেই ফের তৃণমূলে নিজের হারানো জায়গা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেন।
দেবশ্রী এ দিনও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। কাজ শেষ হতেই দ্রুত বিধানসভা চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু বৈঠকে যোগ দিয়ে, এবং সারাক্ষণ তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে থেকে এ দিন দেবশ্রী বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, তিনি জোড়াফুল শিবিরেই রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy