প্রতীকী ছবি।
চারপাশের পরিবেশ যেমন বদলে যায়, তার সঙ্গে উপরি ‘পাওনা’ হিসেবে জোটে নানান সমস্যা, কটূক্তি, বিদ্রুপও। তার ফলেই কি শহরের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে বারবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন পড়ুয়ারা? এই প্রশ্নই ফের তুলে দিল চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের নার্সিং পড়ুয়া সমাপ্তি রুইদাসের (১৮) মৃত্যু।
সমাপ্তির মৃত্যুর পরে একটি সইবিহীন চিঠি সামনে এসেছে। তাতে লেখা হয়েছে, ইংরেজিতে পড়তে গিয়ে হতাশা ও ভীতি পেয়ে বসেছিল তাঁকে। ফিরে যাওয়ারও উপায় ছিল না। তাই আত্মহত্যার পথ বেছেছেন তিনি। মেয়ের ইংরেজি-ভীতির কথা বলেছেন বাবা সুকুমার রুইদাসও। কিন্তু সমাপ্তির মায়ের অবশ্য অভিযোগ, শহরে পড়তে এসে সিনিয়রদের কাছে নানা ভাবে অপমানিত হতে হয়েছিল মেয়েকে। মেয়ের উপরে মানসিক চাপ সৃষ্টির কথাও বলেছেন তিনি।
সমাপ্তির মৃত্যু নিয়ে শনিবার রাত পর্যন্ত পুলিশে কোনও অভিযোগ হয়নি বটে, তবে গ্রাম-মফস্সল থেকে পড়তে এসে নানা ভাবে অপমানিত হওয়ার উদাহরণ বহু রয়েছে। জয়েন্ট
এন্ট্রান্সে প্রথম পঞ্চাশে স্থান অর্জন করা এক ডাক্তারি পড়ুয়ার অভিজ্ঞতা, হস্টেলে তাঁকে সিনিয়রদের জুতো চাটতে বলা হয়েছিল! এর বাইরেও ইংরেজিতে সাবলীল ভাবে কথা বলতে না-পারা বা পোশাক নিয়ে কটূক্তিও আকছার শুনতে হয়
অনেক পড়ুয়াকেই।
প্রসঙ্গত, শহরে পড়তে এসে পড়ুয়ার আত্মহত্যার ঘটনা গত অগস্টে দেখেছিল রাজ্য। উত্তরপাড়া ও হিন্দমোটর স্টেশনের মাঝে রেললাইন থেকে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র হৃষীক কোলের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। সেই ঘটনাতেও জানা গিয়েছিল, ইংরেজি না-বুঝতে পারা এবং শহুরে সংস্কৃতিতে মানিয়ে নিতে না-পারার হতাশা থেকেই আত্মঘাতী হয়েছিলেন পদার্থবিদ্যার ওই ছাত্র।
সমাপ্তির মৃত্যুর পরে নার্সদের সংগঠন ‘নার্সেস ইউনিটি’ অবশ্য দাবি করেছে, গ্রাম-মফস্সল থেকে আসা বহু পড়ুয়াই হতাশায় ভোগেন। তা কাটাতে নিয়মিত কাউন্সেলিং প্রয়োজন। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, পড়ুয়াদের মাঝেমধ্যেই কাউন্সেলিং করা হয়। তবে তার মধ্যেও কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্য কর্তাদেরও। তবে তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞান বাংলায় পড়া কার্যত অসম্ভব। ইংরেজিতেই পড়া আবশ্যক।
সমাপ্তির পরিবার জানিয়েছে, উচ্চ-মাধ্যমিকে তিনি নব্বই শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছিলেন। এমন ছাত্রী কেন ইংরেজি ভীতিতে ভুগবেন? তাই বাংলা মাধ্যমে ইংরেজি শিক্ষায় ঘাটতি থাকছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে।
রাজ্যের স্কুল সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার ইংরেজি সিলেবাসের দুর্বলতা আছে কি না, সে প্রশ্নের জবাব দেননি। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, নার্সিং পড়তে কি পুরোটাই ইংরেজি লাগে? তাঁর মন্তব্য, ‘‘গোটা বিষয়টা জানি না। তাই মন্তব্য করা বোধ হয় ঠিক হবে না। তবে এটা বলতে পারি, যিনি সেবা করবেন, তাঁরও রোগীদের ভাষায় কথা বলা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বাংলারও গুরুত্ব থাকা উচিত।’’
বাংলা মাধ্যম স্কুলে ইংরেজি সিলেবাসের মান নিয়ে মন্তব্য করেননি স্কুল শিক্ষকেরাও। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক এবং ইংরেজির মাস্টারমশাই পরিমল ভট্টাচার্যের মতে, এক জন পড়ুয়া যে মাধ্যম থেকেই আসুক না-কেন তাঁর মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ্ব ধারণা তৈরি করে দেওয়া শিক্ষকদের বাড়তি দায়িত্ব। ‘‘বাংলা মাধ্যমে পড়ে অনেকেই তো ডাক্তারি, নার্সিং পেশায় সফল হয়েছে,’’ বলছেন তিনি।
সরকারি স্কুল শিক্ষক সমিতির সম্পাদক সৌগত বসুর মতে, নার্সিং অথবা ডাক্তারি পড়তে গিয়ে এমন কিছু শব্দের সঙ্গে পরিচিতি ঘটে যেগুলি পড়ুয়ারা স্কুল স্তরে পড়েননি। ক্লাসে পড়ানো বুঝতে না-পারার সেটাও একটা কারণ হতে পারে। তবে তিনি এ-ও বলছেন, ‘‘মফস্সল থেকে আসা ছাত্রীটিকে অন্যদের বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছে কি না, সেটাও দেখা প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy